Hema Committee Report: যৌন শোষণের শিকার, পদে পদে হেনস্থা মেয়েদের, মলয়ালি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট
Hema Committee Report on Malayalam Film Industry: দেশের অন্যতম বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, মলয়ালি! তার অন্দরেই মহিলা কর্মীরা 'অত্যাচারের শিকার'। হেমা কমিটির বিস্ফোরক রিপোর্টে অজস্র চাঞ্চল্যকর তথ্য।
নয়াদিল্লি: মলয়ালি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির (Malayalam Film Industry) অন্দরে মহিলাদের কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তার ওপর তৈরি একটি রিপোর্ট কেরল সরকারের (Kerala Government) কাছে জমা দেওয়া হয় বছর ৫ আগে। সোমবার সেই কে. হেমা কমিটির রিপোর্ট (K. Hema Committee Report) প্রকাশ্যে আসে। যা দেখে রীতিমতো শিহরিত সকলে। সমীক্ষার রিপোর্টে রয়েছে যৌন শোষণ, বেআইনি নিষেধাজ্ঞা, বৈষম্য, মাদক ও অ্যালকোহল অপব্যবহার, পারিশ্রমিকে বৈষম্য এবং কিছু ক্ষেত্রে অমানবিক কাজের পরিবেশ সাংঘাতিক বিবরণ।
কে হেমা কমিটির রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য, মলয়ালি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের তথ্য ফাঁস
একাধিক সাক্ষী এবং অভিযুক্তদের নাম সংশোধন করার পরে প্রকাশিত ২৩৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে মলয়ালি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নির্দিষ্ট কিছু পুরুষ প্রযোজক, পরিচালক এবং অভিনেতাদের 'আওতা'য় রয়েছে, যাঁদের একজন বিশিষ্ট অভিনেতা "মাফিয়া" হিসাবে উল্লেখ করেছেন। কারণ তাঁরা নাকি ইন্ডাস্ট্রি থেকে যে কোনও কাউকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখেন।
কমিটির রিপোর্টে নিশ্চিত করা হয়েছে যে 'কাস্টিং কাউচ' সম্পর্কে যে গুঞ্জন রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে, তা সঠিক খবর। এখানে কোনও মহিলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরুর আগেই যৌন নির্যাতনের শিকার হন বলেও দাবি রিপোর্টে। তার কারণ, ইন্ডাস্ট্রির একাধিক জনপ্রিয় মানুষ নাকি মহিলাদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তাঁদের কাছে যৌন শর্ত রাখা হয়। সাক্ষীদের কেউ কেউ একাধিক ভিডিও ক্লিপ, অডিও ক্লিপ, হোয়াটস্যাপ মেসেজের স্ক্রিনশট দিয়েছেন যা 'কাস্টিং কাউচ' যে রয়েছে তা প্রমাণ করার পক্ষে যথেষ্ট বলে দাবি রিপোর্টে।
শ্যুটিংয়ের সময় যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে থাকতে একাধিক মহিলা অসুরক্ষিত বোধ করেন। কারণ অভিযোগ, পুরুষ কর্মীরা মদ্যপ অবস্থায় তাঁদের দরজার কড়া নাড়েন। জোর করে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ার চেষ্টার কথাও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে এক মহিলাকে পরের দিন শ্যুটিংয়ে সেই ব্যক্তির স্ত্রীয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে হত যার হাতে তিনি আগের দিন রাতে নির্যাতিত হয়েছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগতাদের ক্ষেত্রে কিছু সক্রিয় ব্যক্তি এমন একটি বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছেন যে সমস্ত সফল মহিলাদেরই 'আপস' করতেই হয়। রিপোর্টে দাবি এমনই ভয়াবহ।
কমিটি এই বিষয়ে যাঁদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা এই বিষয়ে কিছু প্রকাশ করতে ভয় পেয়েছেন কারণ বিরূপ পরিণতি হতে পারত। এই ভয় তাঁদের অন্দরে অত্যন্ত গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত। কমিটি উল্লেখ করেছে যে এটি তাঁদের নিরাপত্তা এবং এমনকী তাঁদের নিকটাত্মীয়দের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করে। ইন্ডাস্ট্রির অনেক নারী যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন তা এমনই গুরুতর যে তাঁরা এই বিবরণগুলি এমনকী তাঁদের ঘনিষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের কাছেও প্রকাশ করেননি। পুলিশের কাছেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা যান না কারণ সমস্ত 'ক্ষমতাশালী'দের রোষের মুখে পড়তে হতে পারে, এবং সেই সঙ্গে সাইবার অ্যাটাকের সম্ভাবনাও থাকে কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্যাতিতাদের 'পাবলিক প্রোফাইল' থাকে। উল্লেখ্য, যখন 'হেমা কমিটি' নৃত্যশিল্পীদের নিয়ে হোয়াটস্যাপ গ্রুপ চালু করে, তখন একের পর এক শিল্পী সেই গ্রুপ ছেড়ে দেন, কমিটির উদ্দেশ্য জানার পর। একই ঘটনা ঘটে জুনিয়র আর্টিস্টদের ক্ষেত্রেও, ইন্ডাস্ট্রির সর্বোচ্চ শোষিত শ্রেণির অন্যতম।
প্রযোজকদের ইন্ডাস্ট্রির 'শক্তিশালী দল' দ্বারা সতর্ক করা হয়েছে যাঁরা 'সুবিধা' দিতে রাজি হননি তাঁদের যেন কাস্ট না করা হয়। এমনকী ফিল্ম চেম্বার অব কমার্সকে এনওসি দিয়ে সিনেমার মুক্তিও বন্ধ করানো হয়। কাউকে ইন্ডাস্ট্রি থেকে নিষিদ্ধ করার পেছনে প্রোডাকশন কন্ট্রোলারদের একটা বড় ভূমিকা আছে। 'উইমেন ইন সিনেমা কালেক্টিভ' (ডব্লিউসিসি)-এর সদস্যদের, যাঁদের দাবিতে হেমা কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তাঁদের সিনেমা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কারণ সংগঠনটি নারীদের ওপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে।
রিপোর্টে সেটে চেঞ্জিং রুম বা টয়লেট সুবিধার অভাবকে তুলে ধরা হয়েছে, বিশেষ করে আউটডোর লোকেশনে, যা অনেক মহিলার 'ইউরিনারি ইনফেকশন'-এর দিকে ঠেলে দেয়। জুনিয়র আর্টিস্টদের সঙ্গে কিছুক্ষেত্রে 'দাসের থেকেও খারাপ'ভাবে ব্যবহার করা হয়, দাবি রিপোর্টে। ১৯ ঘণ্টার ওপরে টানা কাজ করেন, এমন অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁদের। বেতনের একটা বড় অংশ মধ্যস্থতাকারীদের নয়ছয়ের শিকার হয় যা সঠিক সময়ে মেলে না। একটি বিগ-বাজেট ছবির ক্ষেত্রে, এক ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধার দেহের অনেকাংশ পুড়ে যায় সেটে দুর্ঘটনার কারণে, কিন্তু তাঁকে চিকিৎসার জন্য কোনও টাকাপয়সা দেওয়া হয়নি।
অনেক ক্ষেত্রে লিখিত চুক্তি না থাকার ফলে একাধিক টেকনিশিয়ান বা অভিনেতাদের ক্ষেত্রে মুখে কথা দেওয়া পারিশ্রমিকও দেওয়া হয় না। জুনিয়র আর্টিস্টদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পারিশ্রমিক দিতেও অস্বীকার করা হয়। এক অভিনেত্রীর কথাই ধরা যাক, তিনি এক সিনেমার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছিলেন, যাঁকে জোর করে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছিল। যখন আরও বেশি 'খোলামেলা শট' দেওয়ার জন্য তাঁকে জোর করা হয় তখন ওই অভিনেত্রী কোনও পারিশ্রমিকের দাবি না করেই সেট ছেড়ে চলে যান। কিন্তু পরিচালক দাবি করেন, যে ওই অভিনেত্রীকে কোচি আসতে হবে ব্যক্তিগতভাবে, নয়তো তিনি যে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য শ্যুট হয়ে গিয়েছে তা কিছুতেই মুছবেন না।
হেমা কমিটি উল্লেখ করেছে যে একটি অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি অকার্যকর হতে পারে কারণ শক্তিশালী ব্যক্তিরা আইসিসি সদস্যদের তাঁদের দাবি অনুযায়ী অভিযোগ মোকাবিলা করার জন্য হুমকি দিতে বা বাধ্য করতে পারে। কমিটি সরকারকে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করার এবং ইন্ডাস্ট্রির নারীদের ওপর হওয়া সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুপারিশ করে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।