কোভিড পরিস্থিতিতে মানসিক টানাপোড়েনের গল্প শুনিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রশংসিত 'কালকক্ষ'
করোনা আতঙ্কে ঘরে বসে প্রত্যেক মানুষের তখন মনে হচ্ছিল.. 'ডাক্তার মানে সে তো মানুষ নয়, আমাদের চোখে সে তো ভগবান'।
কলকাতা: লকডাউনে, আতঙ্কে ঘরবন্দি মানুষ। হাসপাতালে হাসপাতালে ফুরিয়ে আসছে বেড.. অক্সিজেন। মিলছে না ভ্যাকসিন, ওষুধ। চারিদিকে কেবল হাহাকার আর ভয়। করোনা আতঙ্কে ঘরে বসে প্রত্যেক মানুষের তখন মনে হচ্ছিল.. 'ডাক্তার মানে সে তো মানুষ নয়, আমাদের চোখে সে তো ভগবান'। এই পরিস্থিতিতে একজন চিকিৎসককে অপহরণ করে বাড়িতে অপহরণ করে এনে রাখলে? ঠিক এমনই একটা প্রেক্ষাপটকে ছবির পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক রাজদীপ পাল ও শর্মিষ্ঠা মাইতির জুটি। ছবির নাম 'কালকক্ষ'।
এর আগে একাধিক স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করেছেন রাজদীপ ও শর্মিষ্ঠা। 'কালকক্ষ' তাঁদের পরিচালিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি। ইতিমধ্যেই ২৬তম বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার, বোস্টনে উদ্বোধনী ছবি হিসেবে নর্থ আমেরিকান প্রিমিয়ার হওয়ার পর ৫২তম আন্তর্জাতিক ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসব, গোয়া (IFFI)- এ ইন্ডিয়ান প্যানোরমার সম্মান জিতে নিয়েছে অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন প্রযোজিত 'কালকক্ষ'। বোস্টনে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জুরি পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ছবির অভিনেত্রী তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস। 'কালকক্ষ'-র সাফল্যে খুশি পরিচালক জুটি থেকে শুরু করে ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীরাও। কিন্তু এই ছবি তৈরির পথটা নেহাত সহজ ছিল না। ছবির পরিচালক রাজদীপ বলছেন, 'কালকক্ষ ছবির ভাবনা শুরু হয়েছে লকডাউনের মধ্যেই। এর আগে আমাদের অন্য একটি ছবি তৈরির পরিকল্পনা ছিল। ছবির কাস্টিং, চিত্রনাট্য সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই বন্ধ করে দিতে হয় সেই ছবির কাজ।' একই সুর শর্মিষ্ঠার গলাতেও। বললেন, 'একে অপরকে ফোন করে ছবির চিত্রনাট্য শোনাতাম আমরা। প্রযোজকের সঙ্গেও কথা হয়েছিল ফোনেই। ছবির গল্প শুনে ওনারা রাজি হন। '
করোনা পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে গল্প। কীভাবে এর প্রেক্ষাপট মাথায় এসেছিল পরিচালক জুটির? শর্মিষ্ঠা বলছেন, 'করোনা পরিস্থিতি আমাদের প্রত্যেককে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। আমার বাড়িতে ছোট্ট মেয়ে আছে। লকডাউনে দেখতাম, ঘরবন্দি হয়ে ও মেঘের সঙ্গে কথা বলতো। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দেখতে দেখতেই এই ছবির চিত্রনাট্য মাথায় আসে। ছোট্ট ইউনিট নিয়ে ১৪ দিনে কাজ করেছি। অনেক কাজ নিজেদেরও সামলাতে হয়েছে।' অপর পরিচালক রাজদীপ বলছেন, '১৪ দিন আমরা গোটা টিম কার্যত কোয়ারেন্টিনে ছিলাম। কেবল কাজ করেছি আর বাড়ি ফিরে এসেছি। ছোট্ট টিম, খাবার আয়োজন থেকে শুরু করে জামা-কাপড় কাচা, সব নিজের হাতে করেছি আমরা। তার মধ্যে কড়াভাবে করোনাবিধি মানতে হয়েছে।'
দীর্ঘদিন শ্যুটিং বন্ধ থাকার পর এই ছবির শ্যুটিং যেন সবার কাছে ঘরে ফেরার ডাক ছিল, এই কথা একবাক্যে স্বীকার করছেন পরিচালক জুটি। তবে এই শ্যুটিংও নেহাত সহজ ছিল না। শর্মিষ্ঠা বলছেন, 'আমাদের ছবিতে অহনা বলে এক কিশোরীর অভিনয় করার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে হঠাৎ সে বেঁকে বসে। অভিনয় করতে রাজি হয় না। আমরা অনেক বুঝিয়ে ওর আতঙ্ক কাটিয়েছিলাম।'
এই ছবি কস্টিউমের ক্ষেত্রেও প্রশংসিত হয়েছে, জিতে নিয়েছে পুরস্কারও। একটু হেসে শর্মিষ্ঠা বললেন, 'রোজ শ্যুটিংয়ের পর আমি রাত্রে বসে বসে কস্টিউমগুলো নিজে কেচে আবার তৈরি করে রাখতাম। ছবিটা এতটা প্রশংসিত হওয়ায় মনে হয় সেই খাটুনিগুলো কাজে লেগেছে।'