Bangladesh Anti-Quota Protests: বঙ্গবন্ধুর হাতে সূচনা, রাজনীতিকরণে অভিযুক্ত হাসিনা, যে কারণে সংরক্ষণ নিয়ে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ
Bangladesh Job Quota: এই আন্দোলনের সঙ্গে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি যোগ রয়েছে।
ঢাকা: সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি পড়শি দেশ বাংলাদেশে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর আজও হামলার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে রবার বুলেট ছুড়ে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার অভিযোগ উঠছে। ছাত্রলিগ, যুবলিগ এবং পুলিশ, আন্দোলনকারীদের উপর ত্রিমুখী আঘাত নেমে আসছে বলে অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে আন্তর্জাতিক মহলও। কিন্তু আন্দোলন হিংসাত্মক আকার ধারণ করল কীভাবে, সংরক্ষণ নিয়ে বিরোধিতাই বা কেন, উঠে এসেছে একাধিক কারণ। (Bangladesh Anti-Quota Protests)
এই আন্দোলনের সঙ্গে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি যোগ রয়েছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ নীতি চালু করেন, যার আওতায় সরকারি চাকরিতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পরিবারকে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সংরক্ষণের অন্তর্ভুক্ত করা হয় দেশের অন্য নাগরিকদেরও। মহিলা এবং অনগ্রসর শ্রেণির জন্য ১০ শতাংশ করে সংরক্ষণ রয়েছে। জনজাতি সম্প্রদায়ের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে ১ শতাংশ সংরক্ষণ। অর্থাৎ ৫৬ শতাংশ পদই সংরক্ষিত, জেনারেল ক্যাটেগরির জন্য পড়ে থাকে ৪৪ শতাংশ। (Bangladesh Job Quota)
হিসেব বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে ৩০০০ শূন্যপদে নিয়োগ হয়। সেই তুলনায় প্রায় ৪ লক্ষ পড়ুয়া স্নাতক হন। ফলে সরকারি চাকরির আকাল রয়েছে। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পরিবারের জন্য সংরক্ষিত ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ নিয়েই রোষ তৈরি হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালেও সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে তেতে ওঠে বাংলাদেশ। অভিযোগ ওঠে, শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগ যেহেতু মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তাই দলের অনুগতরাই সংরক্ষণের সুবিধা ভোগ করেন। এতে মেধার প্রতি সুবিচার হয় না। মোট সংরক্ষণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
সেই সময় চার মাস ধরে চলে আন্দোলন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাই সাময়িক সংরক্ষণ বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু গত ৫ জুন হাইকোর্ট সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ ফেরানোর পক্ষে রায় দেয়। সংরক্ষণের নামে বৈষম্য চলবে না বলে এবার সরব হন আন্দোলনকারীরা। দেশের সংবিধানে অনগ্রসর শ্রেণি বলে চিহ্নিতদেরই সংরক্ষণের আওতায় আনা যাবে বলে দাবি জানান। সবমিলিয়ে সংরক্ষণকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে বলেন, যার আওতায় জনজাতি এবং প্রতিবন্দী মানুষজনই সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন।
প্রথম দিকে আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু গত কয়েক দিনে আন্দোলন হিংসাত্মক আকার ধারণ করেছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই আন্দোলন করছিলেন। কিন্তু আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র লিগই প্রথম হামলা চালায়, যাতে সহযোগিতা করে পুলিশও। একাধিক জায়গায় পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষ বাধে আন্দোলনকারীদের। পুলিশের বিরুদ্ধে নির্বিচারে রবার বুলেট চালানোর অভিযোগ ওঠে। আন্দোলনকারী ছাত্রদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় বলেও অভিযোগ। বুধবার মোট ছ'জনের মৃত্যুর খবর আসে, যাঁদের মধ্যে ছিলেন তিন ছাত্র। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া এক ছাত্রের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বৃহস্পতিবার আরও এক ছাত্রের মৃত্যুর খবর উঠে আসছে। নিখোঁজও রয়েছেন কয়েক জন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংঘর্ষের খবর উঠে আসছে। বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সমস্ত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বৃহ্স্পতিবার হায়ার সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট পরীক্ষা ছিল, তাও বাতিল হয়েছে। জায়গায় জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাহিনী। এমন পরিস্থিতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, আমেরিকা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্পাদকের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছেন ছাত্রদের অধিকার রক্ষা করতে এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যার সমাধান বের করতে। কিন্তু গতকাল আন্দোলন নিয়ে হাসিনা যে মন্তব্য করেছেন, তা কার্যতই আগুনে ঘি ঢেলেছে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের ছেলেমেয়েরা কি মেধাবী নন? শুধুমাত্র রাজাকারদের ছেলেমেয়েরাই কি মেধাবী?"
'রাজাকার' কথাটি ঘিরে নতুন করে তেতে উঠেছে পরিস্থিতি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিলেন যাঁরা, তাঁদের বিশ্বাসঘাতকতা বোঝাতেই ওই শব্দটির ব্যবহারের চল রয়েছে বাংলাদেশে। শব্দটির আসল অর্থ স্বেচ্ছাসেবী। ১৯৭১ সালে জেনারেল টিক্কা খান তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামাবাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে আধা সামরিক বাহিনী গড়েন। মুক্তিযুদ্ধ দমনে ওই বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়। ওই বাহিনীর বিরুদ্ধে নারী-শিশুদের উপর নিদারুণ নির্যাতন চালানো থেকে নিরীহ বাঙালিদের কচুকাটা করার অভিযোগ ওঠে। তাই হাসিনা তাঁদের 'রাজাকার' বলে উল্লেখ করায় ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। এই মুহূর্তে চারিদিকে স্লোগান উঠছে, 'চাইতে গেলাম অধিকার, বনে গেলাম রাজাকার'। 'তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার' ধ্বনিও শোনা যাচ্ছে।
এদিন সকালেও মাদারিহাট, রাজশাহি, ঢাবি, মিরপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সংঘর্ষের খবর উঠে আসছে। ময়মনসিংহে জায়গায় জায়গায় চলছে অবরোধ-বিক্ষোভ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বন্ধ রয়েছে। মহাখালিতে রেল অবরোধ চলছে। ঢাকার সঙ্গে কার্যতই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে গোটা দেশের। বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর ঢুকে পুলিশ রবার বুলেট এবং ছররা গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ। মাদারিহাটে সংঘর্ষ চলাকালীন বেশ কয়েক জন লেকে পড়ে যান বলে জানা গিয়েছে। সেখানে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। দু'জন নিখোঁজ রয়েছেন।