Alipore Woman Death: প্রথম বিবাহবার্ষিকীর পরই রহস্য মৃ্ত্যু তরুণীর
বিয়ের এক বছর কাটতে না কাটতেই চলে গেলেন রসিকা। মাত্র ২৫ বছর বয়সে। রসিকার বাপেরবাড়ির দাবি, জামাই কুশল আগরওয়াল যে মাদকাসক্ত তা লকডাউনের পরই জানতে পারে মেয়ে। রসিকা প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারধর ও মানসিক নির্যাতন করা হত বলে অভিযোগ। এমনকী রসিকাকে বাপেরবাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য জামাই চাপ দিতেন।
প্রকাশ সিনহা ও প্রবীর চক্রবর্তী, কলকাতা: প্রথম বিবাহবার্ষিকীর কয়েকদিন পরই আলিপুরে তরুণীর রহস্যমৃত্যু। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের জেরে মেয়ে আত্মঘাতী হন বলে অভিযোগ মৃতের বাপেরবাড়ির। মৃত্যুর দু’সপ্তাহ পরও কেন তরুণীর ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন পুলিশ হেফাজতে নেয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিবার।
“আর অত্যাচার সহ্য করতে পারছি না। আর পারছি না।“ বাবাকে পাঠানো কয়েক লাইনের এই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের পরই চিরতরে চলে গেলেন রসিকা জৈন আগরওয়াল। ১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মহত্যা করেন বছর পঁচিশের এই তরুণী। ওই দিন আলিপুরে শ্বশুরবাড়ির বহুতলের নীচ থেকে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
তারপরই সব শেষ। প্রথম বিবাহবার্ষিকীর কয়েক দিনের মধ্যে কী এমন হল যে রসিকাকে চরম সিদ্ধান্ত নিতে হল? মৃত রসিকার বাবা মহেন্দ্র জৈন বলেন, আমাকে মেসেজ করে বলে বাবা আমি ভাল নেই, অত্যাচার করছে।
রাজস্থানের জোধপুরে গিয়ে ওয়েডিং ইভেন্ট। পাঁচতারা হোটেলে ঘটা করে আংটি বদল। গত বছর আলিপুরের দুই শিল্পপতি পরিবারের দুই সন্তানের চার হাত এক হওয়ার এই ছবিজুড়ে রয়েছে ফিল গুড পরিবেশ। ছবিতে হাসিখুশি রসিকাকে দেখা যাচ্ছে নাচতে। সবার সাথে আনন্দ করতে। নতুন জীবন শুরু করার আনন্দে প্রাণখোলা হাসি।
কিন্তু, সেই বিয়ের এক বছর কাটতে না কাটতেই চলে গেলেন রসিকা। মাত্র ২৫ বছর বয়সে। রসিকার বাপেরবাড়ির দাবি, জামাই কুশল আগরওয়াল যে মাদকাসক্ত তা লকডাউনের পরই জানতে পারে মেয়ে। রসিকা প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারধর ও মানসিক নির্যাতন করা হত বলে অভিযোগ। এমনকী রসিকাকে বাপেরবাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য জামাই চাপ দিতেন। মৃত রসিকার মা সঙ্গীতা জৈন বলেন, “রসিকা অনেক দিন ধরে বলত মা কুশল নির্যাতন করত, হাসপাতালে গিয়ে দেখি মেয়ের অবস্থা খারাপ, পুলিশ সত্য সামনে আনুক, জামাই মাদকাসক্ত।“
রসিকার মৃত্যুর পরের দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে রসিকার পরিবার। তারপর থেকে ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও তদন্ত সম্পর্কে কার্যত অন্ধকারে ছিলেন বধূর পরিজনেরা। পুলিশ আসেনি বলে অভিযোগ মৃত রসিকার ভাইয়ের অবশেষে বুধবার রসিকার বাড়িতে আসেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
মৃত গৃহবধূর পরিবারের দাবি, রসিকা তিনটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও একটি নোটপ্যাড ব্যবহার করতেন। কিন্তু ঘটনার পর দু সপ্তাহ কেটে গেলেও পুলিশ তা বাজেয়াপ্ত করেনি। মৃত রসিকার বাবা মহেন্দ্র জৈন বলেন, পুলিশ কী করেছে জানতেই পারছি না, ওরা বলছে যা করার করছি, শনিবার ডিডি ডিপার্টমেন্টে কেস যায়, আমরা ভাবছি একে বের করবে, চিন্তা হল তিনটে মোবাইল ফোন, একটা ল্যাপটপ ও আইপ্যাড ছিল, কিন্তু পাইনি কিছু, ওতে নিশ্চয়ই কিছু লিখে ছিল।
পড়ুয়া হিসেবে খুবই মেধাবী ছিলেন রসিকা। সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে বিবিএ পাস করার পর সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যানেজমেন্ট নিয়ে মাস্টার্স করেন। এর মধ্যেই নিজের পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন রসিকা।
বুধবার রসিকার বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়িতে যায় পুলিশ। বাপেরবাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যে শ্বশুরবাড়ি। মেয়ের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে বারবার শ্বশুরবাড়িতে জানালেও, কাজ হয়নি বলে দাবি রসিকার পরিবারের। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই মাত্র পঁচিশেই ঝরে গেল একটা সম্ভাবনা। যদিও এ বিষয়ে এখনও রসিকার শ্বশুরবাড়ির কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।