Dev in Ghatal: উঠল স্লোগান, জ্বলল আগুন, ঘাটালে দিনভর বিক্ষোভের মুখে হিরণ, দেবকে দেখে সেলফির আবদার
Dev on Hiran: লোকসভা নির্বাচনে আর মাত্র এক দফায় ভোটগ্রহণ বাকি। শনিবার ঘাটালে ষষ্ঠ দফায় ভোটগ্রহণ চলছে।
ঘাটাল: সকাল থেকে ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছেন একজন। বার বার পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়েছে যেমন, তেমনই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষও। কিন্তু অন্যজনের বেলায় সম্পূর্ণ আলাদা দৃশ্য চোখে পড়ল। বেলা করে বেরোলেন তিনি, আর তাঁর দর্শন পাওয়া মাত্র আবেগ বাঁধ ভাঙল। শনিবার ভোট চলাকালীন বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূল প্রার্থী দেবকে ঘিরে এমনই বিপরীত ছবি চোখে পড়ল ঘাটালে। (Dev in Ghatal)
লোকসভা নির্বাচনে আর মাত্র এক দফায় ভোটগ্রহণ বাকি। শনিবার ঘাটালে ষষ্ঠ দফায় ভোটগ্রহণ চলছে। সেই উপলক্ষে সকাল থেকেই অশান্তির সাক্ষী থেকেছে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র। ভোটগ্রহণের আগেই কেশপুর এবং আনন্দপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হিরণ। রাতভর বোমা পড়লেও কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘুমিয়েছে বলে জানান হিরণ। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে যেমন বচসায় জড়ান তিনি, তেমনই পুলিশ এবং স্থানীয়দের সঙ্গেও ঝামেলা বাধে হিরণের। (Dev on Hiran)
রাস্তায় তখন জ্বলছে আগুন
কেশপুরে হিরণকে কার্যত ঘিরে ধরেন স্থানীয়রা। শান্তিপূর্ণ ভাবে সকাল থেকে ভোট চললেও, হিরণ এসে অশান্তি বাধিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এলাকার বাসিন্দাদের বহিরাগত বলে দাগিয়ে বুথে ঢুকতে বাধাও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি হিরণের সঙ্গে থাকা বিজেপি-র লোকজন স্থানীয়দের কয়েক জনের হাত ভেঙে দেন বলেও অভিযোগ ওঠে। সেই নিয়ে ঝামেলার মধ্যেই পুলিশ ওসি-র সঙ্গে বচসা বাধে হিরণের। হিরণ তাঁকে চমকাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ওসি। হিরণ জানান, বুথে বিজেপি-র এজেন্ট বসাতে দেওয়া হয়নি, তিনি গিয়ে তবে এজেন্ট বসান।
অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও হিরণ বিরাট কনভয় নিয়ে এলাকায় ঢুকেছিলেন বলে অভিযোগ করে পুলিশও। পাল্টা তাঁকে ইচ্ছাকৃত ভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন হিরণ। সেই আবহেই পরিস্থিতি তেতে ওঠে। হিরণের গাড়ি যাতে এলাকা থেকে বেরোতে না পারে, রাস্তায় বসে পড়েন স্থানীয় লোকজন। লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা। হিরণের গাড়ি যাতে বেরোতে না পারে, তার জন্য রাস্তায় খড় ফেলে আগুনও জ্বালানো হয়, ফেলা হয় গাছের গুঁড়ি। কেশপুরের মুগবসান এলাকায় হিরণকে দেখে 'চোর', 'চোর, স্লোগানও ওঠে।
রাস্তায় শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ
১০০ দিনের টাকা চাই, হিরণকে লক্ষ্য করে এই দাবিও তোলে উত্তেজিত জনতা। সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী। CRPF-এর DIG-র সামনেই চলে তাণ্ডব। পরে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যান হিরণ। ঘাটালে এমন পরিস্থিতির মধ্যে দেরি করেই বেরোন দেব। হিরণকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ঘাটালে, তাঁর বক্তব্য ছিল, "হেডলাইনে থাকতে এসব করছেন উনি। আমি ঘাটালের সকলকেই শুভেচ্ছা জানাই। পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিন ঘাটালের মানুষ।"
এর পর দেব ঘাটালের চাইনি শীতলানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে পৌঁছতে তাঁকে ঘিরে ঢল নামে সাধারণ মানুষের। বুথে সবকিছু তদারকির পর কচিকাঁচা থেকে মহিলা, পুরুষ, সকলে ঘিরে ধরেন তাঁকে। একে একে সকলেরই সেলফির আবদার মেটান দেব। প্রথম বারের ভোটারদের সঙ্গেও ছবি তোলেন। ঘাটালে একেবারে খোশমেজাজে দেখা যায় দেবকে।
ঘাটালে অনুরাগীদের সঙ্গে দেব
ঘাটালে সকাল থেকে উত্তেজনার মধ্যে দেবকে ঘিরে এই উচ্ছ্বাস যথেষ্টই বার্তাবহ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এ নিয়ে দেবের বক্তব্য, "জীবনে প্রথম বার ভোট দেওয়া কোনও উৎসবের চেয়ে কম নেই। প্রার্থী নির্বাচনে দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রাপ্তি।"
প্রথম বারের ভোটারদের সঙ্গে
কিন্তু হিরণ গেলে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে, আর তাঁকে দেখে এত উচ্ছ্বাস রহস্য কী? দেব বলেন, "যে বুথে আমি গেলাম, সেটা বিজেপি-র জেতা বুথ। সেখানে আমরা হেরে রয়েছি। কিন্তু কোনও বিক্ষোভ নেই। জয় শ্রীরাম স্লোগান নেই। মানুষ ভালবাসছেন। হাত মেলাচ্ছেন, কথা বলছেন। এটাই তো রাজনীতি! গত ১০ বছর ধরে আমি এটাই করছি, যেটাকে তোমরা সৌজন্য বলছো। আমরা শান্তিপূর্ণ ভোট চাই। ভয় দেখিয়ে ভোটলুঠের পক্ষে নই আমরা। তুমি-আমি লড়াই করলে তো মানুষ ভয় পেয়ে যাবেন! এখানে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা কমিশনকে সমস্যার কথা জানিয়েছি।" সকাল থেকে হিরণকে যে ভাবে সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে, সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে, দেব বলেন, "হার নিশ্চিত জেনেই আক্রমণের রাস্তায় হাঁটতে হচ্ছে, নইলে কেউ পাত্তা দেবে না।"