PM Narendra Modi: দুর্নীতি থেকে সন্ত্রাসবাদ, সংসদে মোদির নিশানায় আগাগোড়া কংগ্রেস আমল
Modi on Congress: মোদির গোটা বক্তব্যজুড়ে ছিল কংগ্রেস। বিভিন্ন ইস্যুতে আগাগোড়া হাতশিবিরকেই নিশানা করলেন মোদি।
নয়াদিল্লি: আদানি শেয়ার ইস্যুতে উত্তাল দেশ। সরগরম সংসদ। তার মধ্যেই বাজেট অধিবেশনে বক্তব্য় রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তার বক্তব্যে কোথাও উঠে এল না আদানি সংক্রান্ত কোনও কথা। বরং মোদির গোটা বক্তব্যজুড়ে ছিল কংগ্রেস। বিভিন্ন ইস্যুতে আগাগোড়া হাতশিবিরকেই নিশানা করলেন মোদি।
আগেরদিনই সংসদে আদানি উত্থানের সঙ্গে মোদি সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। আদানির সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক কী? তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। কিন্তু তার উত্তর অবশ্য মেলেনি। মোদির এদিনের ভাষণে বরং উঠে এল কংগ্রেস আমলের প্রসঙ্গ। UPA আমলে দেশে কী কী দুর্নীতি হয়েছিল, তার তালিকা দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
নিশানায় দুর্নীতি:
মোদি বলেছেন, 'আগে বড় বড় দুর্নীতি থেকে মুক্তি চাইত দেশ। আজ সত্যিই দুর্নীতি থেকে মুক্তি পাচ্ছে দেশ।' ২০০৪ থেকে ২০১৪- এই দশকের প্রসঙ্গ বারবার টেনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই সময় কেন্দ্রে ছিল UPA সরকার। এদিন মোদি বলেন, '২০০৪ থেকে ২০১৪, দশ বছরে দেশের অর্থনীতির হাল ছিল শোচনীয়। সেই সময় দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার দুই অঙ্কে পৌঁছে গিয়েছিল। ২০০৪ থেকে ২০১৪, দেশে সব থেকে বড় দুর্নীতি হয়েছে।' ২জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি, কয়লা কেলেঙ্কারি, কমলওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলে আনেন মোদি। কংগ্রেস আমলে প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মোদি। স্বাধীনতার পরে ওই দশকেই দেশে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে খোঁচা তার।
সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে আক্রমণ:
কাশ্মীর নিয়ে বলতে গিয়েও কংগ্রেসকে বেঁধেন মোদি। এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০০৪ থেকে ২০১৪, কাশ্মীর থেকে উত্তর-পূর্বে শুধু হিংসা আর হিংসা হয়েছে। ইউপিএ জমানায় কেউ সুরক্ষিত ছিলেন না, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, জঙ্গি হামলা হতো। আজ ইউপিএ-র পরিচয়, প্রতিটা সুযোগকে সমস্যায় পরিণত করেছে। আগে দেশে একের পর এক জঙ্গি হামলা হয়েছে। ২০০৮ সালের জঙ্গি হামলা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। আজ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করা হয়।' মোদি সরকারের আমলেই পুলওয়ামায় বড়সড় জঙ্গি হামলা হয়েছিল, তাতে প্রাণ গিয়েছিল একাধিক জওয়ানের। ওই ঘটনায় বিজেপি সরকারকে নিরাপত্তা-প্রশ্নে নিশানা করেছিল কংগ্রেস।
ভোট ব্যাঙ্ক-রেল-বিমানবন্দর:
কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতিরও অভিযোগ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কেন্দ্রের সরকার মধ্যবিত্তের সততাকে বুঝতে পেরেছে। ব্রিটিশরা রেলকে যে অবস্থায় ছেড়ে গিয়েছিল, তারপর খুব বেশি কিছু হয়নি। আগে প্রায় রেল দুর্ঘটনা হত, ট্রেন মানেই ছিল লেট, এখন সেই ছবিটা বদলেছে। ৭০ বছরে ৭০টি বিমানবন্দর হয়েছে, আর গত ৯ বছরে হয়েছে ৭০টি বিমানবন্দর। হতাশায় ডুবে থাকা মানুষের কাছে কোনও আশা করেন না দেশবাসী। একসময় যাঁরা শাসকের বেঞ্চে বসতেন, তাঁরা এখন বিরোধী আসনেও ব্যর্থ।'
কাশ্মীর ইস্যুতেও খোঁচা:
কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ করা হয়েছে মোদির আমলেই। তা নিয়ে বারবার তরজায় জড়িয়েছে শাসক-বিরোধী। এদিন সংসদে বক্তব্য রাখার সময় মোদি বলেন, 'একসময় লাল চকে পতাকা তুলতেও সাহস পেতেন না অনেকে। আমি সন্ত্রাসবাদীদের হুমকি সত্ত্বেও, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, ২৬ জানুয়ারি ঠিক ১১টায় যাব, ক্ষমতা থাকলে আটকে দেখাও। লাল চকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলাম আজ জম্মু-কাশ্মীরেও ঘরে ঘরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয়।'
সব ঠিক থাকলে আগামী বছরেই লোকসভা নির্বাচন। কয়েকদিন আগেই শেষ হয়েছে রাহুল গাঁধীর ভারত জোড়ো যাত্রা। গতকালই সংসদেও সরব হয়েছিলেন রাহুল। সারা দেশে বিজেপি বিরোধী মঞ্চ গড়ে তুলতে ডাক দিয়েছেন রাহুল। নানা আঞ্চলিক বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ার ডাকও দিয়েছেন রাহুল। কংগ্রেসকে ঘিরে বিরোধী শিবির গড়ে উঠবে কিনা তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা রয়েছে। কংগ্রেসকে গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশ্নও রয়েছে একাধিক বিজেপি-বিরোধী দলের তরফে। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি ত্রিপুরায় ভোট প্রচারে গিয়ে আগাগোড়া সিপিএম ও কংগ্রেসকেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন অমিত শাহ। এদিন মোদির নিশানাতেও ছিল কংগ্রেস। তাহলে কী আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কংগ্রেসকেই মূল প্রতিপক্ষ ভেবে ঘর গোছাচ্ছে বিজেপি?