Gorkha Regiment: গোর্খা রেজিমেন্টের বিকল্প রাশিয়া-ইউক্রেন! গলার কাঁটা ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প, ভারত বিমুখ নেপালি তরুণরা
Indian Army: ভারতীয় সেনায় নেপালি তরুণদের যোগদানের প্রথা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। ১৮১৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাহিনীর সঙ্গে নেপাল সরকারের সুগৌলি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
নয়াদিল্লি: মৃত্যুভয় নেই একেবারেই। এক খুখরিতেই শক্ত হাতে মোকাবিলা করেন শত্রুপক্ষের (Indian Army)। দশকের পর দশক ধরে এমনই সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে এসেছে ভারতীয় সেনার গোর্খা রেজিমেন্ট। ভারতীয় সেনায় নেপালি সৈনিকদের যে রেজিমেন্ট, সেটিই গোর্খা রেজিমেন্ট হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার আগে থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবিচ্ছেদ্য অংশ থেকেছে এই গোর্খা রেজিমেন্ট। কিন্তু অতি সম্প্রতি সেই গোর্খা সৈনিকরা ভারত বিমুখ হয়ে পড়তে শুরু করেছেন। নিশ্চিত রোজগারের জন্য এ যাবৎ ভারতীয় সেনা তাঁদের ভরসার জায়গা হলেও, এই মুহূর্তে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দিকেই তাঁরা ক্রমশ ঝুঁকতে শুরু করেছেন। কোনও বাছ-বিচার নেই, রাশিয়া এবং ইউক্রেন, দুই দেশের হয়েই যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত তাঁরা (Russia Ukraine War)। সেই নিয়ে নেপাল সরকারের তরফে বার বার সতর্ক করা হলেও, কানে তুলছেন না নেপালের তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশ মানুষ। এর নেপথ্যে ভারতের বিতর্কিত 'অগ্নিবীর' প্রকল্পকেই দায়ী করা হচ্ছে। (Gorkha Regiment)
ভারতীয় সেনায় নেপালি তরুণদের যোগদানের প্রথা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। ১৮১৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাহিনীর সঙ্গে নেপাল সরকারের সুগৌলি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। স্বাধীনতার পরেও সেই রীতিতে ছেদ পড়েনি। বরং ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ব্রিটেন, নেপাল এবং ভারতের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার আওতায় ভারতীয় সেনায় ছ'টি, ব্রিটিশ সেনায় চারটি গোর্খা রেজিমেন্ট রাখতে সম্মত হয় সব পক্ষ। পরবর্তী কালে আরও একটি রেজিমেন্ট যুক্ত করে ভারত, অর্থাৎ ভারতীয় সেনায় গোর্খা রেজিমেন্টের সংখ্যা বেড়ে হয় সাতটি। কেন্দ্রীয় সরকারের 'অগ্নিবীর' প্রকল্প চালু হওয়ার আগে, প্রতি বছর নেপাল থেকে গোর্খা রেজিমেন্টে ১৪০০ সৈনিক নিয়োগ করা হতো। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভারের গোর্খা রেজিমেন্টে নেপালি সৈনিকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার।
কিন্তু কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার সেনাবাহিনীতে নিযুক্তির স্বল্পমেয়াদি 'অগ্নিবীর' প্রকল্প চালু করায়, এই মুহূর্তে ভারত-বিমুখ হয়ে পড়েছে নেপালি তরুণরা। কারণ 'অগ্নিবীর' প্রকল্পে আধিকারিক স্তরের নীচে যাঁদের নিয়োগ করা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে ৭৫ শতাংশের নিয়োগই হচ্ছে মাত্র চার বছরের জন্য। এক্ষেত্রে স্থায়ী চাকরির নিশ্চয়তা, পেনশন এবং স্বাস্থ্য-সহ অন্য সুযোগ-সুবিধা থাকছে না, যা এতদিন সাধারণত চাকরিতে ঢুকলেই পাওয়া যেত। ভারতীয় হোন বা নেপালি, সকলের জন্যই একই নীতি আনা হয়েছে 'অগ্নিবীর' প্রকল্পে। 'অগ্নিবীর' হিসেবে চার বছর সময় পেরোলে, আধআ সামরিক বাহিনীতে যোগ্যদের কাজের সুযোগ যাও বা রয়েছে, নেপালিদের ক্ষেত্রে তা নেই। তার জন্য়ই নেপালি তরুণরা ভারত বিমুখ হয়ে পড়ছেন। নেপালের বিশিষ্ট লেখক টিম গুরুং সেই নিয়ে লেখাসলেখিও করেছেন। তাঁর মতে, মাত্র চার বছর পর চার বছর পর যদি নেপালের যুবকদের বাড়ি ফিরে যেতে হয়, ফের নতুন করে জীবন শুরু করতে হয়, তাহলে ভারতীয় সেনায় যোগ দেওয়ার কথা তাঁরা না ভাবতেই পারেন। এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করেছে নেপাল সরকারও। তাদের দাবি ১৯৪৭ সালের চুক্তিতে 'অগ্নিবীর'-এর মতো স্বল্পমেয়াদি প্রকল্পের কথা বলা ছিল না। তাই বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা উচিত ভারত সরকারের। ততদিন পর্যন্ত ভারতীয় গোর্খা রেজিমেন্টে নেপালিদের পাঠানোও আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন: ISRO: আকাশ ছুঁয়ে দেখার অভীপ্সা, মহাকাশে এবার মানুষ পাঠাবে ISRO, অগাস্ট-সেপ্টেম্বরেই শুরু ট্রায়াল
এমন পরিস্থিতিতে নেপালি তরুণরা বিকল্প উপায় খুঁজছেন। বিগত কয়েক মাসে নেপাল থেকে কয়েকশো তরুণ রুশ বাহিনীতে যোগদান করেছেন বলে জানা গিয়েছে। শুধু রুশ সেনাই নয়, রুশ মদতপুষ্ট ভাড়াটে সৈনিক সংগঠন ওয়াগনার গ্রুপেও যোগ দিয়েছেন অনেকে। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার প্রতিপক্ষ শিবির ইউক্রেনীয় সেনাতেও নেপালি তরুণদের যোগদানের হার বেড়েছে। শুধু তাই নয়, চিনও পিপলস লিবারেশন আর্মিতে নেপালি তরুণদের নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নেপাল সরকার যদিও সেই নিয়ে সতর্ক করেছে দেশের যুবসমাজকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে সকলকে। শুধু তাই নয়, যে দেশের সঙ্গে এমন কোনও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি নেপাল সরকারের, সেই দেশের হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়া এড়াতে বলা হয়েছে। অগাস্ট মাসের শুরুতে সেই নিয়ে বিবৃতিও দেন নেপালের বিদেশমন্ত্রী। কিন্তু বেকারত্ব এবং দারিদ্র্য নেপালি যুবকদের বিপজ্জনক জায়গায় যেতে বাধ্য করছে। দেশের এই মুহূর্তে কর্মক্ষমদের বেকারত্বের হার ১১ শতাংশ। তাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দুই শিবিরেই তাদের যোগদান বেড়ে চলেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সৈনিকের সংখ্যা বাড়াতে নাগরিকত্ব আইন আরও শিথিল করেছেন তিনি। এক বছরের জন্য রুশ সেনায় থাকলেই নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে। রুশ ভাষা জানাও আর বাধ্যতামূলক নেই। তাই নেপালি তরুণরাও বিনা বাক্যব্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।
নেপালি তরুণদের এহেন ভারত বিমুখ হয়ে পড়া দিল্লির জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের বলে মনে করছেন কূটনৈতিক এবং সামরিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেনে পাকাপাকি ভাবে না থেকে যদি নেপালে ফিরে আসেন ওই তরুণরা, আগামী দিনে ভারতের বিরুদ্ধে তাঁদের কাজে লাগানো হতে পারে। বিশেষ করে চিন যেভাবে ভারতকে কোণঠাসা করতে বদ্ধপরিকর, তাতে বিকল্প ভাবনার প্রযোজন রয়েছে অবশ্যই। এখনও পর্যন্ত কয়েকশো নেপালি তরুণই রুশ এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীতে যোগদান করেছেন। আগামী দিনে এই সংখ্যা বাড়তেও পারে। আবার তিব্বত থেকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের পাশাপাশি, নেপালিদের নিয়োগেও আগ্রহী চিন। তাই সবদিক থেকেই ভারতের জন্য বিষয়টি অশনি সঙ্কেত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।