Afghanistan Crisis : দেশ ছাড়ার সময় একমুঠো মাটিও নিয়ে আসতে পারলাম না, দিল্লিতে কেঁদে ফেললেন আফগানিস্তানের অমুসলিম মহিলা সাংসদ
২০ বছর আগে তালিবান শাসনের অবসানের পর সে-দেশে নারীর উন্নতিসাধন ও অগ্রগতির জন্য। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে 'পুরো পরিশ্রমটাই জলে গেল' বলছেন আনারকলি
কলকাতা : আফগানিস্তানের প্রথম অমুসলিম মহিলা সাংসদ আনারকলি কৌর হনারিয়র কখনো ভাবেননি যে তাঁকে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে ভিনদেশের আশ্রয়ে থাকতে হবে। আফগানিস্তানের মতো চরম পুরুষতান্ত্রিক দেশে মাথা উঁচু করে বাঁচা এই মানুষটি ভাবেননি কখনও তাঁকেও আফগানিস্তান ছাড়তে হবে, সব পিছুটান ফেলে। আবেগ-অনুভূতি রেখে পাড়ি দিতে হবে ভিনদেশে। কিন্তু ঠিক সেটাই ঘটল তাঁর সঙ্গে। ছাড়তে হল দেশ। সপরিবার দেশ ছেড়ে ভারতে আসতে হল আফগানি চিকিত্সককে।
গত ১৫ অগাস্ট থেকে বদলে গেল দেশের ছবিটা। তালিবানরা দুই দশক পর পুনর্দখল করল আফগানিস্তানের সিংহভাগ মাটি। এসেই জারি করে দিল, নানাবিধ ফতোয়া। মহিলাদের উদ্দেশে নির্দেশ জারি করে বহির্জগত থেকে সরিয়ে করা হল গৃহবন্দি। শুরু হল ত্রাসের রাজত্ব। মহিলাদের জন্য জারি হল একের পর এক ফতোয়া। ফলে নিজের জীবন-মান বাঁচাতে দেশ ছাড়তে হল আনারকলিকেও।
তিনি এখন দিল্লিতে। কিন্তু দেশ ছাড়ার পর নিজের ভাললাগার জিনিসগুলি যেমন নিয়ে আসতে পারেননি, আনেননি এক মুঠো দেশের মাটিও। বলতে বলতে চোখে জল এসে গেল আফগানিস্তানের প্রথম অমুসলিম মহিলা সাংসদের। মধ্যতিরিশের এই মহিলা পেশায় দন্ত চিকিত্সক। ২০ বছর আগে তালিবান শাসনের অবসানের পর সে-দেশে নারীর উন্নতিসাধন ও অগ্রগতির জন্য। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে 'পুরো পরিশ্রমটাই জলে গেল' বলছেন তিনি। তিনি প্রগতিশীল এবং গণতান্ত্রিক আফগানিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলেন। "আমার স্বপ্ন এখন ভেঙে গেছে।" আনারকলি কৌর এখনও আশা করেন যে আফগানিস্তান এমন একটি সরকার পাবে যা গত ২০ বছরে তিল তিল করে গড়ে তোলা উন্নতিকে রক্ষা করবে।
তালিবানের প্রত্যাবর্তনের পর তাঁর দেশের পরিস্থিতির মধ্যে রবিবার সকালে তিনি সপরিবার ভারতীয় C-17 বিমানে ভারতে পৌঁছান। এ দেশে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, "আমি আমার দেশের মাটির এক মুঠো মাটি ...আমার দেশের একটি স্মৃতিচিহ্ন নেওয়ার সময়ও পাইনি।"
দিল্লির একটি হোটেলে থাকছেন তিনি। সঙ্গে তাঁর অসুস্থ মা। তিনি মনেপ্রাণে কাবুলে ফিরে যেতে চান, কিন্তু সেই পরিস্থিতি কোথায় ? মেয়ে উত্তর দিতে পারছেন না মাকে। "আমি জানি না তাঁকে কী বলব''। ২০০9 সালের মে মাসে, রেডিও ফ্রি ইউরোপের আফগান চ্যাপ্টার তাঁকে "বর্ষসেরা ব্যক্তি" নির্বাচিত করে। এরপর তিনি কাবুলে বিখ্যাত হয়ে যান। এখন সেই মানুষটাই বুঝতে পারছেন না কীভাবে ফিরবেন দেশে।