Baby Ariha: প্রবাসে সন্তানের উপর অধিকার হারিয়েছেন, ভারতীয় দম্পতির হয়ে সরব জয়া বচ্চন, তলব করা হল জার্মান দূতকে
German Foster Care: ঘটনাটি ২০২১ সালের। সে বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে জার্মানির শিশু কল্যাণ বিভাগের জিম্মায় রয়েছে আরিহা শাহ (Ariha Shah) নামের ওই শিশুটি।
নয়াদিল্লি: বিদেশে ভারতীয় দম্পতির কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিল। ঘটনাচক্রে একই সময় ওই বিষয় নিয়ে ছবি মুক্তি পেয়েছিল বড়পর্দায়। তাই 'বেবি আরিহা'কে নিয়ে উত্তাল ভারতও (German Foster Care)। তার পর দেড় মাস কেটে গেলেও, বেশিদূর এগোয়নি বিষয়টি। তবে এবার সংসদে 'বেবি আরিহা'কে ভারতে ফেরানোর দাবি তুললেন সাংসদ জয়া বচ্চন। আর তার পরই জার্মান রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে বলে জানাল ভারত। (Baby Ariha)
ঘটনাটি ২০২১ সালের। সে বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে জার্মানির শিশু কল্যাণ বিভাগের জিম্মায় রয়েছে আরিহা শাহ (Ariha Shah) নামের ওই শিশুটি। জার্মান সরকারের হতে আরিহার দায়িত্ব সমর্পণ করে সে দেশের আদালত। অসাবধনতাবশত শিশুটি আঘাতপ্রাপ্ত হয় বলে দাবি শিশুটির মা-বাবা। কিন্তু অভিযুক্ত দম্পতির সেই দাবি খারিজ করে দেয় আদালত। বরং ইচ্ছাকৃত ভাবেই শিশুটিকে আঘাত করা হয়েছিল বলে জানিয়ে দেয় আদালত।
জার্মান আদালতে আবেদন খারিজ হওয়ার পর, এবছরের গোড়ার দিকে ভারত সরকারের দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত দম্পতি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানান। শিশুটিকে ভারতে ফেরাতে ভারত সরকারের সাহায্য প্রার্থনা করেন। সংবাদমাধ্যমে তাঁদের বলতে শোনা গিয়েছিল, "আরিহাকে ১৪০ কোটি ভারতবাসীর হাতে ছেড়ে দিলাম আমরা।"
মাস দেড়েক আগে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও, মাঝে ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সংসদে বিষয়টি নিয়ে সরব হন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া। সংসদের বাইরে আরিহার মাকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, "সকলের সামনে ধারা শাহর কথা তুলে ধরছি আমি, যাঁর মেয়ে দু'বছর ধরে জার্মান সরকারের জিম্মায় রয়েছেন। ভারতীয় সাংসদদের কাছে সাহায্য চাইছেন তিনি। সাংস্কৃতিক পার্থক্যের জন্য শিশুটিকে নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে জার্মান সরকার। বিদেশমন্ত্রী এবং জার্মান দূতাবাসের কাছে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ করছি।"
এর পরই বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, "বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি আমরা। আগেও এ নিয়ে বার বার নিজেদের বক্তব্য তুবলে ধরেছি আমরা। আমরা উদ্বিগ্ন যে, সংস্কৃতিগত পার্থক্যের দরুণ ভারতীয় অধিকার খর্ব হয়েছে ফস্টার হোমে। চলতি সপ্তাহেই জার্মান দূতকে তলব করা হয়েছিল। ওঁকে গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে। শিশুটিকে জার্মানি থেকে ভারতে যত শীঘ্র সম্ভব ফেরানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। জার্মান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ রাখছি আমরা। বিষয়টি নিয়ে চাপ বাড়িয়ে যাব আমরা।" বিদেশমন্ত্রকের তরফের জানানো হয়েছে, জার্মান রাষ্ট্রদূত ফিলিপ একারম্যানকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। শিশুটিকে ভারতে ফিরিয়ে দিতে আর্জি জানানো হয়েছে তাঁকে।
সাত মাস বয়সে আরিহাকে জার্মান যুবকল্যাণ দফতরের হাতে তুলে দেয় সে দেশের আদালত। তার পর থেকে তাদের জিম্মাতেই রয়েছে শিশুটি। আর সন্তানকে ফিরে পেতে মরিয়া লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তার মা-বাবা। ভারতের তরফে সেই নিয়ে লাগাতার তদ্বির করা হচ্ছে জার্মান কর্তৃপক্ষের তরফে। ভারতীয় শিশুটির নিজের ভাষায় কথা বলা ও শেখা, নিজের সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা এবং ব্যক্তিগত ধর্মাচরমের অধিকার রয়েছে বলে ভারতের তরফে জানানো হয়েছে। গত বছর ডিসেম্বরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন জার্মান বিদেশমন্ত্রী আনালেনা বেরবকের সঙ্গেও। কিন্তু আজও মা-বাবার কাছে ফিরতে পারেনি আরিহা।
এর আগে, ভারত সরকারের জনকল্যাণ বিভাগের হাতে আরিহাকে তুলে তুলে দেওয়া হোক বলে আবেদন জানিয়েছিলেন অভিযুক্ত দম্পতি। অসাবধানতায় আঘাত লেগে গিয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা। কিন্তু জার্মান আদালতে তাঁদের সেই আবেদনও গৃহীত হয়নি। বরং ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে আরিহার মাথায় এবং পিঠে যে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় এবং পরবর্তী কালে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার যৌনাঙ্গে যে আঘাতের চিহ্ন মেলে, তার ভিত্তিতে কড়া অবস্থান নেয় জার্মানির আদালত। আদালত জানায়, অভিযুক্ত দম্পতির কাছে মোটেই সুরক্ষিত নয় আরিহা। মা-বাবা ইচ্ছাকৃত ভাবেই তাকে আঘাত করেছে। আঘাত নিয়ে প্রশ্ন করলে, তাঁরা নিজেদের দাবি-দাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি দেখাতে পারেননি এবং বার বার বয়ান বদল করেছেন বলেও জানায় আদালত।