K Padmarajan: তিন দশকে ২৩৮ বার পরাজিত, আবারও ভোটে দাঁড়াচ্ছেন দেশের সবচেয়ে ‘হেরো’ প্রার্থী পদ্মরাজন
Lok Sabha Elections 2024: তামিলনাড়ুর মেত্তুরের বাসিন্দা পদ্মরাজন। টায়ার মেরামতির দোকান রয়েছে তাঁর।
নয়াদিল্লি: গত কয়েক বছরে রাজনীতিতে যোগদানের হিড়িক বেড়েছে। অন্য আর পাঁচটা চাকরির চেয়ে রাজনীতিতে উন্নতির সম্ভাবনা বেশি জেনে তরুণ প্রজন্মের অনেকেও রাজনীতিতে পদার্পণ করছেন বলে ধরা পড়েছে সমীক্ষায়। তবে 'যুদ্ধে নামার অর্থ সবসময় জয় হাসিল করা নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের উপস্থিতির জানান দেওয়াও বটে', মনেপ্রাণে এ কথা বিশ্বাস করেন কে পদ্মরাজন (K Padmarajan)। ২৩৮ বার নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার এবার লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Elections 2024) আবারও নাম লিখিয়েছেন তিনি।
তামিলনাড়ুর মেত্তুরের বাসিন্দা পদ্মরাজন। টায়ার মেরামতির দোকান রয়েছে তাঁর। পাশাপাশি, ১৯৮৮ সাল থেকে লাগাতার নির্বাচনে নাম লিখিয়ে আসছেন। প্রথম বার যখন নির্বাচনী রাজনীতিতে নাম লেখান, চারপাশের লোকজন তো বটেই, কাছের মানুষজনও বিদ্রুপ করতে ছাড়েননি তাঁকে। কিন্তু কোনও বিদ্রুপ, সমালোচনাই নিরস্ত করতে পারেনি তাঁকে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও রাজনীতির অংশ হতে পারেন বলে মত ছিল তাঁর।
এখনও পর্যন্ত ভোটবাক্স যদিও সহায় হয়নি, কিন্তু পিছু হটতে নারাজ পদ্মরাজন। তাঁর কথায়, "নির্বাচনে নাম লেখানোর পর প্রত্য়েক প্রার্থীই জয়ী হতে চান। কিন্তু আমার লক্ষ্য তা নয়।" পদ্মরাজন জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশ নিতে পারাই তাঁর জন্য জয়। হারজিত অনিবার্য। তবে ২৩৮ বার পরাজিত হওয়ার পরও খেদ নেই তাঁর মনে। হেরেও তিনি খুশি বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ED Against Vijayan Family:কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা ইডি-র
আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু। ৬৫ বছর বয়সি পদ্মরাজন এবার তামিলনাড়ুর ধর্মপুরী থেকে প্রার্থী হয়েছেন। স্থানীয় নির্বাচন থেকে লোকসভা নির্বাচন, এ যাবৎ কোনও নির্বাচনই বাদ দেননি পদ্মরাজন। নরেন্দ্র মোদি থেকে অটলবিহারি বাজপেয়ী, মনমোহন সিংহ থেকে রাহুল গাঁধী, সকলের কাছেই হেরেছেন। তার পরও হাল ছাড়েননি। সেই কারণে 'Election King' হিসেবেও তাঁকে অভিহিত করেন কেউ কেউ। দেশের সবচেয়ে 'হেরো' প্রার্থী হিসেবে লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে নামও উঠেছে পদ্মরাজনের।
এতবার পরাজিত হওয়ার পরও কেন নির্বাচনে নাম লেখাচ্ছেন, জানতে চাওয়া হয় পদ্মরাজনের কাছে। তাঁর জবাব, "জয় ততটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রতিপক্ষ কে, আমার কিছু যায় আসে না।" কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে প্রচার, সেসবের খরচ জোগান করতে গিয়ে গত তিন দশকে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়েছে পদ্মরাজনকে।
পদ্মরাজন জানিয়েছেন, এবারেও সিকিওরিটি ডিপোজিট হিসেবে ২৫০০০ টাকা জমা দিতে হয়েছে তাঁকে। কমপক্ষে ১৬ শতাংশ ভোট না পেলে, ওই টাকাও ডুবে যাবে জানেন তিনি। তাও হাল ছাড়তে নারাজ পদ্মরাজন। এখনও পর্যন্ত ২০১১ সালেই তুলনামূলক ভাল ফল করেছিলেন তিনি। ,মেত্তুরে সেবার ৬,২৭৩ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। জয়ী প্রার্থী পেয়েছিলেন ৭৫০০০ ভোট।
কিন্তু পদ্মরাজনের বক্তব্য, "একটি ভোটও পাওয়ার প্রত্যাশা নেই আমার। কিন্তু মানুষের মধ্যে আমার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে।" টায়ার মেরামতির দোকান চালানো, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি টোটকাও বাতলে দেন পদ্মরাজন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে সম্পাদকের ভূমিকাও পালন করেছেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনী লড়াই সবকিছুর ঊর্ধ্বে বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, "যোগদানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মনোনয়ন জমা দিতেই তো ইতস্তত করেন অনেকে। এর বিরুদ্ধেই সচেতনতা তৈরি করতে চাই আমি। মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাতে চাই।"
গত তিন দশকে যতবার মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, কোন কোন প্রতীক ব্যবহার করেছেন, সেসবের খুঁটিনাটি গুছিয়ে রেখেছেন পদ্মরাজন। দেখা গিয়েছে, কখনও মাছ, কখনও টুপি, কখনও টেলিফোনের প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে টায়ারকেই বেছে নিয়েছেন নিজের প্রতীক হিসেবে। হারজিতের কথা না ভেবে, শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের কথা মাথায় রেখে এগোলেই কোনও বিদ্রুপ গায়ে লাগবে না বলে মত তাঁর। পদ্মরাজন জানিয়েছেন, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত নির্বাচনে লড়াই করবেন তিনি। কিন্তু অঘটনবশতও যদি কখনও জিতে যান? পদ্মরাজনের আশঙ্কা, জয়ের ধাক্কা সামলাতে না পেরে হয়ত হৃদরোগেই আক্রান্ত হবেন তিনি।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে হলফনামা জমা দিয়েছেন পদ্মরাজন, তাতে দেখা গিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে একটিও অপরাধ মামলা নেই। মোট স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৪ লক্ষ টাকা। ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। ৪৮ হাজার টাকার শিক্ষাঋণ রয়েছে পদ্মরাজনের। স্ত্রীর আলাদা করে কোনও আয় নেই। বর্তমান দিনে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ভোটদানের অধিকার প্রয়োজন সবচেয়ে জরুরি বলে মত পদ্মরাজনের।