SIR in Bengal: কারও নামের বানানে হেরফের, কারও ঠিকানাবদল, নোটিস পেয়ে কাগজপত্র নিয়ে ছুটে এসেছেন দলে দলে, শুরু SIR-শুনানি
SIR Hearing in West Bengal: SIR-শুনানির জন্য রাজ্যে ৪ হাজার ৬০০ মাইক্রো অবজার্ভার নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন।

কলকাতা: ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনের কাজ মোটামুটি হয়ে গিয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের খসড়া ভোটার তালিকাও। তবে যাঁদের নাম ওঠেনি খসড়া তালিকায়, তাঁদের নিয়ে এবার SIR-শুনানি শুরু হল। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩২ লক্ষ ভোটারকে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে। নো ম্যাপিংয়ে থাকা ভোটাররাই ডাক পেয়েছেন শুনানিতে। অর্থাৎ ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে কোনও যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি যাঁদের, শুনানিতে ডাকা হয়েছে তাঁদেরই। (SIR Hearing in West Bengal)
SIR-শুনানির জন্য রাজ্যে ৪ হাজার ৬০০ মাইক্রো অবজার্ভার নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন। শুনানির দায়িত্ব রয়েছেন ERO এবং AERO-রা। একজন ERO এবং ১০ AERO মিলে শুনানি করছেন। রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে ১১টি করে টেবিলে শুনানি শুরু হয়েছে। মোট ৩ হাজার ২৩৪টি টেবিলে শুনানি চলছে এই মুহূর্তে। প্রত্যেক টেবিলে ১০০-১৫০ জনের শুনানি হবে। শনিবার দুপুর ১২টা থেকে শুনানি শুরু হয়েছে। এই শুনানি পর্ব মিটলে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। (SIR in Bengal)
কলকাতা এবং জেলায় সকাল থেকেই SIR-শুনানি নিয়ে চরম তৎপরতা চোখে পড়ছে। কাগজপত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় খসড়া তালিকায় নাম না থাকা বহু মানুষকে। পুলিশও মোতায়েন রয়েছে। SIR-এর যে খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তিনটি ধাপে ভোটারের পরিচয় যাচাই করা হয়েছে, ১) প্রোজনি ম্যাপিং অর্থাৎ ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় পরিবারের কারও নাম ছিল। সেই অনুযায়ী তাঁদের ব্লাডলাইন তৈরি করা হয়, ২) সেল্ফ ম্যাপিং, অর্থাৎ ২০০২ সালের তালিকায় যাঁদের নিজেদের নাম ছিল, ৩) নো ম্যাপিং অর্থাৎ ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নিজেদের নামও ছিল না, আবার কোনও যোগসূত্রও পাওয়া যায়নি।
এই নো ম্যাপিংয়ের আওতায় থাকা ভোটারদের নিয়েই শুনানি চলছে। কলকাতার হরিমোহন ঘোষ কলেজে এদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককেও। একজন বলেন, "২০০২ সালের তালিকায় নাম আছে আমার। কিন্তু কী গন্ডগোল আছে বলে ডেকেছে। সব কাগজপত্র, দলিল নিয়ে এসেছি। দেখাব।" আর একজন বলেন, "নোটিস পেয়ে এসেছি। কিন্তু আমি পড়াশোনা জানি না। আধার কার্ডের প্রতিলিপি নিয়ে এসেছি। ২০০২ সালে এখানে ভোটার ছিলাম। নামও আছে। সমস্যা আছে বলছে, লেখা বুঝতে পারছি না।" তৃতীয় একজন বলেন, "সমস্যা কী এখনও বলেনি। আমাদের কাছে এসে ফর্ম দিয়েছে। বলেছিল, ২৭ তারিখ কাগজ নিয়ে আসতে। ২০০২ সালের তালিকায় নাম আছে আমার। কেন ডাকল জানি না। নোটিস দিয়েছে আমাকে।"
এবিপি আনন্দের প্রতিনিধি ওই ব্যক্তিকে পাঠানো নোটিস পড়ে দেখেন, যাতে লেখা ছিল, সব তথ্য় দেওয়া হয়নি আত্মীয়দের সম্পর্কে। কিন্তু ওই ব্যক্তি জানান, তাঁর নিজের নাম ছিল ২০০২ সালের তালিকায়। তার পরও কেন ডাকা হল বুঝতে পারছেন না তিনি। এমন আরও এক ভোটার মুখ খোলেন। জানান, ২০০২ সালের তালিকায় তাঁর নাম আছে, তাঁর বাবার নামও রয়েছে। আসতে বলা হয়েছিল বলে এসেছেন। এক মহিলা জানান, তাঁকেও কাগজ নিয়ে আসতে বলা হয়। আগেও জমা দিয়েছিলেন। ফের আসতে বলা হয়।
শিলিগুড়িতেও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বহু মানুষকে। সেখানে বিজেপি-র বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে দেখা যায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে। তিনি বলেন, "বাবা-মা, ঠাকুমা-ঠাকুরদার নাম ২০০২-এর তালিকায় নেই যাঁদের, তাঁদের কাছেও নোটিস এসেছে। ডিজিটাইজেশনের সময় নট ফাউন্ড হচ্ছে। ২০০২ সালের কাগজে নাম আছে। কিন্তু ডিজিটাইজেশন করতে গিয়ে নট ফাউন্ড দেখাচ্ছে। ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। আমার ধারণা, বড় কিছু গলদ না থাকলে শুনানিতে আসা অধিকাংশের নামই থেকে যাবে।" মানুষজনকে অশ্বস্ত করতেই তিনি সেখানে রয়েছেন বলে জানান শঙ্কর।
বহরমপুরের এক মহিলা বলেন, "বাবা আগে কুমার লিখত। এখন কুমার নেই, শুধু নির্মল চক্রবর্তী রয়েছে। অথচ আমার ফর্ম ফিলআপের সময় নির্মল কুমার চক্রবর্তী লেখা হয়েছে। তার জন্য ডেকেছে।" বহরমপুরের আর এক বাসিন্দা বলেন, "২০০২ সালে আমাদের বাসস্থান বদল হয়। তার পর নাম ওঠে। কিন্তু ২০০২ সালে নাম কাটা ছিল। তাই নোটিস ধরানো হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজ, আরও কাগজ নিয়ে এসেছি। আমরা পুরনো নাগরিক।"






















