এক্সপ্লোর

৭৫২ টি উনুন, ৩০০-রও বেশি রাঁধুনি! পুরীর ছাপান্ন ভোগের কাহিনী অবাক করবে আপনাকেও

মানুষের বিশ্বাস লক্ষ্মীদেবী স্বয়ং এঁদের মাধ্যমে জগন্নাথদেবের ভোগ রান্না করেন।

সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা: প্রচলিত প্রবাদ নারায়ণ বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন, দ্বারকায় পোশাক পরেন, পুরী ধামে আহার করেন আর রামেশ্বরমে শয়ন করেন। এ হেন পুরীধাম যেখানে স্বয়ং পুরুষোত্তম নারায়ণ আহার করেন সেখানকার ভোগের আয়োজন চমকপ্রদ হবে তা তো বলাই বাহুল্য। 

পুরানের কাহিনী অনুযায়ী শ্রী কৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বত তুলে ধরে মহাপ্রলয় থেকে প্রাণীকূলকে রক্ষা করেছিলেন। এই ভাবে সাত দিন কনিষ্ঠ আঙ্গুলে পাহাড় তুলে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। শ্রীকৃষ্ণ প্রতিদিন আট বার খেতেন। তবে এই সাত দিন তিনি কিছুই খাননি। সাতদিন পর প্রলয় বন্ধ হলে তিনি পাহাড় নামিয়ে রাখেন। তখন গোপবাসীগণ কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাঁকে সাতদিনের আট রকমের মোট ছাপ্পান্ন রকমের রান্না করে ভোগ নিবেদন করেন। সেই থেকেই নারায়ণের ছাপ্পান্ন ভোগ চলে আসছে।

জগন্নাথ মন্দিরের একাংশেই হয়েছে খুব বড় রান্নাঘর। সেখানের সাধারণ ভক্তের প্রবেশ নিষেধ। একে রোষা ঘর বলে। দেওয়ালের ছোট ছোট ফাঁক দিয়ে বাইরে থেকে সেই বিশাল কর্মকান্ড চাক্ষুষ করা যায়। রয়েছে ৭৫২ টি উনুন, সেখানে এই ভোগ রান্নার কাজ করেন তিনশ'রও বেশি রাঁধুনি। এঁদের বলা হয় সূপকার। মানুষের বিশ্বাস লক্ষ্মীদেবী স্বয়ং এঁদের মাধ্যমে জগন্নাথদেবের ভোগ রান্না করেন। রান্নার সময় এঁরা সারাক্ষণ নাকে মুখে গামছা জড়িয়ে থাকেন।

পুরীর মন্দিরে বাইরে থেকে আনা কোন খাবার জগন্নাথকে দেওয়া যায় না। নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সংগ্রহ করা কাঁচা জিনিস রান্নাঘরে রান্না করে মহাপ্রভুকে দেওয়া হয়। জগন্নাথের ভোগে মূলত দুই ধরনের খাবার দেওয়া হয়। ভাত, ডাল, তরকারি, খিচুড়ি জাতীয় রান্না করা খাবার যাকে ‘শঙ্খুড়ি’ বলা হয়। আর খাজা, গজা, খই, মুড়কি জাতীয় শুকনো খাবার যাকে বলা হয় শুখুলি। 

প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ রোষা হোম করা হয়। এই হোমের আগুন থেকে রান্নাঘর বা রোষা ঘরের সমস্ত উনুনে আগুন দেওয়া হয়। বলা হয় এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রান্নাঘর। প্রতিদিন এখানে লক্ষাধিক মানুষের অন্নসংস্থান হয়। এখানে রান্নার পদ্ধতিটিও বেশ অভিনব। প্রতিটি উনুনের একটি করে বড় মুখ। তার চারপাশে আরও বেশ কয়েকটি ছোট ছোট মুখ থাকে। উনুনের মুখে সবচেয়ে বড় মাটির হাঁড়িতে ভাত বসানো হয়। তার উপরে উপরে সাতটা থেকে নটা পর্যন্ত ক্রমশ ছোট ছোট হাঁড়িতে নানা ধরনের তরকারি বসানো হয়।

সমস্ত রান্নাই করা হয় মাটির হাঁড়িতে। মূলত ফুটন্ত জলে সবজি এবং মশলা দিয়ে চলতে থাকে মহাপ্রভুর রান্না। মশলা বলতে শুধুমাত্র নুন এবং হলুদের ব্যবহার। সবজির ক্ষেত্রে কোন ধরনের বিদেশি সবজি ব্যবহার করা হয় না। পেঁপে, আলু, টমেটো, কাঁচা লঙ্কা জাতীয় সবজি জগন্নাথের রান্নায় ব্যবহার করা হয় না। মূলত দেশীয় সবজি রাঙ্গাআলু, পটল, কাঁচকলা, কাঁকরোল ইত্যাদি থাকে সবজির মধ্যে। আগুন থেকে সবচেয়ে দূরের উপরের হাঁড়িতে থাকা খাবার সবার আগে রান্না হয়। 

সকালে জগন্নাথের বাল্যভোগ হয়। এই সময় তাঁকে খই, চিঁড়ে, বাতাসা, মাখন, মিছরি, কলা, দই এবং নারকেল কোরা দেওয়া হয়। এর কিছু পরে জগন্নাথকে রাজা ভোগ দেওয়া হয়। একসময় পুরীর রাজা এই ভোগের ব্যয় বহন করতেন। সেই থেকেই এই নাম হয়েছে রাজা ভোগ। কী কী থাকে এই খাবারের তালিকায়? এই সময় ব্যবহার হয় মিষ্টি চালের খিচুড়ি, যাকে কণিকা খিচুড়ি বলে। সঙ্গে থাকে ডাল, তরকারি, ভাজা এবং পিঠেপুলি থাকে। এর পর দুপুরের ভোগ মূলত অন্নভোগ। ভাত, ডাল, শুক্তো, তরকারি ও পরমাণ্ণ। তাতে থাকে বিভিন্ন ধরনের ভাত। ডালও থাকে বিভিন্ন ধরনের। তবে মুসুর ডাল এবং মটর ডাল ব্যবহার করা হয় না। 

এ ছাড়া থাকে নানা স্বাদের খিচুড়ি। এর সঙ্গে বেশ কিছু মিষ্টিও দেওয়া হয়। বলরামের বিশেষ ভোগে থাকে ক্ষীর এবং মালপোয়া। সন্ধেবেলা জগন্নাথকে দেওয়া হয় ‘সুভাস পাখাল’। লেবু, দই দিয়ে মাখা পান্তাভাতকেই বলা হয় ‘সুভাস পাখাল’। সঙ্গে থাকে খাজা গজায় এবং নানা ধরনের মিষ্টি রাত এগারোটা নাগাদ মহাপ্রভুর বড় শৃঙ্গার হয়। এই সময় তাঁকে বিভিন্ন ধরনের ভাজা ও ক্ষীর নিবেদন করা হয়। সবশেষে মধ্যরাতে ডাবের জল খেয়ে জগন্নাথ দেব শয়ন করেন। এই ভাবে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত জগন্নাথদেবের ৫৬ প্রকার ভোগ চলতে থাকে।

 

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Suryakumar Yadav Catch: চাপের মুখে অবিশ্বাস্য ফিল্ডিং, বিশ্বকাপ ফাইনালের মোড় ঘোরানো ক্যাচ নিয়ে কী বললেন সূর্যকুমার?
চাপের মুখে অবিশ্বাস্য ফিল্ডিং, বিশ্বকাপ ফাইনালের মোড় ঘোরানো ক্যাচ নিয়ে কী বললেন সূর্যকুমার?
Arabul Islam Gets Bail: জামিন পেলেন আরাবুল ইসলাম
জামিন পেলেন আরাবুল ইসলাম
Kolkata Fire : ধাপার মাঠপুকুরে ইঞ্জিন অয়েল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, এলাকা ঢেকেছে কালো ধোঁয়ায়
ধাপার মাঠপুকুরে ইঞ্জিন অয়েল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, এলাকা ঢেকেছে কালো ধোঁয়ায়
Kolkata Lynching : মা-ছেলেকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মার 'তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী'র, নৃশংসতার ছবি এবার আড়িয়াদহে
মা-ছেলেকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মার 'তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী'র, নৃশংসতার ছবি এবার আড়িয়াদহে
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Kolkata News: প্রকাশ্যে মারধর, প্রতিবাদে বিক্ষোভ মহিলাদের। ABP Ananda LiveRation Scam: ED-কে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে চান ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, খবর সূত্রের। ABP Ananda LiveKolkata Update: ধাপার মাঠপুকুরে ইঞ্জিন অয়েল কারখানায় অগ্নিকাণ্ড। ABP Ananda LiveCBI Chargesheet: 'দক্ষিণ দমদম পুরসভায় বেআইনিভাবে ২৯জনকে নিয়োগ', চার্জশিটে বিস্ফোরক দাবি CBI-র

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Suryakumar Yadav Catch: চাপের মুখে অবিশ্বাস্য ফিল্ডিং, বিশ্বকাপ ফাইনালের মোড় ঘোরানো ক্যাচ নিয়ে কী বললেন সূর্যকুমার?
চাপের মুখে অবিশ্বাস্য ফিল্ডিং, বিশ্বকাপ ফাইনালের মোড় ঘোরানো ক্যাচ নিয়ে কী বললেন সূর্যকুমার?
Arabul Islam Gets Bail: জামিন পেলেন আরাবুল ইসলাম
জামিন পেলেন আরাবুল ইসলাম
Kolkata Fire : ধাপার মাঠপুকুরে ইঞ্জিন অয়েল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, এলাকা ঢেকেছে কালো ধোঁয়ায়
ধাপার মাঠপুকুরে ইঞ্জিন অয়েল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, এলাকা ঢেকেছে কালো ধোঁয়ায়
Kolkata Lynching : মা-ছেলেকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মার 'তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী'র, নৃশংসতার ছবি এবার আড়িয়াদহে
মা-ছেলেকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মার 'তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী'র, নৃশংসতার ছবি এবার আড়িয়াদহে
Property Buying Cost: বাড়ি-ফ্ল্যাটের দাম আরও বাড়বে রাজ্যে, পকেটে টান পড়বে আপনারও ?
বাড়ি-ফ্ল্যাটের দাম আরও বাড়বে রাজ্যে, পকেটে টান পড়বে আপনারও ?
Gold Rate Today: মঙ্গলের বাজারে সস্তায় পাবেন সোনা ? আজ কিনলে কত হবে খরচ ? দেখুন রেটচার্ট
মঙ্গলের বাজারে সস্তায় পাবেন সোনা ? আজ কিনলে কত হবে খরচ ? দেখুন রেটচার্ট
India Post GDS Recruitment 2024: ভারতীয় ডাকবিভাগে ৩০০০০ পদে শুরু হবে নিয়োগ, কোন কোন পদে কারা যোগ্য ?
ভারতীয় ডাকবিভাগে ৩০০০০ পদে শুরু হবে নিয়োগ, কোন কোন পদে কারা যোগ্য ?
North Bengal Weather : ভাঙছে পাড়, ঢুকছে ঘরে, উত্তরবঙ্গে ভয়াল চেহারা নদীর, বিপর্যয় সামলাতে নামল সেনা
ভাঙছে পাড়, ঢুকছে ঘরে, উত্তরবঙ্গে ভয়াল চেহারা নদীর, বিপর্যয় সামলাতে নামল সেনা
Embed widget