বায়ুমণ্ডল-মহাশূন্যের সংযোগস্থলে কী ঘটছে, খতিয়ে দেখতে ‘আইকন’ উপগ্রহ পাঠাল নাসা
আয়োনোস্ফেয়ার স্তরটি সাধারণত কয়েক’শ কিলোমিটার পুরু। এই স্তরে ক্রমাগত মহাকাশ থেকে আসা তেজষ্ক্রিয় রশ্মি এবং পৃথিবীর আবহাওয়ার সংঘাত লেগেই থাকে।
হিউস্টন: বায়ুমণ্ডল যেখানে মহাশূন্যের সঙ্গে মিশছে, সেই স্তর পরীক্ষা করতে এবার বিশেষ উপগ্রহ পাঠাল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। বৃহস্পতিবার রাতে (স্থানীয় সময়) মহাশূন্য ও বায়ুমণ্ডলের সংযোগস্থল-- যা অত্যন্ত রহস্যময় বলে উল্লেখ করে বিজ্ঞানীরা-- তা পরীক্ষা করতে আয়োনোস্ফেরিক কানেকশন এক্সপ্লোরার (আইকন) নামে একটি বিশেষ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে। নাসার তরফে জানানো হয়েছে, এই বিশেষ উপগ্রহ ২ বছর আগে ছাড়ার পরিকল্পনা থাকলেও, তাতে বিলম্ব হয়। অবশেষে, ফ্লোরিডা উপকূলের নিকটে অতলান্তিক মহাসাগরের ওপর দিয়ে ওড়া একটি বিশেষ বিমান থেকে এই উপগ্রহকে উৎক্ষেপণ (আদতে নিক্ষেপ) করা হয়। বিমান থেকে বিচ্ছিন্ন হতেই, উপগ্রহের সঙ্গে থাকা পেগাসাস রকেট প্রজ্জ্বলিত হয়। আর তা উপগ্রহটিকে আরও উপরে মহাশূন্যের সংযোগস্থলে প্রতিস্থাপন করে। পৃথিবী আর মহাশূন্যের মাঝে রয়েছে হাওয়ার বিভিন্ন স্তর, যাকে আমরা বায়ুমণ্ডল হিসেবে জানি। এই বায়ুমণ্ডল সূর্যের তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ ও ক্ষতিকারক অতিবেগুণী রশ্মির হাত থেকে পৃথিবী ও তার বুকে থাকা সমস্ত প্রাণীকে রক্ষা করে। সবচেয়ে উপরের স্তর হল আয়োনোস্ফেয়ার। এই স্তর অত্যন্ত রহস্যে ঘেরা। এর একটি কারণ হল, সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুণী ও তেজষ্ক্রিয় রশ্মি এই স্তরেই মূলত আটকে যায়। এই স্তর সেই ক্ষতিকারক রশ্মিকে টেনে ছাঁকনির মতো আটকে দেয়। ফলত, এই স্তরে হাওয়ার মধ্যে যে মৌলিক-কণা থাকে, তা অত্যন্ত চার্জড (আয়োনাইজড) অবস্থায় থাকে। যে কারণে, এই স্তরকে আয়োনোস্ফেয়ার বলা হয়ে থাকে। আয়োনোস্ফেয়ার স্তরটি সাধারণত কয়েক’শ কিলোমিটার পুরু। এই স্তরে ক্রমাগত মহাকাশ থেকে আসা তেজষ্ক্রিয় রশ্মি এবং পৃথিবীর আবহাওয়ার সংঘাত লেগেই থাকে। যে কারণে, এই স্তর প্রচণ্ড চঞ্চল ও সদা-পরিবর্তনশীল অবস্থায় থাকে। ফলত, অনেকক্ষেত্রে বেতার-তরঙ্গ এর মধ্য দিয়ে পার করতে পারে না এবং রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নাসার হেলিওফিজিক্স বিভাগের প্রধান নিকোলা ফক্স জানান, ‘আইকন’-এর আয়তন একটি রেফ্রিজারেটরের সমান। আয়োনোস্ফেয়ারে মজুত গ্যাসীয় পদার্থ থেকে যে এয়ারগ্লো তৈরি হয় তার বিশ্লেষণ করবে আইকন। পাশাপাশি, ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকা এই জায়গায় কোনও মহাকাশযানের চারপাশে ঠিক কী ধরনের পরিবেশ ও কতটা পরিমাণ প্রতিকূলতা সৃষ্ট হয়, তাও বিশ্লেষণ করবে আইকন। ফক্সের দাবি, আইকন-এর দেওয়া পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে মহাকাশযান ও মহাকাশচারীদের সুরক্ষা সেইমতো উন্নত করা হবে। যাতে, ভবিষ্যতে অভিযানগুলিতে দুর্ঘটনার প্রবণতা বা সম্ভাবনা না থাকে। তিনি যোগ করেন, আগামী ২ বছর কাজ করবে আইকন।