Natural Disasters 2021: বছরভর ধ্বংসলীলা প্রকৃতির, ফিরে দেখা ২০২১
Natural Disasters 2021: অতিমারিতে গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ২০২১-এ ঘূর্ণিঝড়, হিমবাহ ধস, অতিবৃষ্টি, বন্যা, ভূমিকম্প—সব কিছুর সাক্ষী থেকেছে দেশ।
![Natural Disasters 2021: বছরভর ধ্বংসলীলা প্রকৃতির, ফিরে দেখা ২০২১ Year Ender 2021 biggest Natural Disasters that shook the India this year Natural Disasters 2021: বছরভর ধ্বংসলীলা প্রকৃতির, ফিরে দেখা ২০২১](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2021/12/22/c37d807a7c4b6ad41aa87a07501f5561_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
বিগত দু’বছর ধরে করোনার সঙ্গে যুঝছে গোটা দেশ। সেই অবস্থায় গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ২০২১-এ ঘূর্ণিঝড়, হিমবাহ ধস, অতিবৃষ্টি, বন্যা, ভূমিকম্প—সব কিছুর সাক্ষী থেকেছে দেশ। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনকেই এর জন্য দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ যত বাড়বে, ততই বেশি করে প্রকৃতির রোষ আছড়ে পড়বে বলে দাবি তাঁদের।
নতুন বছরে পা রাখার আগে তাই বিগত এক বছর ধরে প্রকৃতির তাণ্ডব দেখে নেওয়া যাক—
বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ড।—ফাইল চিত্র।
অতিবৃষ্টি এবং বন্যার তাণ্ডব
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতির খামখেয়ালি আচরণ বাড়বে বলে দীর্ঘ দিন ধরেই আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন বিজ্ঞানীরা।গত কয়েক বছরে অক্টোবর-নভেম্বরে অতিবৃষ্টি এবং বন্যায় সেই আশঙ্কাই সত্য হয়ে ধরা দিচ্ছে।
• উত্তরাখণ্ড-ফেব্রুয়ারি মাসে ঝুলন্ত হিমবাহ ভেঙে প্রথমে তুষার ধস নামে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায়। তার জেরে আছড়ে পড়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়ে হড়পা বান। প্রবল জলের তোড়ে ঋষিগঙ্গা নদীর উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প কার্যত ভেসে যায়। ভেসে যান সেখানে কর্মরত ২০০ কর্মী। তাঁদের মধ্য থেকে মাত্র ৬০ জনের দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এর পর অক্টোবরে ভারী বৃষ্টিতে ফের হড়পা বান দেখা দেয় রাজ্যে। জায়গায় জায়গায় ধস নামে। তাতে পর্বত অভিযাত্রী-সহ কমপক্ষে ৫৪ জন মারা যান।
ওয়াদিয়া ইনস্টিটউট অব হিমালয়ান জিওলজি-র বিজ্ঞানীদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের অন্তর্ত হিমবাহ প্রতি দশকে ৩০ থেকে ৬০ মিটার করে ক্ষয় হচ্ছে। ২০১৩ সালে এই হিমবাহ ভেঙে পড়েই হড়পা বান দেখা দিয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। যে বার মৃত্যুসংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
• মহারাষ্ট্র-২২ জুলাই থেকে পশ্চিমের জেলাগুলিতে একনাগাড়ে বৃষ্টি শুরু হয়। তার জেরে ধস নামে জায়গায় জায়গায়। মহাবালেশ্বরে এক দিনে ৬০ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়। বিগত ৪০ বছরের ইতিহাসে এ বছরই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় মহারাষ্ট্রে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে এবং ধসে চাপা পড়ে প্রায় ২৫০ মানুষ প্রাণ হারান। খোঁজ পাওয়ানি ১০০-র বেশি মানুষের।
বানভাসি কেরল।—ফাইল চিত্র।
• কেরল-১২ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত একনাগাড়ে ভারী বৃষ্টি চলে কেরলে। তাতে উপচে পড়ে নদী-নালা। এক গ্রামের সঙ্গে অন্য গ্রামের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে, বাড়ি ভেঙে পড়ে কেরলে ৪২ জন মারা যান, এর মধ্যে পাঁচ শিশুও ছিল। লাগাতার বৃষ্টিতে ২১৭টি বাড়ি ভেঙে পড়ে।
• তামিলনাড়ু-আবহাওয়া দফতর সতর্ক করেছিল আগেই। কিন্তু এত বড় আকারে বিপর্যয় নেমে আসবে তা আঁচ করা যায়নি। নভেম্বরের শুরুতে অকাল বর্ষণের জেরে বানভাসি অবস্থা হয় তামিলনাড়ুর। সবমিলিয়ে ৪১ জন মানুষ প্রাণ হারান। ৫৩৮ কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাস্তাঘাট, সেতুও। ঘরছাড়া হন প্রায় ১১০০ মানুষ।
ঘূর্ণিঝড়ের দাপট
বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগর তীরবর্তী অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ নতুন কিছু নয়। কিন্তু আগের তুলনায় ইদানীং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে দেখা গিয়েছে ভারতীয় ভূখণ্ডে। উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা বাড়াতেই একের পর এক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
• ঘূর্ণিঝড় তকতে-আরব সাগর থেকে ১৮ মে গুজরাত উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় তকতে। ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটার গতিতে এগোতে থাকে। তার জেরে প্রায় ২ লক্ষ মানুষকে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
তকতের প্রভাব পড়ে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, গোয়া, কেরল এ লক্ষদ্বীপেও। মুম্বইয়ে ১১৪ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে দেখা যায়। এর প্রভাবে মুম্বই উপকূলে একটি প্রমোদতরী ডুবে যায়। জলে ঝাঁপিয়ে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করেন যাত্রীরা। প্রমোদতরীতে ২৬১ জন সওয়ার ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। পশ্চিম উপকূলের সব রাজ্য মিলিয়ে ১৭৪ জন মারা যান। ৮০ জনের দেহই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ইয়াসের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়ে যায় বাংলা। —ফাইল চিত্র।
• ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-২৩ মে বঙ্গোপসাগরে প্রথম নিম্নচাপ তৈরির খবর জানায় আবহাওয়া বিভাগ। ২৬ মে ওড়িশায় আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। তার তীব্র প্রভাব পড়ে বাংলাতেও। পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হুগলি, কলকাতা, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সঙ্গে ঘণ্টায় প্রায় ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া। তাতে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ১ হাজার ১০০ গ্রাম।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় ওড়িশায়, প্রায় ৬১০ কোটি টাকার। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যের মোট ১.১৬ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রায় ২ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশেও প্রভাব পড়ে ইয়াসের। দুই দেশ মিলিয়ে ২০ জন প্রাণ হারান।
• ঘূর্ণিঝড় গুলাব-২৬ সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় গুলাব। তার পর শক্তি হারালেও, ব্যাপর ক্ষয়ক্ষতি হয়। সমুদ্র উপকূল থেকে ৪৬ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। মোট ৩৯ জন প্রাণ হারান। মহারাষ্ট্রেও মারা যান ১১ জন। মারাঠাওয়াড়ে ঝড়ে একটি বাস উড়ে গিয়েই মৃত্যু হয় ১০ জনের।
ভয়াল ভূমিকম্প
• ২৮ এপ্রিল ৬.৪ তীব্রতায় কেঁপে ওঠে অসম। রাত ১২টা থেকে পর পর ছ’বার কম্পন অনুভূত হয়। তাতে ২ জন মারা যান। জখম হন কমপক্ষে ১২ জন। গুয়াহাটি থেকে ১৪০ কিলোমিটার উত্তরে ভূর্গভের ৩৪ কিলোমিটার গভীরে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি। কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গেও কম্পন অনুভূত হয়।
বজ্রাহতের বিভীষিকা হয়ে ধরা দেয় একাধিক রাজ্যে। —ফাইল চিত্র।
বজ্রহতের বিভীষিকা
• জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে ঋতুর প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার অন্যতম উদাহরণ হল সাম্প্রতিক কালে বজ্রপাতের ঘটনা বেড়ে যাওয়া। এ বছর জুলাই মাসেই শুধু রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ মিলিয়ে বজ্রপাতে কমপক্ষে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়। তার আগে, মে মাসে অসমে বজ্রপাতে ১৮ হাতির মৃত্যু হয়। জুন মাসে মুর্শিদাবাদ, হুগলি, বাঁকুড়া, নদিয়া, পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে বাজ পড়ে এক দিনে ২৭ জন মারা যান। গত এক বছরে বজ্রপাতের হার ৩৪ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। এর জন্য উষ্ণায়নকেই দায়ী করছেন তাঁরা।
উষ্ণায়নের চোখ রাঙানি
• গত এক দশকে প্রতি বছর তাপপ্রবাহের সাক্ষী থেকেছে ভারত। তাপমাত্রা ৫০ ছুঁয়ে ফেলাও এখন আর বিরল নয়। ১৯৭১ থেকে ভারতে তাপপ্রবাহে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছে বলে দাবি পরিবেশবিদদের। এর মধ্যে ২০১০ থেকে এ বছর জুলাই পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ৬ হাজার ৫০০ জন।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)