শিশুপাচারকাণ্ড: এবার উঠে এল বিজেপির এক যুব নেতার নাম, জুহি-চন্দনাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা
কলকাতা ও জলপাইগুড়ি: দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের পরামর্শে, প্রভাবশালী যোগের ভরসায় এবং বন্ধুর সাহায্যে নেপালে গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি শিশুপাচারকাণ্ডে গ্রেফতার জুহি চৌধুরী। বিজেপি নেত্রীকে জেরায় এমনই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে সিআইডি সূত্রে দাবি। সূত্রের খবর, এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রমাণও গোয়েন্দারা হাতে পেয়েছেন। সিআইডি সূত্রে দাবি, জলপাইগুড়ির হোমের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তী গ্রেফতার হওয়ার পর ১৯ ফেব্রুয়ারি জুহি তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। কিন্তু, তার আগে তিনি ফোন করেন, বিজেপির এক শীর্ষ নেত্রীকে, রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতাকে, বিজেপির দিল্লির এক নেতার সচিবকে এবং সর্বভারতীয় নেতার ঘনিষ্ঠ রাজ্যের এক নেতাকে। তারপর নেপালে গিয়ে গা ঢাকা দেন জুহি। এমনটাই দাবি সিআইডি সূত্রের। কিন্তু, কেন নেপাল? সিআইডি সূত্রে দাবি, বিজেপি নেত্রী জুহিকে জেরা করে জানা গিয়েছে, প্রভাবশালী যোগের ভরসাতেই তিনি নেপালে পালিয়েছিলেন। কারণ, প্রতিবেশী দেশ নেপালে ঢুকে তাঁর খোঁজে সিআইডিকে অভিযান চালাতে হলে সে দেশের সরকারের অনুমতি নিতে হবে। তার জন্য আগে দরকার কেন্দ্রের সবুজ সংকেত। জুহি ভেবেছিলেন, তাঁর যা প্রভাবশালী যোগ, তাতে সিআইডি দিল্লির কাছে আবেদন জানালে, সেই খবর তিনি ঠিক পেয়ে যাবেন। আর সেই মতো অন্যত্র গা ঢাকা দেবেন। কিন্তু, সিআইডি সেই পথে হাঁটেনি। তাঁরা কৌশলে জুহিকে নেপাল থেকে ভারতে আনিয়ে, গ্রেফতার করে। সিআইডি সূত্রে দাবি, তাঁকে জেরায় জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে আরও কয়েকটি হোম খোলার পরিকল্পনা করেছিলেন জুহি ও চন্দনার। এ হেন জুহি চৌধুরীকে সিআইডি গ্রেফতার করার পর তাঁকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে বিজেপি। অনেকেই কটাক্ষ করে বলছ, এ কি শাস্তি দিয়ে মুখ বাঁচানোর চেষ্টা! বৃহস্পতিবার, আরও একধাপ এগিয়ে, নাম না করে, দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে বিজেপি নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, এ সব নিয়ে ভাবছি না। বিজেপি গঙ্গার মতো। অনেক মল-মূত্র ঢোকে, তাতে গঙ্গা অপবিত্র হয় না। এত বড় দলে ২-১ জন ভুল করলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। হয় সে নিজে ঠিক হয়ে যাবে। না হয় দল তাঁকে বাদ দিয়েই এগোবে। তাঁর আরও দাবি, খোজ খবর নিয়েই দলে নেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও ২-১টা দাগী মাল এসে ঢোকে। তাদেরকে বাদ দিয়েই পার্টি এগোবে। অথচ, জুহি চৌধুরীর গ্রেফতারের আগে, বিজেপির রাজ্য সভাপতির গলাতেই শোনা গিয়েছে অন্য সুর। জুহির নাম জড়িয়ে পড়ার পর এই দিলীপ ঘোষই বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। কিন্তু, জুহি চৌধুরীর গ্রেফতারির পর এখন বিজেপি নেতৃত্ব সুর বদল করছে। জুহি ও তাঁর বাবাকে বিজেপির পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছে। এপ্রসঙ্গে ধৃত বিজেপি নেত্রীর প্রতিক্রিয়া, এটা যে কোনও রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রসঙ্গত, শিশুপাচারকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত তথা জলপাগুড়ি হোমের কর্ণধার ধৃত চন্দনা চক্রবর্তী ও বিজেপি নেত্রী জুহি চৌধুরীকে এ দিন পিনটেল ভিলেজে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে সিআইডি।