কেন নোট বাতিল, ব্যাখ্যা চেয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে ১০ প্রশ্ন পিএসি-র
নয়াদিল্লি: ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ধাক্কায় দেশজুড়ে দুর্ভোগের জেরে নানা মহলের সমালোচনার মধ্যেই কংগ্রেস নেতা কে ভি টমাসের নেতৃত্বাধীন প্রশ্নের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) কাঠগড়ায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গর্ভনর উর্জিত প্যাটেল। একটি সর্বভারতীয় সংবাদপত্রের রিপোর্টে প্রকাশ, তাঁকে গত ৩০ ডিসেম্বর নোট বাতিল সংক্রান্ত দশটি প্রশ্ন পাঠিয়ে ২৮ জানুয়ারি তাদের সামনে হাজির হয়ে জবাব, ব্যাখ্যা দিতে বলেছে পিএসি। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত, দেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব, গত দুমাস ধরে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে বাতিল নোট বদল, টাকা তোলা সংক্রান্ত নিয়ম বারবার বদলের ব্যাপারে উর্জিতকে জবাব চাওয়া হয়েছে। ঘটনাচক্রে, তথ্য জানার অধিকার আইনে নোট বাতিল সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে সরকারের রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
উর্জিতের কাছে যে প্রশ্নগুলির জবাব চাওয়া হয়েছে, সেগুলি হল,
১.নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও তার পরিচালন বোর্ড, সরকার তা কার্যকর করেছে মাত্র, সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। আপনি কি তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে একমত?
২. সত্যিই সিদ্ধান্তটা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হয়ে থাকলে ঠিক কবে, কখন তারা ঠিক করল যে, ভারতের ভালর জন্যই নোট বাতিল প্রয়োজন?
৩. রাতারাতি ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নিষিদ্ধ করার পিছনে ঠিক কী যুক্তি ছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের?
৪. রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিজেরই হিসাব, দেশে জাল নোটের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। ভারতের জিডিপির ১২ শতাংশ নগদ, যা জাপান (১৮ শতাংশ), সুইজারল্যান্ডের (১৩ শতাংশ) চেয়ে কম। ভারতে মুদ্রার ৮৬ শতাংশ বড় অঙ্কের নোট, যা চিন ও আমেরিকায় যথাক্রমে ৯০% ও ৮১%। তাহলে এমন কী বিপদ ঘনিয়ে এল যে হঠাত্ নোট বাতিলের জন্য এত ব্যগ্র হয়ে উঠল আরবিআই?
৫. ৮ নভেম্বর যে জরুরি বৈঠক হচ্ছে, তার নোটিস আরবিআই বোর্ড সদস্যদের কবে পাঠানো হয়েছিল? কতক্ষণ সেই বৈঠক হয়েছিল, সেই বৈঠকের কার্যবিবরণী কোথায়?
৬. বৈঠকের পর নোট বাতিলের সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাকে পাঠানো নোটে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছিল যে, সুপারিশ কার্যকর হলে দেশের মুদ্রার ৮৬ শতাংশ অচল হয়ে যাবে? বাতিল নোট ফের বাজারে আনতেই বা কত সময় লাগবে, তাও কি জানিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক?
৭. ধারা ৩ সি (ভি)এর আওতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ২০১৬-র ৮ নভেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার ও সপ্তাহে ২০ হাজার টাকা তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এটিএম থেকেও দৈনিক ২০০০ টাকার বেশি তোলায় বারণ জারি হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোন আইন, ক্ষমতাবলে জনগণের নিজেদের টাকা তোলায় এহেন ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হল? নগদ টাকা তোলায় রেশনিং করার ক্ষমতা কোথা থেকে পেল কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক? এমন কোনও আইন যদি আপনি দেখাতে না পারেন, তবে কেন ক্ষমতা অপব্যবহারের দায়ে আপনার বিচার হবে না, আপনি পদ থেকে অপসারিত হবেন না?
৮. গত ২ মাস ধরে কেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকা তোলা সংক্রান্ত নিয়মবিধিতে হুটহাট এতবার বদল হল? অনুগ্রহ করে ব্যাঙ্কের সেই অফিসারের নাম জানাতে পারেন যিনি টাকা তোলার সময় আঙুলে কালি লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন? কে বিয়ের জন্য টাকা তোলা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির খসড়া বানিয়েছিলেন? যদি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নয়, সরকারই এই খসড়া তৈরি করে থাকে, তবে কি আরবিআই এখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের শাখায় পরিণত হয়েছে?
৯. ঠিক কত অর্থমূল্যের নোট বাতিল হয়েছে, পুরানো নোটে ঠিক কী পরিমাণ অর্থই বা জমা পড়েছে? ৮ নভেম্বর সরকারকে নোট বাতিলের সুপারিশ পাঠানোর সময় কত অর্থমূল্যের নোট বাতিল হতে পারে বলে ধারণা করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক?
১০. কেন তথ্য জানার অধিকার আইনে নোট বাতিল সংক্রান্ত তথ্য জানাতে অস্বীকার করেছে আরবিআই?
শোনা যাচ্ছে, ২৮ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের কয়েকজন শীর্ষ কর্তাকেও তলব করেছে পিএসি। তবে ১ ফেব্রুয়ারি সাধারণ বাজেট পেশ করার ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে মন্ত্রকের ৩ সর্বোচ্চ কর্তা শশীকান্ত দাশ, হাসমুখ আধিয়া ও অঞ্জলি ছিব দুগ্গল আলাদা ভাবে ওইদিনের পরিবর্তে অন্য দিন হাজিরার সময় চেয়েছেন। যদিও পিএসি পরে ঠিক করেছে, একসঙ্গে না ডেকে তিনজনকে আলাদা করে ডেকে পাঠানো হবে।