'Bawaal' Review: বরুণ ধবন ও জাহ্নবী কপূর অভিনীত নতুন ছবি আক্ষরিক অর্থেই 'বাওয়াল', কী কী কারণে 'ব্যর্থ'?
'Bawaal': 'বাওয়াল' ছবিটিতে আসলে কী ঘটছে এবং কী বোঝাতে চাইছে ছবিটি তা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হবে দর্শককে। কিন্তু কেন?
নীতেশ তিওয়ারি
বরুণ ধবন, জাহ্নবী কপূর, মুকেশ তিওয়ারি, অঞ্জুমন সাক্সেনা, মনোজ পাহওয়া
অমনদীপ নারং, নয়াদিল্লি: অ্যামাজন প্রাইমে (Amazon Prime) মুক্তি পাওয়া 'বাওয়াল' (Bawaal) এক কথায় অত্যন্ত খারাপ। বরুণ ধবন (Varun Dhawan) ও জাহ্নবী কপূর (Janhvi Kapoor) অভিনীত, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক নীতেশ তিওয়ারির (Nitesh Tiwari) এই ছবিতে স্থান ও কাল মিশে একাকার। ইওরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লখনউয়ের আধুনিক মধ্যবিত্ত পরিবার ও স্কুলের মিশ্রণ এমনই যার স্বাভাবিক নিয়মেই পরিণাম হয়েছে 'বাওয়াল'।
যদি ছবিটিতে টাইম ট্রাভেল, বিস্মৃত স্মৃতি, বা এপিলেপ্সি (একদমই ঠিক পড়ছেন, অনেক কিছুই রয়েছে এই ছবিতে) বা ব্যক্তিগত ক্ষতি সংক্রান্ত একটা ঠিকঠাক সাবপ্লট থাকত তাও বোঝা যেত, কিন্তু লখনউয়ের একজন ইতিহাস শিক্ষকের জীবনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার মিলিয়ে দেওয়ার মতো প্রায় হাস্যকর এবং উচ্চাভিলাষী আইডিয়া কেবল যে গোটা ব্যাপারটাকে তুচ্ছ করেছে তাইই নয়, একইসঙ্গে ভয়ঙ্করও করে তুলেছে।
'বাওয়াল' ছবিটিতে আসলে কী ঘটছে এবং কী বোঝাতে চাইছে ছবিটি তা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হবে দর্শককে। সিনেমাটি দেখে মনে হচ্ছে যে প্লটের এমন আইডিয়া যে সমর্থনযোগ্য সেটা নিজের কাছেই প্রমাণ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন পরিচালক। 'বাওয়াল' ছবিতে মুকেশ তিওয়ারির (রাজনীতিকের চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে) সংলাপ 'নিজের পুরনো ভুল থেকে শিখবে' এই বাক্যটিকে বারবার ব্যাখ্যা করে আর শিখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে যা সাধারণ মানুষ মূলত নিজেদের জীবন ও ইতিহাস পড়েই জেনে যায়। কিন্তু এমন ধরনের এই গল্পের প্লটকে বাস্তবায়িত করার যে কল্পনা তা সত্যিই ভয়ঙ্কর।
হয়তো এই ছবি দেখার পর সমালোচনার কারণে অনেককে বলা হতে পারে যে তাঁরা ইতিহাসকে নতুন আঙ্গিকে দেখে মেনে নিতে পারছেন না, আবার অনেকেই এই ছবিকে তথ্যমূলকও বলছেন যা বাড়ির বাচ্চাদের সঙ্গে বসে দেখা যেতে পারে। কিন্তু সব শেষে 'বাওয়াল' ছবি থেকে শিক্ষা কী পাওয়া যাবে? যে, ছবিতে বরুণ ধবনের চরিত্র, যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে হিটলারের, তার হঠাৎ হৃদয় গলে গেল যখন সে জানতে পারল জাহ্নবীর চরিত্রের নেপথ্য কাহিনি, যে সে এমন একজন মহিলা যে এপিলেপ্সির শিকার। নাকি, বিংশ শতকের ইতিহাসের একটা অংশকে লঘু করে পৃষ্ঠপোশকতা করে লখনউয়ের ১৩ বছরের ছেলেমেয়েদের স্কুলে জীবন বাণী দেওয়া খুব স্বাভাবিক? যুগে যুগে অজয় দীক্ষিতের মতো চরিত্রের রূপান্তর কি কেবল সম্ভব যখন সে হলোকাস্টের প্রকৃত ইতিহাস বুঝতে পারবে? এমন প্রশ্নের তালিকা চলতেই থাকবে।
'বাওয়াল' এক ইতিহাস শিক্ষক, অজয় দীক্ষিতের গল্প (বরুণ ধবন অভিনীত চরিত্র) যে, সারাজীবন নিজে একজন গড়পড়তা ছাত্র ছিল, কিন্তু নিজের মনের মধ্যে এমন এক ইমেজ তৈরি করেছে নিজের ব্যাপারে, যাকে মানুষ ঈশ্বরের আসনে বসাবে, বাস্তব সেখানে কোনও স্থান পায় না এবং সেটা বাকিদের জন্য কতটা কষ্টকর তাতেও তার কিছু যায় আসে না। অন্যদিকে, ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে নিশার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহ্নবী কপূর, শিক্ষিত, স্বাধীন, সুন্দরী কিন্তু তার একটাই সমস্যা যে সে এপিলেপ্সির শিকার।
এই দুই ধরনের চরিত্রের বিয়ে হয় এবং বিয়ের দিন জাহ্নবীর ফের আক্রান্ত হয় এপিলেপ্সিতে। এরপর কী হয় সেই নিয়েই আবর্তিত হয়েছে 'বাওয়াল' ছবির গল্প। ছবিতে কোথাও এপিলেপ্সিকে সঠিক স্থান দেওয়া হয়নি, যে দুই জায়গায় এর উল্লেখ করা হয়েছে উভয় ক্ষেত্রেই এটি ব্যবহৃত হয়েছে শুধুমাত্র গল্পটা এগিয়ে নিয়েও যাওয়ার অনুঘটক হিসেবে।
অন্যদিকে, অজয় দীক্ষিতের চরিত্র একটি রূপান্তর এবং হৃদয়ের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় যা তাকে আরও সহনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে যে জীবনের বাস্তব রূপকে গ্রহণ করতে শেখে। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস থেকে শেখার একেবারে বিপরীতে যায় এবং জীবনকে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গি তাকে নিশা ইউরোপে গিয়ে শেখায়। তবে এত কিছু সত্ত্বেও বরুণ ও জাহ্নবী অভিনীত 'বাওয়াল' কিছু কিছু জায়গায় দুর্দান্ত।
'বাওয়াল' ছবির মিউজিক
দারুণ হওয়ার নিরিখে ধরা যেতে পারে ছবির আবহ সঙ্গীত। ছবির গল্পের সঙ্গে 'বাওয়াল'-এর মিউজিক একেবারে মানানসই। দেশীয় সঙ্গীতের সঙ্গে অপেরার মিশ্রণে তৈরি অন্য ধরনের সুর ক্ষেত্র বিশেষে সত্যিই কার্যকরী (মিস্টার বিন থেকে অনুপ্রাণিত মনে হলেও একটি সত্যিই ভাল কমিক দৃশ্যে ব্যবহৃত)।
অন্যান্য ক্ষেত্রে আবহ সঙ্গীতও বেশ অনুমানযোগ্য, কিন্তু কখনও আশাতীত নয়। ছবির দুটি গান যথাযথ। একটি খুবই সাধারণ ওপেনিং ক্রেডিটসের গান ও অন্যটি ছবির দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবহৃত রোম্যান্টিক গান।
'বাওয়াল' ছবির গঠন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা
এই ছবিতে আরও একটা জিনিস পরিচালক যেটা ভাল করেছেন যে কিছু তথাকথিত গঠন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা। দর্শক হিসেবে ইতিহাসের ঘটনা দেখানোর সময় সাদা-কালো দৃশ্যের ব্যবহার প্রশংসনীয়। আবেগঘন দৃশ্য ফ্রেমবন্দি করা হয়েছে মিড-শটে তাও পাশ থেকে, প্রায় কখনওই চরিত্রদের ক্লোজআপ ব্যবহার করা হয়নি। যার অর্থ হতে পারে যে যতটা দেখা যাচ্ছে তারও মধ্যে অন্তর্নিহিত অর্থ লুকিয়ে আছে। এছাড়া প্যারিস, অ্যামস্টারডাম, অসউইচ, বার্লিনের মতো লোকেশনের ব্যবহার দুই চরিত্রের সম্পর্কের ধাপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। প্যারিসে থাকার সময়ে রোম্যান্টিক সম্পর্ক, অ্যামস্টারডামে খানিক মজা হুল্লোড় এবং বার্লিনে থাকার সময় অজয় ও নিশার সম্পর্ক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং অসউইচে এসে চূড়ান্ত সমাপ্তি।
অসউইচের একটি দৃশ্য রয়েছে যেখানে ক্যাম্প থেকে বেঁচে ফের এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীয়ের গল্প বলতে গিয়ে ভেঙে পড়ছেন, সেখানেও নীতেশ তিওয়ারি কোনও ক্লোজআপ শট ব্যবহার করেননি। কিন্তু এই দৃশ্য তিনটি কারণে আলাদা। প্রথমত এই দৃশ্য দুই মুখ্য চরিত্রের মধ্যে বাড়তে থাকা দূরত্বের প্রতীক। দ্বিতীয়ত, যেমনটা আগে বলা হয়েছে, পরিচালক যেন আপ্রাণ চেষ্টা করছেন নিজের আইডিয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করার এবং হলোকস্টের ভয়াবহতার সঙ্গে জীবনের তুলনা করা যে সেই অভিজ্ঞতা যতই সাংঘাতিক হোক না কেন তা জীবনের সমস্যার কাছে খুবই তুচ্ছ। কিন্ত সিনেমার শেষের দিকে এই সাদা-কালো দৃশ্য যেখানে নিশা ও অজয় কল্পনা করছে যে তারা সেই গ্যাস চেম্বারে বন্দি এবং সেই থেকে নিশা ফের এপিলেপ্সি আক্রান্ত হয়ে ওঠে। এই দৃশ্য একাধিক স্তরে অত্যন্ত সমস্যার, এবং হৃদয় বিদারক।
কার কেমন পারফর্ম্যান্স?
অজয় দীক্ষিতের চরিত্রে বরুণ ধবন বেশ ভাল ও মানানসই। দেশি মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ স্বামী, জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে যার জ্ঞান খুবই সীমিত বা স্বল্প, অজয়ের মতো এই ধরনের চরিত্র আমরা একাধিক বলিউড ছবিতে ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছি। যদিও তাঁর চরিত্রের অত্যন্ত সততার সঙ্গে 'খল' হওয়া উপভোগ্য।
ছবির গল্প অনুযায়ী অজয়ের চরিত্রের মতো জাহ্নবীর চরিত্র অতটা গুরুত্ব দিয়ে তৈরিই হয়নি। তবে নিজের চরিত্র ভালভাবেই পালন করেছেন জাহ্নবী।
ছবিতে মুকেশ তিওয়ারি, অঞ্জুমন সাক্সেনা, মনোজ পাহওয়ার মতো অভিনেতাদের সঠিকভাবে ব্যবহারই করা হয়নি, তবে নিজেদের চরিত্রে তাঁরা প্রত্যেকেই যথাযথ।
উপসংহার
ছবি দেখে মনে হবে নীতেশ তিওয়ারি 'পরিবেশ এমন তৈরি করো, যে শুধু পরিবেশটাই মনে থাকে, সার্বিক ফল না', সংলাপটাকে খুবই সিরিয়াসলি নিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি সেট এবং সেটাকে লখনউয়ের আধুনিক প্রেক্ষারটের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলে পরিচালক ভুলেই গেছিলেন এর ফল কী হতে পারে।
হয়তো অনেকেই এই রিভিউর সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। মনে হতে পারে এই মিষ্টি একটি ছবি যেখানে দেশীয় মধ্যবিত্ত পরিবারকে হলিউডের ছাঁচে ফেলা হয়েছে। অনেকে আবার বলতে পারেন যে 'বাওয়াল' বেশ তথ্যমূলক একটি ছবি যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে একাধিক জীবনমুখী শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং যা শিশুরাও দেখতে পারে। তবে বলে রাখা ভাল, এই 'শিশু' যাদের জন্য নীতেশ তিওয়ারি একাধিক ছবি তৈরি করেছেন তাদের 'বাওয়াল' থেকে দূরে রাখাই ভাল।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন