Debleena Dutta Exclusive: একজন নারী হিসেবে নারী দিবস পালন নিয়ে বলিষ্ঠ মত দেবলীনা দত্তের
একজন নারী হিসেবে নারী দিবস পালন নিয়ে এবিপি লাইভকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে নিজের মতামত জানালেন বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত। স্পষ্টবক্তা হিসেবে তিনি পরিচিত। এবারও খোলাখুলি কথা জানালেন।
কলকাতা: আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস (International Women's Day 2022)। সারা বিশ্বে এই বিশেষ দিনটা পালন করা হচ্ছে। যুগের পরিবর্তন হয়েছে। আজ সারা বিশ্বের নারীরা তাঁদের নিজেদের যোগ্যতায় নিজেদের অনেক উচ্চতায় পৌঁছে নিয়ে গিয়েছেন। আজ নারীরা দেশ চালান, রাজ্য চালান। হেন কোনও কাজ নেই, যাতে পিছিয়ে থাকবেন তাঁরা। বিজ্ঞান, গবেষণা, চিকিৎসাক্ষেত্র, রাজনীতি, সমাজনীতি, খেলাধুলো, বিনোদনের জগত, রাজ্য তথা রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে এবং আরও অন্যান্য বহু ক্ষেত্রেই নারীরা আজ শীর্ষে। তারপরও আজও পুরুষের সমান অধিকারের জন্য বহুক্ষেত্রে নারীদের লড়াই করতে হয়। একজন নারী হিসেবে নারী দিবস পালন নিয়ে এবিপি লাইভকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে নিজের মতামত জানালেন বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত (Debleena Dutt)। স্পষ্টবক্তা হিসেবে তিনি পরিচিত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের বলিষ্ঠ মতামত দিয়ে থাকেন। এবারও তেমনই খোলাখুলি কথা জানালেন।
অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত জানিয়ে দিলেন উত্তরটা খুব ক্লিশে মনে হলেও এটাই আমার উত্তর। আমার জীবনের সেরা নারী অবশ্যই আমার মা। দেবলীনার (Debleena Dutta) সোজাসাপটা কথা, 'আমি একেবারেই ফেমিনিস্ট নই। আর আমার মনে হয় আজকের এই ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে ফেমিনিস্ট হওয়াটাই মেয়েদের কাছে অত্যন্ত লজ্জার। আমি মনেই করি না নারী আর পুরুষ বলে কিছু রয়েছে। আসলে আমরা সকলে মানুষ। কেন ছোটবেলা থেকে আমাদের স্কুলে পড়ানো হয় যে নারী-পুরুষ দুটো লিঙ্গ, আমার জানা নেই। মানুষই নারী-পুরুষ এই ভেদাভেদ তৈরি করেছে। আর লিঙ্গ যদি ধরতেই হয়, তাহলে তো আমি বলব তিনটে। নারী, পুরুষ আর ইউনাক। আমি যদি শুধু দুটো লিঙ্গের মানুষকে বেছে নিই, তাহলে ইউনাকদের কথা কে বলবে। ওরাও তো আমাদের মতোই মানুষ।'
আরও পড়ুন - Arindam Ganguly Exclusive: অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনের সেরা নারী কে?
নারী দিবস পালন করার প্রসঙ্গে দেবলীনা দত্ত বলেন, 'আমি এই দিনটা পালন করাটাকেই সমর্থন করি না। সমাজের অনেক দিক রয়েছে, যা নিয়ে আমাদের লড়াই করার দরকার রয়েছে। পারিবারিক দিক থেকে মেয়েরা অনেকক্ষেত্রে বঞ্চিত, সেই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে লড়াই করা দরকার। শিক্ষাগত একটা অভাবের কারণে নারী আর পুরুষদের মধ্যে একটা তফাত বেশ কিছু জায়গায় দেখা যায়। আজও যে সমস্ত জায়গায় শিক্ষার আলো পৌঁছয়নি, সেই সমস্ত জায়গায় নারী-পুরুষ ভেদাভেদ দেখা যায় আজও। আজও সেখানে মেয়েরা প্রজননের যন্ত্র হিসেবে গন্য হচ্ছে। শুধু যে পুরুষের মাধ্যমে তারা গন্য হচ্ছে তা কিন্তু নয়। একটা সংখ্যক নারী নিজেরা খুশি মনেই নিজেদের প্রজননের যন্ত্র হিসেবে নিজেদের গন্য করছে। সাধারণভাবে শিক্ষাটা পৌঁছনো দরকার। এর জন্য আমাদের লড়াই করা দরকার। আজও মহিলাদের জন্য বাসে ট্রেনে আসন সংরক্ষণ করা থাকে। এবার এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া দরকার। তবেই চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসবে। হ্যাঁ, অবশ্যই বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য আসন সংরক্ষণ করে রাখাটা জরুরি। বয়ষ্ক মানুষদের জন্য আসন সংরক্ষণ জরুরি। কিন্তু মেয়েদের জন্য আলাদা করে কেন থাকবে? তাহলে কীসের সমান অধিকার পাওয়ার লড়াই?'
আন্তর্জাতির নারী দিবসের মতো সারা বিশ্বজুড়ে একটা দিন পুরুষ দিবস বলেও পালন করা হয়। দেবলীনা দত্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, 'হ্যাঁ, অবশ্যই একটা পুরুষ দিবস রয়েছে। কিন্তু সেটা নিয়ে সমাজ অনেক উদাসীন। কেউ কাউকে শুভেচ্ছা জানায় না, কারও কিছু যায় আসে না বলে যেন মনে হয়। আমি বলতে চাই নারী দিবসের মতো পুরুষ দিবসও সমানভাবে উদযাপন করা হোক। তবেই ভালো লাগবে এবং সমান সমান মনে হবে। দুটোই যদি সমানভাবে উদযাপন করা হয়, তবেই সমান সমান মনে হবে। আগেই বলেছি, আবারও বলছি। শুধু যদি নারী আর পুরুষের জন্য বিশেষদিন পালন করা হয় তাহলে ভুল হবে। তাহলে ইউনাকদের জন্যও বিশেষ দিন পালন করা হোক। এবার আমাদের সময় এসেছে ইউনাকদের নিয়ে কথা বলার। কেন আমরা এখনও বলি না! এখন মহিলারা যথেষ্ট সক্ষম হয়েছে, নিজেদের লড়াই নিজেরা করতে শিখেছে। তাদের জন্য বিশেষ দিন পালনের বিষয়টাকে সরিয়ে রেখে এবার একটু ইউনাকদের নিয়ে কথা বলার সময় এসেছে।'
আজকের দিনেও বহু জায়গায় মেয়েরা একটু পড়াশোনা করলেই হয় তাদের বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়। অনেকক্ষেত্রে এই বিষয়ে মত থাকে মেয়েদেরও। দেবলীনা দত্ত জানালেন, 'এটা সেই শিক্ষারই অভাব। পুঁথিগত শিক্ষা নয়। এই শিক্ষা সামাজিক শিক্ষা। এই শিক্ষা পারিবারিক শিক্ষা। পুঁথিগত শিক্ষার বাইরে গিয়ে যে শিক্ষা একজন মানুষের জরুরি থাকে, সেই শিক্ষার অভাবেই এগুলো দেখা যায়। জ্ঞানের পরিধিটাকে বাড়ানো জরুরি। বাড়ির বড়দের বিশেষ দায়িত্ব থাকে এক্ষেত্রে। আজও তো বহু বাড়িতে মেয়েদের শেখানো হয় শিবের মতো স্বামী পাওয়ার জন্য শিবের মাথায় জল ঢালতে হবে। এটাই ছোট থেকে মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। হাজারো কথা বলে, ভাষণ দিয়ে, গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে এগুলো বদলানো সম্ভব নয়। যারা এগুলোতে বিশ্বাসী তাদের সেই বিশ্বাস আমরা কিছুতেই ভাঙতে পারব না। এগুলো বদলানোর উপায় একটাই। আর সেটা হল শিক্ষা। একমাত্র তাদের নিজেদের মধ্যে যদি বোধদয় হয়, তবেই এগুলো বদলাবে। আর বোধদয়ের একমাত্র উপায় হল পড়াশোনা। প্রতিটা কোনায় কোনায় আমাদের শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে হবে। তবেই পরিবর্তন সম্ভব। এটা শুধু তো আমাদের দেশের সমস্যা নয়, এটা আমাদের গোটা বিশ্বের সমস্যা। আজ তাই নারী দিবস পালনের পরিবর্তে কীভাবে প্রতিটা কোনায় কোনায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া যায়, তা নিয়ে লড়াই করা দরকার।'