IPS Success Story: ইংরেজিতে ২১ পেয়ে আটা কলে কাজ ! আরেক'12th Fail' আজ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার
Jalpaiguri Police Super: ইংরেজিতে ফেল, প্রাপ্ত নম্বর ছিল ২১! জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার বলেন, 'জেদ চেপে গিয়েছিল, যে বিষয়ে ফেল করেছি সেটাতেই পাশ করতে হবে।'
রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি: বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে তাঁর কাছে আসে আমন্ত্রণপত্র। শিক্ষাঙ্গনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি এবং জীবনের লড়াইয়ের গল্প যেন পড়ুয়াদের পাথেয় হয়ে ওঠে, সেই অনুরোধ আসে বারংবার। তিনিও চেষ্টা করেন উপস্থিত থাকতে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার উমেশ গণপত খণ্ডবহালে- মরাঠি যুবকের উদ্যমী লড়াই এক অন্য গল্প বলে।
সম্প্রতি ওটিটি-তে জনপ্রিয় হয়েছে বিধুবিনোদ চোপড়ার ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমা। যেখানে বলা হয়েছে ডাকাতির জন্য কুখ্যাত চম্বলের পাশে ছোট্ট একটি গ্রামের ছেলে মনোজ কুমার শর্মার গল্প। দ্বাদশ শ্রেণিতে ফেল করার পরেও কীভাবে নিজের জেদের জোরে আইপিএস পরীক্ষায় পাশ করেন, সেই গল্প দেখানো হয়। সেই গল্প আর জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারের জীবনের গল্প যেন মিলেমিশে গিয়েছে।
দ্বাদশ শ্রেণিতে অকৃতকার্য সিন্নরের বোর্ডিং স্কুল থেকে গ্রামে ফিরে এসেছিলেন উমেশ কুমার। ইংরেজিতেও ফেল, প্রাপ্ত নম্বর ছিল ২১। বাবা গণপত খণ্ডবহালে ছিলেন গ্রামের দুধ বিক্রেতা। পাশাপাশি চাষবাসও করেন। 'টুয়েলভথ ফেল' ছেলেটি পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বাবার সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন। গ্রাম থেকে প্রতিদিন দুধ নিয়ে বিক্রি করতে যেতেন নাসিক বাজারে। সিনেমার গল্পের নায়ক মনোজ কুমারও আটা মিলে কাজ করতেন তিনি।
পশ্চিমঘাট পাহাড়ের পাদদেশের গ্রামের এই ছেলেটির গল্পে, প্রতিদিনের যাতায়াত ছিল গ্রাম থেকে নাসিক বাজার। দুধ বিক্রি সেরে ফের নাসিক বাজার থেকে গ্রাম, যেতে আসতে প্রতিদিনই চোখে পড়তে রাস্তার পাশে মহারাষ্ট্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হোর্ডিং। একদিন কী মনে হল ছেলেটি থমকে দাঁড়ালেন, সটান গিয়ে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীর কাছে জানতে চাইলেন, আমি টুয়েল্ভথ ফেল, আবার পড়ার সুযোগ পাব? এরপর বাকি গল্প যেন সিনেমা।
কৃষিবিদ্যা নিয়ে পাশ করার পরে বেছে নিলেন সেই ইংরেজিকে, দ্বাদশ শ্রেণিতে যে বিষয়ে ফেল করেছিলেন। জেদ আর ইচ্ছেশক্তি ছিল সেখানেই। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার বলেন, 'জেদ চেপে গিয়েছিল, যে বিষয়ে ফেল করেছি সেটাতেই পাশ করতে হবে।' একদিকে দুধ বিক্রি, বাবার চাষবাসে সাহায্য অন্যদিকে পড়াশোনা চালানো, স্নাতক, তারপর স্নাতকোত্তর, স্নাতকোত্তর পড়ার সময়ে দিল্লি যেতে হয়, সেখান থেকেই ইউপিএসসি তথা আইপিএস অফিসার হওয়ার লড়াই।
আরও পড়ুন, এভাবেই খুঁজে পেয়েছিলাম আমার জীবনের 'পাণ্ডে'কে ! 12th Fail -এর সঙ্গেই মিলে যায় IAS অবনীশ শরণের জীবন
জীবনের গল্প বলতে বলতে পুলিশ সুপার তখন ডুব দিয়েছেন স্মৃতিতে। বলে চলেন, মহারাষ্ট্রের সিভিল সার্ভিসে প্রথম সুযোগেই পাশ করে যাই, তখন ভাবি তাহলে আইপিএসের পরীক্ষাতেও পারব। প্রথমবারে আইপিএস পরীক্ষায় পাশ করেননি তিনি। তৃতীয়বারের চেষ্টায় ২০১৫ সালে আইপিএস হন উমেশ গণপত খণ্ডবহালে।
তিনিই এখন জলপাইগুড়ির এসপি। পুজোর আগে জেলার দায়িত্বে এসেছেন। জলপাইগুড়ি ঘুরে দেখতে সাইকেল নিয়ে শহর পরিদর্শনে বেরিয়ে যান। পুজোর ভিড়ে গভীর রাতে হেঁটেই চলে এলাকা পরিদর্শন। কোনও স্কুল-কলেজ থেকে কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেই চলে যান।
সত্যিই যে 'ফেল' করেও রিস্টার্ট সম্ভব, সেই লড়াইয়ের গল্পই সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেন তিনি। উমেশ গণপত খণ্ডবহালের বার্তা একটাই- 'জীবনের যে কোনও পরীক্ষায় ফেলের পরে নতুন করে শুরু করা যায়, জেতা যায় এটা আমি বলছি।'
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI