ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা: আইএসআই-যোগের হদিস, ধৃত ৩ সন্দেহভাজন, বিহারে এনআইএ দল
নয়াদিল্লি ও পটনা: কানপুরে ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় ধৃত তিন সন্দেহভাজনের সঙ্গে আইএসআই-যোগের হদিশ মিলতেই নড়েচড়ে বসল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ২ সদস্যের এনআইএ দল। একইসঙ্গে, বিহার সরকার এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলির থেকেও একটি রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সূত্রের খবর, পাক গুপ্তচর সংস্থার নেপাল ও দুবাই মডিউল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল কি না তার হদিস পাওয়ার চেষ্টা চালাবে এনআইএ। পাশাপাশি, ধৃতদের আর কোনও অন্য চক্রান্তের ছক ছিল কি না, সেই বৃহৎ চক্রান্তের খোঁজও করবে তদন্তকারী দল। বর্তমানে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল ধৃতদের জেরা করছে। যদি প্রমাণিত হয় তাহলে ভারতবর্ষে এটিই হবে আইএসআই-এর মদতে হওয়া প্রথম ট্রেন বেলাইনের ঘটনা। জানা গিয়েছে, নেপাল ও ভারতে আইএসআই-এর গুপ্তচরদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ‘র’-এর থেকে চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। উল্লেখ্য, গত ২৮ ডিসেম্বর কানপুরের ৭০ কিমি দূরে রুরার কাছে আজমেঢ়-শিয়ালদহ এক্সপ্রেসের ১৪টি কোচ লাইনচ্যূত হয়। এই দুর্ঘটনায় কারোর মৃত্য না হলেও ৪৪ জন যাত্রী জখম হন। এর আগে গত ২০ নভেম্বর ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেস কানপুরের কাছেই লাইনচ্যূত হয়। এই ঘটনায় ১৫০ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। গত ১ অক্টোবর ঘোরাসাহানে রেললাইনে শক্তিশালী আইইডি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সেটি নিষ্ক্রিয় করে। ঘোরাসাহানের ঘটনার তদন্তে নেমে গতকালই বিহারের আদাপুর থেকে তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে বিহার পুলিশ। জানা গিয়েছে, ধৃত তিনজন -- মতি পাসোয়ান, উমাশঙ্কর পটেল ও মুকেশ যাদব দাগী দুষ্কৃতী। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, তারা পাক গুপ্তচর সংস্থার হয়ে কাজ করে। ভারতীয় রেলই তাদের নিশানা। ইনদওর-পটনা এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব চম্পারনের পুলিশ সুপার জীতেন্দ্র রানা। তিনি জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা ভিন দেশের লোকেদের নির্দেশে কাজ করছিল। তারা আইএসআই-এর সঙ্গে তাদের যোগ থাকার কথাও কবুল করেছে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, ব্রজেশ গিরি নামে নেপালের এক বাসিন্দা তাদের নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন পূর্ব চম্পারণে ঘোরাসাহানে বিস্ফোরণে রেললাইন উড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এর জন্য তাদের ৩ লক্ষ টাকাও দেওয়া হয় বলে জেরায় স্বীকার করেছে ধৃতরা। পুলিশের দাবি, নেপালি নাগরিক ব্রজেশের সঙ্গে আইএসআই-এর সরাসরি যোগ রয়েছে। জানা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে মোতি পাসোয়ান কানপুর রেল দুর্ঘটনায় পাক গুপ্তচর সংস্থার যোগসাজশের কথা স্বীকার করেছে। মোতি জানিয়েছে, সে ও অন্যান্য কয়েকজন মিলে কানপুরে রেল দুর্ঘটনা ঘটায়। মোতির দুই শাগরেদ জুবের ও জিয়াতুল্লাকে ইতিমধ্যেই দিল্লি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেরায় তারা জানিয়েছে, ব্রজেশ কিশোর গিরি নামে নেপালের এক বাসিন্দা তাদের নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন পূর্ব চম্পারণে ঘোরাসাহানে বিস্ফোরণে রেললাইন উড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এজন্য আদাপুর গ্রামের দীপক ও অরুণ নামে দুই ব্যক্তিকে ৩ লক্ষ টাকা দেয়। বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে ব্যর্থ হলে গিরি ওই দুজনকে জঙ্গলে গুলি করে হত্যা করে। গিরিকে ইতিমধ্যেই নেপালে গ্রেফতার করা হয়েছে। নেপাল পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গিয়েছে, ভারতে রেললাইন উড়িয়ে দেওয়ার জন্য গিরিকে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়েছিল আইএসআই। এখন ধৃতদের জেরা থেকে আরও ২ জনের নাম জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। তারা হল গজেন্দ্র শর্মা এবং রাকেশ যাদব। এদের খোঁজে জোর তল্লাশি চালানো হচ্ছে।