Digha Temple Controversy : দিঘায় জগন্নাথ মূর্তি গড়তে পুরীর নবকলেবরের কাঠ? কেনই বা ধাম শব্দের ব্যবহার? চরমে বিতর্ক, তদন্তের নির্দেশ
'একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না', দিঘা-মন্দির বিতর্কে পুরী জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষকে তদন্তের নির্দেশ দিল ওড়িশা সরকার।

ভুবনেশ্বর : বুধবার অক্ষয় তৃতীয়ায়, দিঘায় জগন্নাথধামের দ্বারোদ্ঘাটন করলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা ঘিরে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। নক্ষত্রখচিত অনুষ্ঠান, ভক্তের ঢল । পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মতো দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে ধ্বজা তোলা হয়। এক্কেবারে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি এখানকার স্থাপত্য। জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন উপলক্ষ্য়ে পুরীর মন্দির থেকে গিয়েছিলেন রাজেশ দ্বৈতাপতি। আর এই মন্দির নিয়েই ওড়িশায় শুরু বিতর্ক। অভিযোগ নিয়ে ওড়িশার আইনমন্ত্রী দিলেন তদন্তের নির্দেশও।
কিন্তু কী এমন ঘটল ? আসলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নবনির্মিত দীঘা মন্দিরকে 'জগন্নাথ ধাম' হিসেবে চিত্রিত করা এবং সেখানে প্রতিমা নির্মাণে পুরীর নবকলেবরের অতিরিক্ত কাঠ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। আর তাই নিয়েই যত বিতর্ক। এবার এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলেন ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন । শুক্রবার শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসন (এসজেটিএ)-কে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে বললেন তিনি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ, পুরীর কিছু সেবায়েত দিঘা মন্দিরের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মন্দিরের জন্য প্রতিমা তৈরিতে ২০১৫ সালের 'নবকালেবর' -এর থেকে অবশিষ্ট 'নিম' কাঠও ব্যবহার করেছিলেন।
পুরীর মন্দিরে'নবকালেবর' হল প্রতি ১২ বা ১৯ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠান। পুরীর মন্দিরে ভগবান বলভদ্র, দেবী সুভদ্রা এবং শ্রী জগন্নাথের মূর্তি নির্দিষ্ট কয়েক বছর অন্তর নতুন করে তৈরি হয়। সেই মূর্তি তৈরিতে ব্যবহৃত কাঠের উৎস নিয়েও রয়েছে নানা বিশ্বাস, আস্থা। এবার সেই কাঠের অবশিষ্ট নাকি ব্যবহার হয়েছে বাংলার জগন্নাথ মন্দিরে। এছাড়াও পুরীর মন্দিরের পুরোহিত, ভক্ত, পণ্ডিত এবং সেবায়েতদের কেউ কেউ দিঘা মন্দির থেকে "জগন্নাথ ধাম" তকমাটি অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। এই দুটি বিষয় নিয়ে প্রতিবেশী রাজ্যজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় মন্ত্রী হরিচন্দন এসজেটিএ-র প্রধান কর্ণধার অরবিন্দ পাধীকে একটি চিঠি লিখে সমগ্র ঘটনার অভ্যন্তরীণ তদন্ত করতে এবং সত্য জনসাধারণের সামনে তুলে ধরার আবেদন করেন।
"যদি কেউ এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন অথবা জেনেশুনে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন, তাহলে মন্দিরের প্রধান প্রশাসক রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে পারেন" বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মন্ত্রী। তিনি আরও লেখেন, গত কয়েকদিন ধরে সমস্ত সংবাদমাধ্যমে ভগবান জগন্নাথের মন্দির এবং এর শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী তথ্য প্রচারিত হচ্ছে। দিঘার একটি মন্দিরের নাম 'জগন্নাথ ধাম' রাখার বিষয়ে আলোচনা চলছে। পুরীর কিছু সেবায়েত দিঘা মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন । পুরীর নবকলেবর উৎসবের অবশিষ্ট এবং উদ্বৃত্ত কাঠ দিয়ে মূর্তি তৈরি করছেন বলে খবর হচ্ছে। চিঠিতে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন মন্ত্রী। হরিচন্দন বলেন , সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলি ওড়িশার ৪.৫ কোটি মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।
এ বিষয়ে 'দ্বৈতাপতি নিযোগ'-এর সম্পাদক রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্র বা রাজেশ দ্বৈতাপতি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে আমি দিঘা মন্দিরে অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। আমি পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করেছি। কিন্তু আমি কখনও বলিনি যে পুরীর মন্দিরের কাঠ দিঘায় প্রতিমা তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল"। পুরীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে, দাসমহাপাত্র বলেন, তিনি পুরী থেকে কাঠের মূর্তি নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু পুরী মন্দিরের অবশিষ্ট 'নিম' কাঠ ব্যবহার করেননি। তিনি এও দাবি করেন, "আমি বাংলা ভাষার কোনও টেলিভিশন চ্যানেলের সাথেও এ বিষয়ে কথা বলিনি।" এদিকে আবার ওড়িশার স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে দেখানো হয়েছে যে, দাশমহাপাত্র একটি বাংলা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিনি ২০১৫ সালের নবকলেবরের অবশিষ্ট নিম কাঠ ব্যবহার করে দিঘা মন্দিরের প্রতিমা তৈরি করেছেন। কিন্তু সে-কথা এখন মানতে নারাজ তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে দাসমহাপাত্র বলেন, "আমিও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে দিঘা জগন্নাথ মন্দির থেকে 'ধাম' শব্দটি সরিয়ে ফেলার অনুরোধ করছি। আমি ওড়িশা সরকার এবং শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসনকে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করার জন্যও অনুরোধ করছি।" তিনি বলেন যে তার জ্ঞান অনুসারে, পুরীই একমাত্র স্থান যেখানে 'জগন্নাথ ধাম' বলা হয়।






















