আক্রান্তদের সেবায় পিছিয়ে দেন বিয়ে, সেই করোনাভাইরাসই কাড়ল তরুণ চিনা চিকিৎসকের প্রাণ
চিনা নতুন বছরেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল শ্বাসজনিত রোগের বিশেষজ্ঞ পেং-এর
বেজিং: করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা করবেন বলে নিজের বিয়ে পিছিয়ে দিয়েছিলেন। সেই করোনাই কেড়ে নিল প্রাণ। মারণ ভাইরাসের উৎসস্থল উহান শহরে অকালেই চলে যেতে হল ২৯ বছর বয়সী চিনা চিকিৎসককে।
চিনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার মারা যান পেং ইনহুয়া। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি উহানের জিয়াংশিয়া জেলার সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।
জানা গিয়েছে, চিনা নতুন বছরেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল শ্বাসজনিত রোগের বিশেষজ্ঞ পেং-এর। কিন্তু, আক্রান্তদের চিকিৎসার তাগিদে তিনি সেই বিয়ে পিছিয়ে দিয়েছিলেন।
গত ২৫ তারিখ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় পেংকে। পরে, অবস্থার অবনতি হওয়ায় পাঠানো হয় উহান জিনিনতান হাসপাতালে। সেখানেই বৃহস্পতিবার মারা যান তরুণ চিকিৎসক।
চিনা সংবাদমাধ্যম এই তরুণ চিকিৎসককে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে লিখেছে, পেং নিজের বিয়ের আমন্ত্রণপত্র পাঠাতে পারলেন না। সেগুলি আজও তাঁর দফতরের দেরাজে রয়ে গিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত চিনে করোনাভাইরাসের শিকার হয়েছেন ৮ জন চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী। এর আগে, মঙ্গলবার মারা গিয়েছেন উহান শহরের উচাং হাসপাতালের অধিকর্তা। এর আগে, চলতি মাসের গোড়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং।
৩৪ বছরের লি-এর মৃত্যু নিয়ে গোটা চিনে শোরগোল পড়ে যায়। কারণ, লি হলেন সেই চিকিৎসক যিনি এই ভাইরাস সম্পর্কে চিন প্রশাসনকে সবার আগে সতর্ক করেছিলেন। তাও সেই ডিসেম্বরে-- যখন এই ভাইরাস মারণ আকার ধারন করেনি।
কিন্তু চিনা প্রশাসন এই চক্ষু-বিশেষজ্ঞের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টে শাস্তি দেয়। ফলে, লি-এর মৃত্যুর পর দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে গভীর শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই ভাইরাস বয়স্কদের জন্য বেশি ক্ষতিকারক। চিনে যতজন মারা গিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই বয়স্ক। ফলে, একজন তরুণের এই ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হচ্ছে, এমন নজির খুব কম। যদিও, সম্প্রতি, করোনাভাইরাসে এক সদ্যোজাতের মৃত্যুর খবর মিলেছে। জানা যায়, জন্মের ৩০-ঘণ্টার মধ্যেই ওই শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
পেং-এর মৃত্যুতে শোকের ছায়া চিনের চিকিৎসামহলে। দেশের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংগঠনকে নির্দেশ দিয়েছে পেংকে শহিদের সম্মান দিতে। পাশাপাশি, তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং সমস্যার সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার।
পেং-এর আত্মত্যাগের গল্পগাথা এবং যে সকল চিকিৎসক যাঁরা এই মারণ ভাইরাসকে ঠেকাতে এবং আক্রান্তদের সেবা করতে এগিয়ে আসছেন—তাঁদের বীরত্বের কাহিনী চারদিকে ছড়িয়ে দিতেও উদ্যোগী প্রশাসন।
এখনও পর্যন্ত চিনে ২ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি। চিনা প্রশাসন জানিয়েছে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৭০০ জন চিকিৎসক ও চিকিৎসা-কর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অধিকাংশ হুবেই প্রদেশে—যা এই ভাইরাসের উৎসস্থল বলে প্রমাণিত।