Hrishikesh Mukherjee: স্বপ্ন ছিল 'বায়োকেমিস্ট' হওয়ার, স্কুলের চাকরি ছেড়ে বলিউড যাত্রা হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের
Hrishikesh Mukherjee Death Anniversary: 'গোলমাল' ছবির অফার পেয়েছেন অমল পালেকর। ভেবেছিলেন বলবেন, 'না।' কিন্তু শেষ অবধি তা হয়নি। কেন আপত্তি ছিল ? কী করেই বা রাজি করিয়েছিলেন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় ?
কলকাতা: সবে গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন তখন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় (Hrishikesh Mukherjee)। কেমিস্ট্রিতে বিএসসি। কলেজ জীবনে, তাঁর স্বপ্ন ছিল বায়োকেমিস্ট হবার। কেউ জানতো না, একদিন রসায়ন বিভাগে পড়া এই মানুষটাই জীবনের অন্যতম কেমিস্ট্রি ফ্রেমে ধরবেন। এদিকে তিনি একটি স্কুলে গণিত ও বিজ্ঞান পড়াচ্ছেন। ঠিক এমন সময়েই কেউ কি তাঁকে মনে করল ? পৌঁছে গেল চিন্তাভাবনার স্রোত ?
'পাগল পবন সে..'
৪০এর দশক তখন। স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি, ফটোগ্রাফির প্যাশন তাড়িয়ে খাচ্ছে তাঁকে। এমনই সময় বড় সিদ্ধান্ত। স্কুলের চাকরি ছেড়ে একটি ফিল্ম ল্যাবে কাজে শুরু করেন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়। চল্লিশের দশকের শেষে কলকাতায় থিয়েটারে এডিটর হিসেবে অংশ নেন। অ্যাসিস্ট করেন সেই সময়ের বিখ্যাত এডিটর সুবোধ মিত্রকে। এরপরেই কিংবদন্তি বাঙালি পরিচালক বিমল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ। হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের মেধা প্রকাশ পেতে দেরি হয়নি। ১৯৫১ সালে 'বোম্বে' চলে আসেন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়। বিমল রায়ের 'দো-বিঘা জামিন' এবং 'দেবদাস'-এ এডিটর হিসেবে কাজ করেন। এরপরে আর ফিরে দেখতে হয়নি কিংবদন্তি এই এডিটরকে। কারণ এর পরেই তিনি পরিচালক হিসেবে উপহার দিয়ে গিয়েছেন আজীবনকাল দেশবাসীকে।
মাহেন্দ্রক্ষণ
'দেবদাস'-এ কাজ করতে করতেই স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ শুরু করে দেন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়। তবে এরপরেই আসে মাহেন্দ্রক্ষণ। তাঁর লেখা একটি স্ক্রিপ্ট শুনে, পরিচালনায় প্রেরণা যোগান খোদ দিলীপ কুমার। ১৯৫৭ সালে জীবনের প্রথম ছবি পরিচালনা করেন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়। ছবির নাম 'মুসাফির।'এই ছবিতেই সুর দেন আরেক বাঙালি সুরকার। সলিল চৌধুরী। 'মুসাফির'দেখে রাজকাপুর এতটাই প্রভাবিত হন যে, ১৯৫৯ সালে তাঁকে পরিচালক হিসেবে সই করান 'আনাড়ি' ছবির জন্য। এই ছবি বক্সঅফিসে বড় সাফল্য এনে দেয় হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়কে।
অমল পালেকর
হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এই বাঙালি পরিচালক একের পর এক ছবি তৈরি করেছেন। এর অন্যতম 'চুপকে চুপকে', 'অনুপমা','অভিমান', 'গুড্ডি', 'বাবর্চি', 'মিলি', 'নমকহারাম।' তবে এখনও অবধি যেই ছবিগুলির কথা বলা হল, সেই সব ছবিগুলিতেই সেইসময়ের তথাকথিত সুপারস্টারই অভিনয় করেছেন। কিন্তু এর মাঝেই তিনি বেশ অন্য ধারার একটি ছবি তৈরি করলেন। 'গোলমাল।' সুর দিলেন আরডি বর্মন। প্রথমে বুঝে, পরে সত্যি বুঝে, অবাক হয়ে, 'কী?' বলার সেই বিখ্যাত এক্সপ্রেশন উৎপল দত্তের। কিন্তু এত সবই হয়তো বৃথা যেত, যদি রাজি না হতেন অমল পালেকর।
'কহি পে নিকল আয়ে জনমোকে নাতে..'
আজ্ঞে হ্যাঁ, একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সিনিয়র এই পরিচালকের ছবিতে প্রথমে কাজ করার ইচ্ছে ছিল না তাঁর। বাড়ি থেকে বেরিয়ে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছে ভেবেছিলেন বলবেন, 'না।' কিন্তু শেষ অবধি তা হয়নি। কারণ অমল পালেকর তাঁর সম্বন্ধে ইন্ডাস্ট্রি থেকে নানা কথা শুনেছিলেন। তিনি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের শ্যুটিংয়ের আগে পুরো কিছু বলতেন না। স্ক্রিপ্ট হাতে দেওয়া তো দূরের কথা। সিন বুঝিয়ে দিয়ে সরাসরি ক্যামেরার সামনে ধরতেন চরিত্রকে। আর এখানেই আপত্তি অমল পালেকরের। এদিকে বিখ্যাত এই পরিচালকের বাড়িতে গিয়ে ভুলেই গিয়েছিলেন কেন এসেছিলেন তিনি। কারণ তখন কিংবদন্তি পরিচালক তাঁর সঙ্গে সিনেমার বিষয় ছেড়ে, অন্য গল্পে ডুবে। মেয়ের ব্যাডমিন্টন ক্লাস থেকে শুরু করে নানা গল্প। আর এখানেই বদলাতে শুরু করে অনুভূতি। কখন যে ভাললাগা এসে ছুঁয়ে গিয়েছিল জানতেই পারেননি। শেষটায় যখন 'গোলমাল'-র গল্প শোনান তিনি, হেসে গড়ান অমল পালেকর। ব্যাস আর কী,বাকিটা ইতিহাস।
ভ্রমণ
তবে ৭০-র এর দশকে তাঁর পরিচালিত একটি ছবি সব সীমা পার করে দেয়। বলিউডের দুই সুপারস্টারই ছিলেন এই ছবিতে। ফের সলিল চৌধুরীর সুর। গুলজারের লেখা। মান্না দের গান 'জিন্দেগি ক্যায়সি হে পহেলি..'। বুঝতেই পারছেন কোন ছবি ? ছবির নাম 'আনন্দ।' রাজেশ খান্না, অমিতাভ বচ্চন, জয়া ভাদুড়ী বারবার তাঁর ছবিতে ফিরেছেন। এই টাইম ফ্রেমে তখন বাঙালি শিল্পীদের সৃষ্টিতে আকণ্ঠ ডুবে সারা দেশ। তবে কিংবদন্তি এই বাঙালি পরিচালকের ছবি বোধহয় তাঁর নামকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। ২৭ অগাস্ট তিনি চিরতরে ছেড়ে গিয়েছিলেন সবাইকে। আরও একবার না হয় তাঁর ছবিগুলি দেখে কিংবা গানগুলি শুনে মনে করা যাক।
আরও পড়ুন, বাঙালিকে ভালবেসে অনুবাদ, গুলজারের জীবন বদলে দেওয়া বই হয়ে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ
ঋণ : সংসদ টিভি, অণু কাপুর (সুহানা সফর), অমল পালেকর