এই মন্দির নির্মাণের পরই সেরে গিয়েছিল রাজা বল্লাল সেনের দুরারোগ্য ব্যাধি ! রাঢ়েশ্বর শিব মন্দিরে ভক্তদের ভিড়
Durgapur Rarheswar Shiva temple : কথিত আছে, রাজা বল্লাল সেনের জটিল রোগ নির্মূল হয়েছিল রাঢ়েশ্বর শিবের কৃপায়। মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি আর বিশ্বাস থাকলে ভগবান কাউকে খালি হাতে ফেরান না।
মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাঁকসা : শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করে জটিল রোগ নির্মূল হয়েছিল রাজা বল্লাল সেনের। সেই বিশ্বাস আজও দৃঢ় গ্রামের মানুষের মধ্যে। তাই শিবরাত্রিতে এখনও হাজার হাজার ভক্তদের ভিড় জমে কয়েকশ বছরের পুরনো রাঢ়েশ্বর শিব মন্দিরে। এই মন্দিরে মিলে মিশে একাকার ইতিহাস ও কিংবদন্তি।
কথিত আছে, রাজা বল্লাল সেনের জটিল রোগ নির্মূল হয়েছিল রাঢ়েশ্বর শিবের কৃপায়। মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি আর বিশ্বাস থাকলে ভগবান কাউকে খালি হাতে ফেরান না। মনের আস্থা নিয়ে শিবলিঙ্গে জল ঢাললে তা পূর্ণ হয় বলেও অনেকের মত। রাজা বল্লাল সেনের রাঢ়েশ্বর শিব মন্দিরে এখনও শিবরাত্রিতে উপচে পড়ে ভিড়।
ইতিহাস বলছে, প্রায় ৮৫০ বছর আগে রাজত্ব করতেন রাজা বল্লাল সেন। বল্লাল সেন (১০৮৩–১১৭৯) ছিলেন বঙ্গের সেন রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা। ১১৬০ থেকে ১১৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি সেন বংশের রাজত্ব করেন। কাঁকসার মলানদিঘি, বনকাটি সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের মাঝে গড় জঙ্গলে অজয়ের পাড়ে ছিল তাঁর আধিপত্য।
এক সময় এক জটিল লোকে আক্রান্ত হয়ে পড়েন রাজা বল্লাল সেন। কবিরাজরাও ব্যর্থ হয়েছিলেন সেই রোগ নির্মূল করতে। তখনই তিনি দেবাদিদেব মহাদেবের স্বপ্নাদেশ পান, আড়ার কালদিঘি পুকুরের পাশে রাঢ়েশ্বর শিব মন্দির তৈরি করার। মানুষের বিশ্বাস, সেই কালদিঘি পুকুরে দেবাদিদেব মহাদেব স্নান করতেন। ওই পুকুরের পাশে বেলে ও ঝামা পাথর দিয়ে তৈরি করা হয় রাঢ়েশ্বর শিব মন্দিরটি। সেই মন্দিরের ভেতর শিবলিঙ্গ রেখে দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা শুরু করেন রাজা বল্লাল সেন।
কথিত আছে, তারপর অলৌকিকভাবে তাঁর জটিল রোগও নির্মূল হয়ে যায়। তখন থেকেই প্রতিদিন হয়ে আসে শিবের নিত্যপুজো। শিব রাত্রিতে সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্তদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই চলছে পুজোপাঠ। শিবলিঙ্গে জল ঢেলে অনেকে মনের ইচ্ছে জানান ভগবানকে।
মন্দিরে ভক্তদের জন্য দুপুরে রয়েছে অন্নকুটের ব্যবস্থা। মন্দিরের সেবাইত দ্বীপায়ন চক্রবর্তী জানান, তাঁরা বাপ ঠাকুরদার মুখে শুনেছেন এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে নানা অলৌকিক কাহিনী। মনের ভক্তি আর অগাধ আস্থা রেখে যদি কেউ পুজো দেন তাহলে ইচ্ছে পূরণ করেন বাবা। শিবরাত্রিতে অনেক ভক্তের সমাগম হয় মন্দিরে। ভক্তদের যাতে সমস্যা না হয় সেদিকেও নজরদারি চালায় পুলিশের পাশাপাশি মন্দির কমিটি।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন হয়েছে এলাকার। গড়ে উঠেছে অনেক বহুতল, বেড়েছে জনসংখ্যা। সেই ভিড়ের মাঝে আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে সেন আমলের ঐতিহ্যবাহী বল্লাল সেনের তৈরি সেই মন্দির।