Global Seed Vault: ধ্বংসের পর আবারও সুজলা-সুফলা হয়ে উঠতে পারে পৃথিবী, মেরুবৃত্তে পাতালপুরীতেই রয়েছে সব বন্দোবস্ত
Doomsday Vault: ভবিষ্যতের কথা ভেবে পাতালকুঠুরিতে শস্যদানার ভাণ্ডার গড়ে তোলা হয়েছে।
নয়াদিল্লি: কলিযুগের শেষ পর্যায়ে পৃথিবী ধ্বংস হবে বলে উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে। মহাকাব্যের লেখাকে যদি বেদবাক্য হিসেবে নাও ধরা হয়, পৃথিবীর শেষের ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে বিজ্ঞানও। প্রাকৃতিক বিপর্যয় যদিও বা গিলে পৃথিবীকে, ধ্বংসের দায় পুরোপুরি মানুষের বলেই মত বিজ্ঞানীদের। প্রকৃতির উপর যথেচ্ছ অত্যাচার, লাগাতার গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনে বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনকে পৃথিবী ধ্বংসের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তাঁরা। আর এই সময়ে দাঁড়িয়েও পৃথিবী এবং পৃথিবীবাসীর স্বার্থে কাজ করে চলেছেন কিছু মানুষ। তাই গোটা পৃথিবী যখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, মানব সমাজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পাতালকুঠুরিতে শস্যদানার ভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন তাঁরা। (Global Seed Vault)
প্রখ্যাত বিজ্ঞানী তথা বিশ্ব শস্য বৈচিত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তথা বোর্ড সদস্য জেফ্রি হটিন ওবি এবং বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আমেরিকার প্রতিনিধি ক্যারি ফাউলারের নাম এক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য। ২০২৪ সালে World Food Prize Laureates পুরস্কার বিজয়ী ঘোষণা করা হয় তাঁদের। শস্যদানা সংরক্ষণ এবং শস্য বৈচিত্র বজায় রাখায় দীর্ঘকালীন অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হয় তাঁদের। কারণ সুমেরু বৃত্তর প্রত্যন্ত অঞ্চলে, নরওয়ে এবং উত্তর মেরুর মাঝে মানবজাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছেন তাঁরা। সেখানে পাতালকুঠুরির ভাণ্ডারে ৬০০০-এর বেশি গাছ থেকে সংগৃহীত ২২ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি শস্যদানার নমুনা মজুত করে রেখেছেন তাঁরা, রয়েছে চারাও। ওই শস্যভাণ্ডারকে ইংরেজিতে 'Doomsday Vault'ও বলা হয়। নামের সঙ্গে ধ্বংস জড়িয়ে থাকলেও, মানবজাতির কল্যাণের লক্ষ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে ওই শস্যভাণ্ডার। (Doomsday Vault)
২০০৮ সালে ওই শস্যভাণ্ডারটির সূচনা হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতিমারির জেরে উদ্ভুত খাদ্যসঙ্কটের মতো বিনাশকারী শক্তির মোকাবিলায় আগামী দিনে ওই শস্যভাণ্ডারই মানবজাতির আত্মরক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। নরওয়ের সোয়ালবার দীপপুঞ্জের স্পিটসবার্গেন Global Seed Vault-এ চার দেওয়ালের নিরাপত্তায় রয়েছে ওই শস্যভাণ্ডার। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে ওই শস্যভাণ্ডার গড়ে তোলা হয়নি। অস্তিত্বরক্ষার শেষ হাতিয়ার হিসেবে সেটিকে গড়ে তোলা হয়েছে, সে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হোক বা মনুষ্যঘটিত। কৃষি বৈচিত্রকে ধরে রাখার চেষ্টার জলজ্যান্ত প্রমাণ ওই শস্যভাণ্ডার।
Happy 15th Birthday, Svalbard Global Seed Vault!
— The Crop Trust (@CropTrust) December 2, 2023
As the largest backup facility for the world’s #cropdiversity, the @GlobalSeedVault symbolizes international cooperation and efforts to secure the foundation of our future food supply. @landbrukogmat @NordGen #COP28 pic.twitter.com/J57zqllxc1
অত্যাধুনিক সিন্দুকও বলা হয় শস্যভাণ্ডারটিকে। এই সৃষ্টি একদিকে যেমন বিস্ময় জাগায়, তেমনই মানুষের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। চাইলে সেখানে পৌঁছে এই অনন্যকীর্তি চাক্ষুষও করতে পারেন যে কেউ। সেখানে সকলকেই স্বাগত জানানো হয়। ঢোকামাত্রই সেখানে খানিকটা হালকা গুঞ্জনধ্বনি শোনা যায়, যা আসলে পাতালকুঠুরির সর্বত্র বিদ্যুৎ খেলে বেড়ানোর শব্দ। সেই সঙ্গে হালকা ঠান্ডা বাতাস এসে ঝাপটা মারে মুখে। শস্যাদানাগুলিকে সজীব রাখতে ওই পাতালকুঠুরিতে সর্বক্ষণ তাপমাত্রার সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়।
প্রবেশের পর, দর্শকদের বিদ্যুতের গুঞ্জন এবং কুলিং সিস্টেমের থ্রাম দ্বারা অভ্যর্থনা জানানো হয় - একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য ডিজাইন করা একটি সুবিধার প্রাণশক্তি। সেই সঙ্গে হালকা ঠান্ডা বাতাস এসে ঝাপটা মারে মুখে। দু'দিকে আলো বসানো, কংক্রিটের করিডর পেরিয়ে পৌঁছতে হয় মূল গর্ভগৃহ তথা ৪৩০ ফুট উচ্চতার শস্যদানা সম্বলিত পাহাড়ের কোলে। শস্য ভাণ্ডারটি এককথায় দুর্ভেদ্য। ভবিষ্যতের জন্য শস্যবীজগুলিকে একেবারে আগলে রাখা হয়েছে। জেনেশুনেই সুমেরু বৃত্ত অঞ্চলে পাতালকুঠুরিতে শস্যভাণ্ডারটি গড়ে তোলা হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৪০০ ফুট। পরিত্যক্ত একটি কয়লাখনিও এর অন্তর্ভুক্ত। হিমশীতল মেরু প্রদেশীয় বাতাস এবং ন্যূনতম আর্দ্রতার মধ্যে শস্যদানাগুলি সুরক্ষিত রয়েছে।
শুধুমাত্র দুর্গম জায়গায়, দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনার জন্যই পরিচিত নয় শস্যভাণ্ডারটি। সার্বিক গ্রহণযোগ্যতাই শস্য ভাণ্ডারটিকে অনন্য করে তুলেছে। পৃথিবীর ৭৭টি দেশের শস্যদানা ওই শস্যভাণ্ডারে রয়েছে। পৃথিবী যদি সত্যিই ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়, সেক্ষেত্রে শস্য বৈচিত্রের প্রমাণ হিসেবে রয়ে যাবে সেটি। পাশাপাশি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্পদ হিসেবেও রয়ে যাবে চিরকাল। তাই বর্তমানে কে বা কারা জানলেন, শস্যভাণ্ডারটি কতটা প্রচার পেল, সেই নিয়ে মাথাব্যথা নেই উদ্যোগী কারও। তাঁরা শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুজলা-সুফলা পৃথিবীর দলিল রেখে যেতে চান। সব শান্ত হলে পৃথিবী আবার ফুলে-ফলে ভরে ওঠে যাতে, সেই ব্যবস্থা করে যেতে চান।