এক্সপ্লোর

Gulzar:বাঙালিকে ভালবেসে অনুবাদ, গুলজারের জীবন বদলে দেওয়া বই হয়ে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ

Gulzar Birthday : বিট্রিশ ভারতের পঞ্জাবের ঝিলাম জেলার দিনা শহরে (এখন পাকিস্তান) জন্ম গুলজারের। কীভাবে এলেন তাঁর জীবনে রবি ঠাকুর ?

কলকাতা: লেখালেখি নিয়ে কর্মজীবন হোক, কখনই চাননি গুলজারের পরিবার। তাই পরিবারের ইচ্ছেয়, ক্যারিয়ার বানাতেও চাননি তিনি। তবে বই পড়ার প্যাশন তাঁকে অনেক দূর নিয়ে গিয়েছে। উর্দু ভাষায় লেখা গোয়েন্দা গল্প দিয়ে গুলজারের বইয়ের প্রতি বাড়তি উৎসাহ শুরু। পরিবারের নিয়ম ছিল, খাবার খেয়ে দোকানে গিয়ে ঘুমোনো। ধারাবাহিকভাবে একটা সময়, তিনি সে দায়িত্ব পালন করেছেন। সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮ টার মধ্যে, রাতের খাওয়া হয়ে যেত শেষ। তারপরেই তিনি চলে যেতেন দোকানে। এদিকে দোকানে, ছিল না বিদ্যুৎ। একটা দীর্ঘ রাত। লম্বা চিমনাওয়ালা লণ্ঠন জ্বলত। সেখানেই রাত্রিযাপন গুলজারের (Gulzar)। 

 'নাইট ইন দ্য শপ'

দেশভাগের পর একটা লাইব্রেরির খোঁজ পান তিনি। যেখানে কাগজ বিক্রিও হত। বই ভাড়ায় নিয়ে গিয়ে, পড়তেও দেওয়া হত। একসপ্তাহ বই নিজের কাছে রাখলে, দিতে হবে ৪ আনা। ৭ দিনে, যত ইচ্ছা বই পড়ো। গোয়েন্দা গল্পের একটা বই, গোটা রাতেই শেষ করে ফেলতেন তিনি। সারারাত দোকানে শুয়ে, বই শেষ করে সকালেই ফের নতুন বইয়ের খোঁজে ওই লাইব্রেরিতে পৌঁছে যেতেন গুলজার। কারণ ওই ৪ আনার মধ্যেই আবার আরও একটা বই দাবি করা যেত। এদিকে, মাস্টার প্ল্যানের বারোটা বাজায়, স্বাভাবিকভাবেই একদিন বিরক্ত হয়ে পড়লেন লাইব্রেরির মালিক। ৪ আনায় আরও একবার বই চাইতেই, এক সকালে মেজাজ হারালেন তিনি। লাইব্রেরির উঁচু তাক থেকে, না দেখেই,  বিরক্তির সঙ্গে একটা বই নামিয়ে হাতে ধরিয়ে দিলেন। 'এটা নিয়ে যাও, আর নেই কিছু, নিয়ে যাও..।' কিন্তু ওই লাইব্রেরির মালিক তখনও জানতেন না, তিনি যখন ওই বইটা না দেখেই নামাচ্ছিলেন, ঠিক ওই সময়েই গুলজারের জীবনের রাস্তা বদলে যাচ্ছিল। বইটার নাম ছিল 'দ্য গার্ডেনার' (The Gardener)। লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore)। গুলজারের কথায়, 'ওই বইটা আমার খুবই ভাল লাগে। আমার বই পড়ার ধরণ এবং স্বাদ পুরোটাই বদলে যায়। তিনি একজন খুব খুব বড় কবি। আজও ভারত তাঁকে ভাল করে চেনেইনি। বিশেষ করে, বিশ্বভারতীতে উনি কপি রাইটের জন্য আটকে ছিলেন এতগুলি বছর। এখন ধীরে ধীরে সারা দেশে নানা ভাষায় অনুবাদ হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের বই।' গুলজার নিজেও কবিগুরুর কবিতা, হিন্দিতে অনুবাদ করেছেন। যা মধ্যে একটি :

কে নিল খোকার ঘুম হরিয়া।
মা তখন জল নিতে ও পাড়ার দিঘিটিতে
গিয়াছিল ঘট কাঁখে করিয়া।-
 
'ইন রেশমি রাহোমে..'

বিট্রিশ ভারতের পঞ্জাবের ঝিলাম জেলার দিনা শহরে (এখন পাকিস্তান), ১৮ অগাস্ট জন্ম গুলজারের। দিল্লিতে পড়াশোনা। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে চলতে গিয়ে 'বোম্বে' আসা তাঁর। 'বোম্বে' এসে উঠেছিলেন দাদার বাড়িতে। তখন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি  সেখানেই একটা ছোট চাকরি খুঁজছিলেন তিনি। অবশেষে মোটর মেকানিকের গ্যারাজে কাজ বেছে নিলেন। অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যাওয়া গাড়িগুলির রং মেলাতেন। এবং নতুন শেড দিতেন গুলজার। জীবনের কোনও কাজই বৃথা যায় না এজন্যই বলে বোধহয়। সেদিক থেকে দেখলে এটাও 'ক্রিয়েটিভ' কাজই বটে। তবে এই কাজ সেরেও তিনি পড়াশোনার সময়টুকু পেয়ে যেতেন। বিমল রায়ের সঙ্গে ক্যারিয়ার শুরুর অনেক আগে থেকেই গুলজারের লেখালেখি শুরু। কবিতা বা গান লেখার পাশাপাশি এই অভিজ্ঞতাই একদিন তাঁকে পরিচালনার দিগন্তে নিয়ে যায়। বাঙালির প্রতি ভালবাসাটা বরাবরই ছিল তাঁর জীবনে। সে, তাঁর পরিচালনায় 'আঁধি' হিন্দি ছবিতে সূচিত্রা সেনের উপস্থিতিই হোক, কিংবা তাঁর লেখা গানে সলিল চৌধুরীর সুর। আদ্যপান্ত তিনি ভালবাসতেন বাংলাকে। কলেজ জীবন থেকেই সাদা পোশাকে আকৃষ্ট হন। ভালবাসতেন ধুতি-পাঞ্জাবী পরতেও। তাঁর কথায়, 'হেমন্তদার সঙ্গে যে সময়টায় ছিলাম, তখন পরতাম।  বাংলায় কথা খুব ভাল লাগতো। বাঙালি খুব ভাল লাগতো। আমার গুরু,  বিমল রায়ও বাঙালি।আর সেই ভালবাসার প্রমাণ দিতেই বঙ্গভূমি থেকে বিয়েটাও করে ফেলেছিলাম।'

রূপকথার মতো সন্ধ্যা ইস্কুলবাড়ি
চুপকথার মতো অস্বাচ্ছন্দ্যে তুমি
বিকেলের পারে তখন নীল স্বপ্ননীল
ইস্কুলে স্বপ্ন সরস্বত নদী
দুকুল ছাপিয়ে বাধনহারা
পাগলপারা।

'দ্য গার্ডেনার'

একটু ফ্ল্যাশব্যাকে ফেরা যাক। ধরা যাক 'বোম্বের' ওই অ্যাক্সিডেন্ট হওয়া গাড়িগুলিতে নানা রঙের শেড পড়ছে। 'হেভি মেশিন অ্যান্ড টুলস'র নানারকম ভারী আওয়াজ হচ্ছে যে, এটা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু শোনা যাচ্ছে না।'মিউট' করা। আর সেই ফ্রেমে বসেছে, দূরে আরব সাগরের ঢেউয়ের আওয়াজ। 'ফেড আউট'...। এমন ফিউশন কিন্তু ভারতীয় ছবিতে প্রচুর আছে। কিন্তু এত গেল রেকর্ডিং রুমের টেকনিক্যাল টার্ম। এবার রূঢ় বাস্তব। ধরুন যদি বলা হয়, 'ট্যামারিন্ড', জিভে জল এল কি ? কিন্তু যদি বলেন 'তেঁতুল', ওমনি জিভটা জলে ভরে উঠবে। এটা শুধু মাতৃভাষার কথা হচ্ছে না। এর উলটো উদাহরণও আছে কিন্তু। একটু আগেই যা আওড়ানো হল। অর্থাৎ যে অনুভূতি প্রথম এসে, যে ভাষায় বসে। তবে অবচেতনে ঠিক কীভাবে আমাদের ওই যাবতীয় আবেগ ধরা আছে, তা বুঝতে অনেকক্ষেত্রে সময় লেগে যায়। কিন্তু যেদিন তা ঠাহর হয়, শুরু হয় উলটো ফেরার পালা। কী কী ফেলে এসেছি পিছনে ? শুরু হয় খোঁজ। এমন অনেক গান কিংবা কবিতাই আছে, যা স্বরলিপি ধরে ধরে গাওয়া বা উচ্চারণ ঠিক করে আবৃত্তি করা হয় বটে। আসে পুরস্কারও। কিন্তু যেদিন ওই গান বা কবিতার শব্দে, প্রকৃতই জীবন এসে ধরা দেয়, তখন ছোটবেলার চেনা শহরটাই বোধহয় বদলে যায়। বিখ্যাত অভিনেত্রী রাখী মজুমদারকে বিয়ে করেছিলেন গুলজার। যদিও 'বিয়েটা' দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তবে বিচ্ছেদের বহুবছর পরেও,আজও দুজনেরই যোগাযোগ নিবিড়। এটাও তো একটা সম্পর্ক, তা নয় কি ? এখানে আবেগ ও অনুভূতিগুলি ঠিক কেমন ? গুলজার বলেছেন,' যন্ত্রনা অনেকটা দীর্ঘ সময় ধরে থাকে। ধূপকাঠির মতো অনেকসময় ধরে জ্বলে,সুভাষ ছড়িয়ে যায়। কিন্তু আনন্দের মুহূর্ত, তাঁরাবাজির মতোর জ্বলে, দ্রুত নিভে যায়।' 

আমার আর মাত্র এক হাজার একটা কবিতা লেখা বাকি রয়েছে,
তারপরেই এবারের মতো আমার আরব্যরজনী সমাপ্ত।
আর মাত্র এক হাজার এক। খুব হিসেব করে চলতে হবে।
...সে সমস্তই তোমাকে নিয়ে। নিতান্ত তোমাকে নিয়ে।

শুধুই তোমাকে নিয়ে লিখে যেতে হবে। লিখতে লিখতে লিখতে
আমি থুরথুর বুড়ো হয়ে যাবো, হাতের কলম কাঁপবে, কাগজে
কালি চলকিয়ে পড়বে, লিখতে লিখতে লিখতে কবজি অচল
হয়ে যাবে।
তুমি কি আমাকে ছাড়বে, ছেড়ে দেবে ? তোমার ওই
ন'শো নব্বুইটা কবিতা শেষ করার আগে।

আরও পড়ুন : বিদেশে গিয়ে অর্থকষ্টে মাইকেল, বন্ধুর জন্য 'ঋণ' নিতে দুবার ভাবেননি 'বিদ্যাসাগর'

ঋণ:  দোলনচাঁপা চক্রবর্তী (কৌরব), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তারাপদ রায় (জলের মতো কবিতা), গুলজারের সাক্ষাৎকার (দ্য অনুপম খের শো)।

 

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Rohit Sharma: নেটে চোট রোহিতের, চতুর্থ টেস্টের আগেই ভারতীয় শিবিরে বিরাট ধাক্কা
নেটে চোট রোহিতের, চতুর্থ টেস্টের আগেই ভারতীয় শিবিরে বিরাট ধাক্কা
West Bengal News Live Updates: হাসিনার আমলে বাংলাদেশের বন্দিদের গুম করার অভিযোগে ভারত-যোগ খুঁজে পেল ইউনূস সরকার
হাসিনার আমলে বাংলাদেশের বন্দিদের গুম করার অভিযোগে ভারত-যোগ খুঁজে পেল ইউনূস সরকার
Bangladesh Mayanmar Border: বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মায়ানমারের রাখাইনে সামরিক হেড কোয়র্টারই কব্জায় বিদ্রোহী সেনার ? আরও চাপে ইউনূস প্রশাসন ?
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মায়ানমারের রাখাইনে সামরিক হেড কোয়র্টারই কব্জায় বিদ্রোহী সেনার ? আরও চাপে ইউনূস প্রশাসন ?
Durgapur News: পুলিশের তাড়া, নিয়ন্ত্রণ হারাল ওভারলোডেড ট্রাক্টর, রাস্তার পাশেই বাইকে পরিবারের ৩ সদস্য; যা ঘটল দুর্গাপুরে
পুলিশের তাড়া, নিয়ন্ত্রণ হারাল ওভারলোডেড ট্রাক্টর, রাস্তার পাশেই বাইকে পরিবারের ৩ সদস্য; যা ঘটল দুর্গাপুরে
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Bangladesh News : ভারতীয় পরিচয় পত্র বানিয়ে নাশকতার ঘুঁটি সাজাচ্ছিল আনসারুল্লা বাংলার জঙ্গি!Bangladesh News : ফের করাচি থেকে চট্টগ্রামে এল জাহাজ। কোনও তল্লাশি না করার নির্দেশ ইউনূসেরBangladesh News : জঙ্গি অনুপ্রবেশ নিয়ে ফের কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমJhargram News : বন দফতর ও পুলিশের পাশাপাশি, এবার ঝাড়গ্রামে বাঘের খোঁজে নামল আধা সামরিক বাহিনী

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Rohit Sharma: নেটে চোট রোহিতের, চতুর্থ টেস্টের আগেই ভারতীয় শিবিরে বিরাট ধাক্কা
নেটে চোট রোহিতের, চতুর্থ টেস্টের আগেই ভারতীয় শিবিরে বিরাট ধাক্কা
West Bengal News Live Updates: হাসিনার আমলে বাংলাদেশের বন্দিদের গুম করার অভিযোগে ভারত-যোগ খুঁজে পেল ইউনূস সরকার
হাসিনার আমলে বাংলাদেশের বন্দিদের গুম করার অভিযোগে ভারত-যোগ খুঁজে পেল ইউনূস সরকার
Bangladesh Mayanmar Border: বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মায়ানমারের রাখাইনে সামরিক হেড কোয়র্টারই কব্জায় বিদ্রোহী সেনার ? আরও চাপে ইউনূস প্রশাসন ?
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মায়ানমারের রাখাইনে সামরিক হেড কোয়র্টারই কব্জায় বিদ্রোহী সেনার ? আরও চাপে ইউনূস প্রশাসন ?
Durgapur News: পুলিশের তাড়া, নিয়ন্ত্রণ হারাল ওভারলোডেড ট্রাক্টর, রাস্তার পাশেই বাইকে পরিবারের ৩ সদস্য; যা ঘটল দুর্গাপুরে
পুলিশের তাড়া, নিয়ন্ত্রণ হারাল ওভারলোডেড ট্রাক্টর, রাস্তার পাশেই বাইকে পরিবারের ৩ সদস্য; যা ঘটল দুর্গাপুরে
Virat Kohli restaurant: নিয়মবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ, বিরাট কোহলির রেস্তোরাঁকে পাঠানো হল নোটিস
নিয়মবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ, বিরাট কোহলির রেস্তোরাঁকে পাঠানো হল নোটিস
Asit Majumdar: জনসংযোগে বেরিয়ে নর্দমায় পড়ে গেলেন TMC MLA! পায়ে ধরল চিড়
জনসংযোগে বেরিয়ে নর্দমায় পড়ে গেলেন TMC MLA! পায়ে ধরল চিড়
Rafale Fighter Jet: ভারতের যুদ্ধবিমানকে কটাক্ষ বাংলাদেশের, ভারতীয় বায়ুসেনার গর্ব রাফালের বিশেষত্ব কী?
ভারতের যুদ্ধবিমানকে কটাক্ষ বাংলাদেশের, ভারতীয় বায়ুসেনার গর্ব রাফালের বিশেষত্ব কী?
Jayanta Ghosh Dastidar: ক্রিকেট মাঠে চক দে ইন্ডিয়া! দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে খেলেছেন, ট্রফির হ্যাটট্রিকে নবজাগরণ
ক্রিকেট মাঠে চক দে ইন্ডিয়া! দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে খেলেছেন, ট্রফির হ্যাটট্রিকে নবজাগরণ
Embed widget