'ছেলেমানুষি', অযোধ্যা-রায়, কাশ্মীর নিয়ে মন্তব্য করায় ইউনেস্কোতে পাকিস্তানকে তুলোধনা ভারতের
ইউনেস্কোর সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাবরি মামলার রায় প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন পাক শিক্ষামন্ত্রী শাফকাত মাহমুদ।
প্যারিস: জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি পৃথক কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল গঠন এবং অযোধ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে ‘ছেলেমানুষি প্রচার’ করছে পাকিস্তান। বুধবার ইউনেস্কোতে ফের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘মনগড়া মিথ্যে বলে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ করার অভিযোগ তুলল নয়াদিল্লি।
ইউনেস্কোর ৪০ তম সাধারণ সভায় ভারতের তরফে বলা হয়: মিথ্যা, শঠতা ও প্রতারণার মাধ্যমে ভারতকে কালিমালিপ্ত করতে ‘ছেলেমানুষি প্রচার’ করছে পাকিস্তান। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে অবাঞ্ছিত মন্তব্য করার জন্য পাকিস্তানের তীব্র নিন্দা করছি।
এই রায় আইনের শাসন, সর্বধর্মের প্রতি সমান সম্মান সম্পর্কিত-- যা পাকিস্তানের কাছে অবিশ্বাস্য। ফলে, পাকিস্তানের বোধের অক্ষমতা সম্পর্কে অবাক হওয়ার মতো কিছুই নেই। যে কারণে, তারা অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করে চলেছে। তবে, এভাবে ঘৃনা ছড়ানোর তীব্র প্রতিবাদ করছে ভারত। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেভাবে পাকিস্তান হস্তক্ষেপ করে চলেছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।
এর আগে, ইউনেস্কোর সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অযোধ্যা-রায় নিয়ে মন্তব্য করেন পাক শিক্ষামন্ত্রী শাফকাত মাহমুদ। তিনি বলেন, ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এক কথায় মুসলিমদের পবিত্র শতাব্দী-প্রাচীন মসজিদকে ধ্বংসের নির্দেশ দিল। এই অন্যায়ের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিৎ আন্তর্জাতিক মহলের।
জবাবে পাকিস্তানকে প্রায় তুলোধনা করে ভারতের তরফে বলা হয়, সবচেয়ে মৌলিক অধিকার হল জীবনধারণের অধিকার। বিশ্বে, এই মুহূর্তে জীবনের অধিকারের সবচেয়ে বড় বিপদ হল সন্ত্রাসবাদ। মর্মান্তিক হলেও এটাই সত্যি যে, পাকিস্তান হল বিশ্বে এই মুহূর্তে সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় প্রস্তুতকারী ও রফতানিকারী। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নীতি সন্ত্রাস-হিংসার সঙ্গে ওতপ্রতভাবে জড়িত। সন্ত্রাসবাদকে জাতীয় নীতির মূল স্তম্ভ করে তুলেছে পাকিস্তান।
কাশ্মীর নিয়ে মন্তব্য করার জবাব ভারতের তরফে বলা হয়, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ-- এই দুই কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল সর্বদা ভারতের ছিল এবং সর্বদা ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গই থাকবে। এর মধ্যে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের অংশও রয়েছে।
পাঁচটি প্রশ্নের মাধ্যমে পাকিস্তানকে এদিন বিদ্ধ করেছে ভারত। ওই প্রশ্নের মাধ্যমে ভারতকে কালিমালিপ্ত করতে পাকিস্তানের মনগড়া মিথ্যে ও প্রতারণাকে প্রকাশ্যে উত্থাপন করেন ভারতের প্রতিনিধি। তিনি বলেন--
- কোন দেশে ৯/১১ ও ২৬/১১ জঙ্গি-হামলার মাস্টারমাইন্ডদের পাওয়া গিয়েছে?
- কোথায় ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা উমরকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে?
- কোন দেশ রাষ্ট্রপুঞ্জ-ঘোষিত ১৩০ জঙ্গি ও ২৫টি জঙ্গিগোষ্ঠীর বাসস্থান?
- কোন দেশে হিজবুল মুজাহিদিন, জামাত-উদ-দাওয়া, লস্কর-ই-তৈবা সহ একাধিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন প্রকাশ্যে নিজেদের নাশকতামুসক কার্যকলাপ চালায়, তোলাবাজি চালায়, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতে নিজেদের দফতর পরিচালন করে?
- কোন দেশের সেনা স্রেফ ভিন-ভাষা বলার জন্য নিজেদেরই লক্ষ লক্ষ নাগরিকদের হত্যা করে? প্রসঙ্গত, নাম না করে বালোচিস্তান সহ পাকিস্তানের সংখ্যালঘু অঞ্চলে ঘটে চলা হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ করেন তিনি।
ভারতের প্রতিনিধি বলেন, এসব প্রশ্নের একটাই উত্তর, পাকিস্তান। তিনি যোগ করেন, ইউনেস্কোর প্রয়োজন নেই বিশ্ব সন্ত্রাসের পীঠস্থান পাকিস্তানের মত একটা দেশের থেকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কিত কোনও বিষয় শোনার। তার চেয়ে বরং আন্তর্জাতিক মহল পাকিস্তানকে বলুক সন্ত্রাসের প্রচার বন্ধ করে স্বাভাবিক দেশ হিসেবে নিজেদের মেলে ধরুক।