Bengal New Malaria Species: রাজ্যে খোঁজ মিলেছে নতুন প্রজাতি 'প্লাজমোডিয়াম ওভাল' ম্যালেরিয়ার, আক্রান্ত বেলডাঙার যুবক, সন্দেহ
এই ধরনের ম্যালেরিয়া ভূ-ভারতে সচরাচর দেখা যায় না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা...
সন্দীপ সরকার ও রাজীব চৌধুরী, কলকাতা ও বেলডাঙা: পুজো মিটতেই বাংলায় ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে করোনা। চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গিও। এই প্রেক্ষাপটে চিকিৎসকদের একাংশের সন্দেহ, বাংলায় খোঁজ মিলেছে নতুন রকম ম্যালেরিয়ার, যা ভূ-ভারতে সচরাচর দেখা যায় না।
ম্যালেরিয়ার বিরল এই প্রজাতির নাম প্লাজমোডিয়াম ওভাল। ম্যালেরিয়ার নতুন প্রজাতি বাসা বেঁধেছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার এক যুবকের শরীরে।
দিন কয়েক আগে, বেলডাঙার এই যুবকের ধুম জ্বর আসে। তার সঙ্গে কাঁপুনি। রক্ত পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ আসে। ধরা পড়েনি ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়াও। চিকিৎসকদের সন্দেহ, বছর সাতাশের যুবক বিরল প্রজাতির প্লাজমোডিয়াম ওভাল-এ আক্রান্ত।
রোগীর কী চিকিৎসা হবে, তা জানতে নমুনার স্লাইড পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্যভবনে। স্কুল অফ ট্রপিকালের মেডিসিনের বিশেষজ্ঞের কাছেও পাঠানো হয়েছে নমুনার স্লাইড।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া না করোনা? লক্ষণ দেখে আঁচ করবেন কীভাবে?
ম্যালেরিয়ার মূলত চারটি প্রজাতি। এগুলি হল -- প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স, প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপরাম, প্লাজমোডিয়াম ম্যালেরিয়ে ও প্লাজমোডিয়াম ওভাল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ও এরাজ্যে ম্যালেরিয়া প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স ও ফ্যালসিপরামের প্রজাতির খোঁজ মেলে। বেলডাঙার যুবকের ভাইভ্যাক্স ও ফ্যালসিপরামের রিপোর্ট নেগেটিভ আসায়, চিকিৎসকদের সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে।
কতটা ভয়ঙ্কর ম্যালেরিয়ার এই অচেনা প্রজাতি? বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের মোট ম্যালেরিয়া আক্রান্তের ০.১ %-এর কম প্লাজমোডিয়াম ওভাল-এ আক্রান্ত হন। কিন্তু সময় মতো রোগ নির্ধারণ করতে না পারায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়।
চিকিৎসক শিবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওভাল আর ভাইভাক্স যমজ ভাই। একজন থেকে আরেকজনের সংক্রমণ হয় অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে। পশ্চিম আফ্রিকার কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, লাইবেরিয়ার মতো দেশে প্লাজমোডিয়াম ওভালের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
আরও পড়ুন: করোনার পাশাপাশি ভয় ধরাচ্ছে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া! আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও
তাহলে বেলডাঙার যুবক কীভাবে মশকবাহিত রোগে আক্রান্ত হলেন? পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কাজ করতেন ওই যুবক। গত বছর লকডাউনের সময় ফেরেন মুর্শিদাবাদে।
কলকাতায় এসি মেকানিকের কাজ করতেন তিনি। কীভাবে এই ভাইরাস বেলডাঙার যুবকের শরীরে ঢুকল তার খোঁজ চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগ একবার শরীরে বাসা বাঁধলে ভয়ঙ্কর হতে পারে। শিবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জীবাণু ডিম পাড়ে লিভারে। ডিম ফুটলে ফের ম্যালেরিয়া হতে পারে। ক্লোরোকুইন দেওয়া হয়। প্রাইমারি কুইন নামের ওষুধ দিয়ে মেরে দেওয়া হয়।
ম্যালেরিয়ার নতুন প্রজাতি নিয়ে যখন উদ্বেগ বাড়ছে তখন, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। ৩ দিন আগে দিল্লি যান তিনি। সূত্রের খবর, বেশ কয়েকদিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন রাজ্যপাল। শনিবার পরীক্ষার পর রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু মেলে। বঙ্গভবনে চিকিৎসা চলছে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের।
আরও পড়ুন: বিশ্বের প্রথম শিশুদের জন্য ম্যালেরিয়া টিকাকে ছাড়পত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
গতকাল শিলিগুড়িতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ম্যালেরিয়া নিয়ে মানুষকে সচেতন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গে এই সময় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ হয়। যাদের মশারি কেনার ক্ষমতা নেই, প্রশাসনকে বলছি তাদের মধ্যে বিতরণ করা হোক। এছাড়া, জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, এখন ম্যালেরিয়া জিন চেঞ্জ করছে, ফলে মশা থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
সব মিলিয়ে উৎসবের মরসুমে, ম্যালেরিয়ার নতুন এক প্রজাতির প্রাদুর্ভাবের আতঙ্ক বাংলায়।