West Bengal: অধীর-মমতা দ্বন্দ্বেই কি বাংলায় ধাক্কা বিরোধী জোটে? তৃণমূলের নিশানায় কংগ্রেস সাংসদ
INDIA Alliance:অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধেই বাংলায় বিরোধীদের জোট 'INDIA'-য় ভাঙন ধরানোর মারাত্মক অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল।
শিবাশিস মৌলিক, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও সমীরণ পাল: কোচবিহারে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার রুটে বিক্ষোভ তৃণমূলের (TMC)। খোদ রাহুল গাঁধীর (Rahul Gandhi) যাত্রাপথে লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর (Adhir Chowdhury) বিরোধিতা করে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ। অরাজনৈতিক সংগঠনের নামে প্ল্যাকার্ড হলেও সেখানে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের (TMC) স্থানীয় নেতৃত্বকে। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, অধীর চৌধুরীর লাগাতার তৃণমূল বিরোধিতাই কি এর কারণ?
অধীর চৌধুরীকে ক্রমাগত নিশানা করে গিয়েছেন রাজ্যের তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির (BJP) সুরে সুর মেলানোর অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
বাংলার কোচবিহারের )Coochbehar বক্সিরহাটে পৌঁছয় রাহুল গাঁধীর 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'। অধীর চৌধুরীর হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে, 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'র ব্যাটন তুলে দেন অসমের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেন বোরা। আর, এই অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধেই বাংলায় বিরোধীদের জোট 'INDIA'-য় ভাঙন ধরানোর মারাত্মক অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল।
অধীর চৌধুরী দীর্ঘদিনের কংগ্রেস সাংসদ। একাধিকবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। এখন কংগ্রেসের লোকসভার নেতা। কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক বডি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য়।
কিন্তু মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় যখন কংগ্রেসে ছিলেন, তখন থেকেই অধীর চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর তিক্ত সম্পর্ক। সোমেন মিত্রর উদ্যোগে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরে ১৯৯১ সালের বিধানসভা ভোটে মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে প্রার্থী হয়েছিলেন অধীর। সে বার হাজার দু’য়েক ভোটে তিনি হেরে যান। ১৯৯৬ সালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র ফের ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিলেন অধীরকে। তৎকালীন রাজ্য যুব কংগ্রেস সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জোরালভাবে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু সেবার প্রায় ২০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন অধীর। সেই তিক্ততা আজও যায়নি। অধীর চৌধুরী মানেই কট্টর মমতা বিরোধী।
কয়েকদিন আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার দাবি তোলেন। অধীর চৌধুরী বলেন, 'এই যেখানে অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার, সেখানে এটা রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার উপযুক্ত ক্ষেত্র। রাষ্ট্রপতি শাসন করার জন্য় উপযুক্ত আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে বাংলায়।' এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বারবার অধীর চৌধুরীকে তীব্র আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেতারা।
ইন্ডিয়া জোট নিয়েও বারবার দ্বন্দ্বের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। ইন্ডিয়া জোটের প্রসঙ্গ নিয়ে অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, 'আমি ইন্ডিয়ার নেতা নেই, বাংলার নেতা। আক্রমণকারী তৃণমূল, আক্রান্ত কংগ্রেস, একটা আক্রান্তের সঙ্গে আক্রমণকারীর যে সম্পর্ক হওয়া উচিত তৃণমূলের সঙ্গে আমারও সেই সম্পর্ক।' জোট প্রসঙ্গে এসে তিনি একবার বলেছিলেন, 'বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিজে জোট চান না, কারণ তার জোট করতে গেলে অসুবিধা আছে। তাঁকে যে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই কাজে জোট করতে যাওয়া অসুবিধা আছে তাঁর।'
পাল্টা অধীর চৌধুরী মানেই খড়গহস্ত মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় থেকে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। বাগযুদ্ধে নাম না করে টেনে আনা হয়েছে অধীর চৌধুরীর প্রয়াত মেয়েকেও। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'এত বড় বড় কথা বলছে। তার মেয়ের আত্মহত্য়া নিয়ে আমি যদি জিজ্ঞেস করি, কিছু বলতে পারবে? তাঁর গাড়ির ড্রাইভারের আত্মহত্য়া, খুন নিয়ে যদি আমি বলি জোড়া খুন, কিছু বলতে পারবে? অনেক ঘটনা আমি জানি, আমার মুখ খোলাবেন না।' একসময় অধীরের বিরুদ্ধে বহরমপুরে আরএসএসের মদতে লড়ার অভিযোগও তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজ নিয়েও খোঁচা দিয়ে একসময় তোপ দেগে মমতা বলেছিলেন, 'মুর্শিদাবাদে দীর্ঘদিন ধরে অনেক রাজনৈতিক নেতার জন্ম হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক নেতারা বড় বড় কথা বলেন। কেউ আজ পর্যন্ত কোনও কাজ করেননি।'
অধীরের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ইডি তল্লাশির প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বলেছিলেন, 'দিল্লিতে ED তল্লাশি করলে অধীর চৌধুরী বলে ED খারাপ। আর এখানে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যারা বিজেপির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়ছে, তাঁদের বাড়িতে যখন ED-র তল্লাশি হয়, অধীর চৌধুরী বলে ED খুব ভাল। আপনারা যে বিষয়বস্তুকে সামনে রেখে ভোট দিয়েছিলেন সেটাই বাস্তবায়িত হয়, অনেক সময় মানুষ ফাঁদে পড়ে যায়, বহরমপুরে ফাঁদে পড়ে গেছে। ভোট ভাগাভাগি করতে গিয়ে অধীর চৌধুরী জিতেছে। সেটা যেন আগামী দিন না হয়, তার কারণ আপনি এমন এক জনকে জেতাচ্ছেন যিনি বিজেপির বি-টিম হয়ে কাজ করছেন।'
পঞ্চায়েত ভোটের সময়, মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের একাধিক কর্মী খুন হয়েছে। কাঠগড়ায় ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সাগরিদিঘির কংগ্রেস বিধায়ক বাইরন বিশ্বাসকে ভাঙিয়েছে তৃণমূল, রানিনগরেও পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী কমিটি গঠন করতে পুলিশকে কাজে লাগানোর জন্য় তৃণমূলের দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে। আর তাই অধীর চৌধুরীর কট্টর মমতা বিরোধিতাকেই এখন বাংলায় ইন্ডিয়া জোট ভাঙার জন্য় সরাসরি আক্রমণ করছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন: আরও পড়ুন: ৭৫ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশাত্মবোধক ছবি শেয়ার করতে চান ? যেগুলি না জানলেই নয়