(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
International Women's Day: জন্ম থেকেই আক্রান্ত বিরল রোগে, মেধা আর মনের জোরেই আজ IAS
Women's Day 2023: প্রথমবারের চেষ্টাতেই সাফল্য, কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে আটকে যায় নিয়োগ। পরে তিনি দেশের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারী হন।
কলকাতা: জন্মের পরেই ধরা পড়েছিল সমস্যাটা। ডাক্তাররা বুঝেছিলেন বিরল এক রোগে আক্রান্ত এই শিশুকন্যা। রোগটার নাম স্কোলিওসিস (Scoliosis)। মেরুদণ্ডের গড়ন বিঘ্নিত হয় এই রোগে। কোনওএক দিকে বেঁকে যায় মেরুদণ্ড। এই রোগের কারণে দৈহিক গঠন ধাক্কা খায়। হাতের কার্যক্ষমতাও নষ্ট হয়। কিন্তু বিরল রোগ নিয়েও ভবিষ্যতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এই মেয়ে। আর কেউ না বুঝলেও তা স্পষ্ট বুঝেছিলেন ওই শিশুকন্যার বাবা-মা। আর বাবা-মা যে ভুল নয়, তা প্রমাণ করে দিয়েছে সেদিনের সেই শিশু। এখন যিনি IAS ইরা সিঙ্ঘল (Ira Singhal)। দেশের প্রশাসনের মেরুদণ্ড সোজা রাখার দায়িত্ব তাঁর হাতেই।
ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল দেশের হয়ে কাজ করার। তখন তাঁর সামনে দুটো স্বপ্ন ছিল। একটা হল ডাক্তার হওয়া, অন্যটা হল UPSC দিয়ে IAS হওয়া। স্বপ্ন তো ছিলই। কিন্তু বাস্তবতা থেকেও দূরে থাকেননি তিনি। অত্যন্ত কঠিন এই পরীক্ষা, তাই কেরিয়ারের অন্যদিকটাও ভেবে রেখেছিলেন। কীভাবে?
মেধা দিয়ে জয়:
১৯৮৩ সালে মীরাটে স্বপ্ন ইরা সিঙ্ঘলের। ইরার বাবা-মা দুজনেই কর্মরত ছিলেন। ছোটবেলায় মীরাটে সোফিয়া গার্লস স্কুল. তারপরে দিল্লির লরেটো কনভেন্ট স্কুল থেকে পড়াশোনা। বিশেষভাবে সক্ষম--এই তকমাটা ছোটবেলা থেকেই কোনওদিন নিজের ভাবনায় আসতে দেননি তিনি। তারপরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিলেন ইরা। দিল্লির নেতাজি সুভাষ ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে B.Tech পাশ করেন তিনি। তারপরে MBA করেন। শারীরিক সমস্যাকে হেলায় হারিয়েছেন মনের জোর আর তীক্ষ্ণ মেধার সাহায্যে। UPSC-এর প্রস্তুতির আগে বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরিও করেছেন তিনি। কোকা-কোলা, ক্যাডবেরি ইন্ডিয়ার মতো সংস্থায় দায়িত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। তারপর মোটা বেতনের চাকরি ছেড়ে শুরু করেছিলেন UPSC-এর প্রস্তুতি।
চাকরি পেতেও লড়াই:
অন্যতম কঠিন চাকরির পরীক্ষা হিসেবে বলা হয় UPSC-কে। ২০১০ সালে সেই পরীক্ষা দিয়ে প্রথমবারেই মেধাতালিকায় নাম ওঠে। ব়্যাঙ্ক অনুযায়ী সুযোগ পান Indian Revenue Service-এ। কিন্তু আসল লড়াইটা তখনও শুরু হয়নি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণ দেখিয়ে সেই চাকরি তাঁকে দেওয়া হয়নি। নিয়মের বেড়াজালে আটকে যায় তাঁর স্বপ্ন। কিন্তু হাল ছাড়েননি ইরা। Central Administrative Tribunal (CAT)-এ মামলা করেন তিনি। তার পাশাপাশি চলে পরীক্ষার প্রস্তুতি। কারণ তাঁর চোখে তখন IAS হওয়ার স্বপ্ন। একদিকে মামলা অন্যদিকে পড়াশোনা দুটিই সমান তালে চলেছে। এরই মধ্যে ২০১১, ২০১২ সালেও পরীক্ষা দিয়ে IRS-এর তালিকাতেই নাম উঠেছিল। অবশেষে দীর্ঘ অধ্যবসায়ের ফল মিলল একসঙ্গে। চার বছর পরে CAT-এর মামলায় জয় পেলেন ইরা, পেলেন তাঁর চাকরিও। আবার তারই সঙ্গে ২০১৪ সালের UPSC-তে সারা দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করলেন তিনি। ইরা সিঙ্ঘল -প্রথম কোনও বিশেষভাবে সক্ষম নাগরিক যিনি জেনারেল ক্যাটেগরিতে UPSC-তে প্রথম হয়েছিলেন। তুমুল এই সাফল্য পাওয়ার পরে তাঁকে নিয়ে হইচইও হয়েছে বহু।
সাফল্যকে কীভাবে দেখেন?
RSTV-তে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানাচ্ছেন, যেটা নিজের পছন্দ নয় সেটা না করাই ভাল। যেটা হয়নি সেটা ভাবা উচিত নয়, মনে করেন ইরা। নিজের জীবনের একটা ঘটনাও শুনিয়েছেন তিনি। IIT দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর ব়্যাঙ্ক ভাল হয়নি ফলে সুযোগ পাননি। তারপরে অন্য একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন, তখন হয়তো খারাপ লেগেছিল। কিন্তু পাশ করার পরে তাঁর মনে হয়েছে IIT-তে সুযোগ না পাওয়াই হয়তো তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়েছে। তাই যা হয়নি তার পিছনে সময় নষ্ট না করে নতুন রাস্তা খুঁজে বের করাই ইরা সিঙ্ঘলের জীবনের লক্ষ্য। কোনওদিন না লড়ে আগে থেকে হার মানতেও নারাজ তিনি, সেই সাক্ষাৎকারেই জানিয়েছেন এ কথাও।
আরও পড়ুন: ব্লেডের ভরে তুখোড় দৌড়, শিহরণ জায়গায় কিরণের রূপকথা