এক্সপ্লোর

WB Election 2021:ভোটের বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর আরও একবার সুযোগ এনে দিলেন ছাত্র-যুবকরা

ফের রক্তাক্ত হল কলকাতার রাজপথ। রক্ত ঝরল অনিকেতের, অর্থনীতি নিয়ে পড়া দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মাথায় চারটে সেলাই নিয়ে বাড়ী ফিরল শুভম, উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। মালাইচাকিটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে শান্তনুর। কবে আবার পা ফেলে হাঁটতে পারবে কেউ জানে না। মাটিতে ফেলে যখন র‌্যাপ বাহিনী একের পর এক লাঠির আঘাত করে চলেছে, অজ্ঞান হওয়ার আগে তনুজা চিৎকার করে বলেই চলেছিল, চাকরি চাইতে আসাটা কি অন্যায়?

উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : ফের রক্তাক্ত হল কলকাতার রাজপথ। রক্ত ঝরল অনিকেতের, অর্থনীতি নিয়ে পড়া দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মাথায় চারটে সেলাই নিয়ে বাড়ী ফিরল শুভম, উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। মালাইচাকিটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে শান্তনুর। কবে আবার পা ফেলে হাঁটতে পারবে কেউ জানে না। মাটিতে ফেলে যখন র‌্যাপ বাহিনী একের পর এক লাঠির আঘাত করে চলেছে, অজ্ঞান হওয়ার আগে তনুজা চিৎকার করে বলেই চলেছিল, চাকরি চাইতে আসাটা কি অন্যায়?

বাম ছাত্র-যুবদের নবান্ন অভিযানের এগুলো এক-একটা খণ্ডচিত্র মাত্র। প্রথমে কামান জল।শীতের দুপুরে সেই জলকে অগ্রাহ্য করে ছাত্রছাত্রীদের মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে দেখে ছোড়া শুরু হলো কাঁদানে গ্যাস। সংখ্যায় কত তা গোনা অসম্ভব। মুহুর্মুহু ফাটানো হলো কাঁদানে গ্যাস। একেবারে শরীর লক্ষ্য করে। তীব্র চোখে জ্বালা। দম নিতে ফেটে যাচ্ছে ফুসফুস। ব্যাগে রাখা জলের বোতলটা মাথায় ঢেলে ফের মিছিলে স্লোগান দিতে শুরু করলো। এরপর শুরু হলো পুলিশের লাঠিচার্জ। ছত্রভঙ্গ করার ক্ষেত্রে পুলিশের কিছু কোড অফ ইথিকস আছে। প্রথমে, লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করা হয়। তারপরও যদি ছত্রভঙ্গ করা না যায় সেক্ষেত্রে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করে। অবশ্যই কোমরের নীচে, যাতে কোনও বড় আঘাত না হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে পুলিশের প্রথম থেকেই টার্গেট ছিল মাথা লক্ষ্য করে লাঠি চালানো। যে কারণে সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছে মাথায়। রক্ত ঝরেছে রাজপথে।

চাকরির দাবিতে, শিক্ষার দাবিতে ছিল নবান্ন অভিযান। প্রত্যেকের পকেটে রেড কার্ড, হাতে সংগঠনের পতাকা। মুখে স্লোগান। সমস্যা ছিল একটাই, পুলিশের গোয়েন্দা রিপোর্টের থেকে পাঁচগুণ বেশি জমায়েত হয়ে গিয়েছিল। রাস্তার উপর তৈরি করা ব্যারিকেডগুলো ভেঙে পড়েছিল হুড়মুড় করে। তারপর তিন ঘণ্টা ধরে পুলিশের তান্ডবের ছবি প্রত্যক্ষ করেছে সকলে। ডাকা হয়েছিল ১২ ঘন্টার বাংলা বন্ধ। রাজ্যজুড়ে বন্ধের প্রভাব কতটা তা নিয়ে এখনো চলছে রাজনৈতিক কাটাছেঁড়া। অতি বড় তৃণমূলের সমর্থকদেরও আড়ালে-আবডালে বলতে শোনা গেছে, এইভাবে মারার কি খুব প্রয়োজন ছিল? বিজেপি নেতারা অবশ্যই মনে মনে তুলনা টানতে শুরু করেছেন, তাদের নবান্ন অভিযানেরর সাথে ১৮-২৬ এর এই যুবক-যুবতীদের নবান্ন অভিযানের। সেদিন পুলিশ জলকামান থেকে রঙিন জল না ছুঁড়লে কেউ হয়তো জানতেই পারত না বিজেপির একটা নবান্ন অভিযান ছিল।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর আরো একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়ে গেল এই ছাত্র-যুবরা। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। রাজনৈতিক ময়দানে হইহই করে নেমে পড়েছে সব দল। নরেন্দ্র মোদির অমিত শাহ-দের এরই মধ্যে তিনবার করে আসা হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গে। দিল্লির প্রথম সারির নেতারা সপ্তাহে চারদিন করে পড়ে থাকছেন এই রাজ্যে। যোগী আদিত্যনাথ, স্মৃতি ইরানিদের পাড়ায় পাড়ায় ঘোরার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। চারটে অত্যাধুনিক রথ উত্তর থেকে দক্ষিনে ঘুরছে রোজ। তার মধ্যে তৃণমূল ভাঙ্গানো তো চলছেই। শুভেন্দু- রাজিবের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আবার মুখ ভার করে চলে গেলেন দীনেশ ত্রিবেদীও, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ। অন্যদিকে নেমে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। হেলিকপ্টারে চেপে এক-একদিন পাঁচটা পর্যন্ত সভা করছেন তিনি।। ইতিমধ্যেই পদযাত্রা করে ফেলেছেন প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। তার সঙ্গে ক্রিকেট টিম তো আছেই। তবে বামেরা কিন্তু এখনো ব্যস্ত জোটের জট ছাড়াতে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে প্রায় চার মাস আগেই। কিন্তু এখনো কে কটা আসনে লড়বে সেই সংখ্যাটা এই চূড়ান্ত করে উঠতে পারেনি দু'দল। কখনো আলিমুদ্দিনে, কখনো আবার কংগ্রেস অফিসে বৈঠকে বসছেন বাম কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। প্রতিটি আসন ধরে ধরে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি আবার যুক্তি। প্রায়ই ফিকে হয়ে আসা বাম শরিকদের সবচেয়ে বেশি তর্জন-গর্জন শোনা যায় এই জোট বৈঠকে। ভাবটা এমন যেন সিটটা শুধু পাওয়ার অপেক্ষা, জেতা যেন হয়ে গেছে। কবে এই আলোচনা শেষ হবে তার কোন নিশ্চয়তা এখনো নেই। ভোটের বাক্সে না হলেও জোটের লড়াইতে কে কটা বেশি আসন নিজেদের কোটায় টানতে পারল এ যেন তারই প্রতিযোগিতা।

তবে ,কোন কিছু তোয়াক্কা না করে পথে নেমে পড়েছিল ছাত্র- যুবরা। গতবার নবান্ন অভিযানের অভিজ্ঞতায় তারা জানতেন পুলিশ ছেড়ে কথা বলবে না। সেবারের অভিযানে পুলিশের লাঠির মারে চোখ নষ্ট হয়ে গেছিল পুরুলিয়ার এক যুবকের। সে এখনো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়নি। তাই মীনাক্ষী, সৃজন  বা সায়নদীপরা জানতেন পুলিশের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে তাদের। এক মাস ধরে গোটা রাজ্য জুড়ে প্রচার চালিয়েছেন তারা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছিল ছাত্র-যুব কর্মীরা। তারাও জানতো কাঁদানে গ্যাস, জলকামানের সামনে হয়তো পড়তে হবে। কিন্তু পুলিশ এভাবে লাঠিপেটা করবে, ভাবতে পারিনি তারাও। কিন্তু রণাঙ্গন ছেড়ে পেছনে ছুটে পালানোর ছবি একবারের জন্য উঠে আসেনি কোন ক্যামেরার লেন্সে। রক্ত ঝরানো ছাত্র-যুবরা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফের বামেদের আরো একবার লড়াইয়ের ময়দানে ফিরে আসার সুযোগ করে দিল প্রশান্ত, অনিকেত, প্রীতমরা। কারণ এবার বিজেপির মূল প্রচারই হলো, তৃণমূল কংগ্রেসের মোকাবিলা একমাত্র করতে পারে তারাই। তাই তৃণমূলকে হারাতে গেলে তারাই বিকল্প। কিন্তু ছাত্র-যুবরা বক্তৃতায় নয়, কলকাতার রাজপথে নেমে দেখিয়ে দিল এই ক্ষমতা তাদেরই আছে। ফলে বিজেপির অ্যাডভান্টেজে কিছুটা হলেও প্রশ্নচিহ্ন ছুঁড়ে দিতে পেরেছে বাম ছাত্র যুবরা। কিন্তু এই প্রশ্ন চিহ্নকে এবার বিশ্বাসে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব অবশ্যই বাম-কংগ্রেসের নেতাদের। প্রার্থী তালিকা ঠিক করার সময় এই তরুণ প্রজন্মের মুখগুলো অনেক সময় ভুলে যান ষাটোর্ধ্ব নেতারা। যদিবা মনেও পড়ে তখন যুক্তি দেওয়া হয় অভিজ্ঞতার। সেই যুক্তি যখন ধোপে টেকে না, তখন উদাহরণ দাঁড় করানো হয় ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়দের। ছাত্র থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার পরও তৃণমূল কংগ্রেসে চলে যাওয়া। কিন্তু নেতারা ভুলে যায় মইনুল হাসানদের কথা। নতুন প্রজন্মকে তুলে আনতে না পারলে দলটা ক্রমশ যে বৃদ্ধাশ্রমে পরিণত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২১ বছরের ছাত্রী কেরলে মেয়র হয়েছেন। তাহলে সায়নদীপ, মীনাক্ষী, সৃজন, রফিউলরা কেন প্রার্থী হতে পারবেন না? প্রশ্ন এখন বাম শিবিরে।

 

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

West Bengal News Live Updates: লস্কর ই তৈবার কমান্ডার ইন চিফ হাফিজ সইদের ছেলে তালহার নির্দেশেই কি বাংলায় আসে জাভেদ? কী ছিল পরিকল্পনা?
লস্কর ই তৈবার কমান্ডার ইন চিফ হাফিজ সইদের ছেলে তালহার নির্দেশেই কি বাংলায় আসে জাভেদ? কী ছিল পরিকল্পনা?
West Bengal News Live: বাংলায় পর পর জালে জঙ্গি, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কাঁটাতারহীন সীমান্ত
বাংলায় পর পর জালে জঙ্গি, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কাঁটাতারহীন সীমান্ত
HIDCO: সরলেন ফিরহাদ, এবার মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে হিডকো
সরলেন ফিরহাদ, এবার মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে হিডকো
WB Primary Semester System: বদলে যাচ্ছে খোলনলচে, এবার প্রাথমিকে পরীক্ষা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত
বদলে যাচ্ছে খোলনলচে, এবার প্রাথমিকে পরীক্ষা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Suvendu Adhikari: বাংলাদেশে ফের আক্রান্ত হিন্দু শিক্ষক ! ভিডিও পোস্ট শুভেন্দু অধিকারীর | ABP Ananda LIVELook Back 2024 : বছর শেষে কোন দলের কী স্ট্য়ান্ড? নতুন বছরে কার কী রেজলিউশন?India-Bangladesh Border: রাজ্যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৯৬৩ কিমি এলাকাতেই নেই কাঁটাতার।Militant News Update: পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদে তালহা সইদের সঙ্গে জাভেদের বৈঠক

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
West Bengal News Live Updates: লস্কর ই তৈবার কমান্ডার ইন চিফ হাফিজ সইদের ছেলে তালহার নির্দেশেই কি বাংলায় আসে জাভেদ? কী ছিল পরিকল্পনা?
লস্কর ই তৈবার কমান্ডার ইন চিফ হাফিজ সইদের ছেলে তালহার নির্দেশেই কি বাংলায় আসে জাভেদ? কী ছিল পরিকল্পনা?
West Bengal News Live: বাংলায় পর পর জালে জঙ্গি, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কাঁটাতারহীন সীমান্ত
বাংলায় পর পর জালে জঙ্গি, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কাঁটাতারহীন সীমান্ত
HIDCO: সরলেন ফিরহাদ, এবার মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে হিডকো
সরলেন ফিরহাদ, এবার মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে হিডকো
WB Primary Semester System: বদলে যাচ্ছে খোলনলচে, এবার প্রাথমিকে পরীক্ষা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত
বদলে যাচ্ছে খোলনলচে, এবার প্রাথমিকে পরীক্ষা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত
Terrorist Arrest: অসম STF-এর অপারেশন 'প্রঘাত', ধুবড়ি থেকে গ্রেফতার এক জঙ্গি
অসম STF-এর অপারেশন 'প্রঘাত', ধুবড়ি থেকে গ্রেফতার এক জঙ্গি
New Year Weather: বর্ষবরণের রাতে জাঁকিয়ে ঠান্ডা? নতুন বছরে শীতের দাপট, বড় আপডেট আবহাওয়ার
বর্ষবরণের রাতে জাঁকিয়ে ঠান্ডা? নতুন বছরে শীতের দাপট, বড় আপডেট আবহাওয়ার
Manmohan Singh CV : মিতভাষী বলে উপহাস করতেন নিন্দুকরা ! মনমোহন সিংহের সিভি দেখলে অবাক হবেন ?
মিতভাষী বলে উপহাস করতেন নিন্দুকরা ! মনমোহন সিংহের সিভি দেখলে অবাক হবেন ?
Gold Rate: বিয়ের জন্য সোনার গয়না গড়াবেন ভাবছেন ? আজ সোনা কিনলে সাশ্রয় হবে কি ? দেখুন রেটচার্ট
বিয়ের জন্য সোনার গয়না গড়াবেন ভাবছেন ? আজ সোনা কিনলে সাশ্রয় হবে কি ? দেখুন রেটচার্ট
Embed widget