Mohun Bagan vs Jamshedpur FC: দুই ম্যাচে জয়হীন জামশেদপুরকে হারিয়ে লিগ শীর্ষে পৌঁছনোর হাতছানি মোহনবাগানের সামনে
ISL 2024-25: ১৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকায় আপাতত দ্বিতীয় স্থানে মোহনবাগান ও ১২ নিয়ে সাতে জামশেদপুর এফসি।
কলকাতা: লিগ টেবলের শীর্ষস্থানের দোরগোড়ায় তারা। আর একটি জয়েই তারা ধরে ফেলবে এক নম্বরে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি-কে। এই অবস্থায় শনিবার ঘরের মাঠে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে নামছে গতবারের লিগশিল্ড জয়ী মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan vs Jamshedpur FC)। খুব একটা ভাল সময়ের মধ্যে দিয়ে না যাওয়া জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে যে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই নামবে তারা, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়ের যেখানে চোট-সমস্যা, সেখানে পুরো দল নামাতে পারবেন কি না কোচ হোসে মোলিনা, এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সম্প্রতি জাতীয় দলে ডাক পেয়েও খেলতে পারেননি সবুজ-মেরুন শিবিরের দুই নির্ভরযোগ্য ফুটবলার মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধ থাপা ও ডিফেন্ডার আশিস রাই। স্কটিশ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার গ্রেগ স্টুয়ার্টের চোট সেই ১০ নভেম্বরের ম্যাচের আগে থেকেই। স্টুয়ার্ট ও থাপা তাও অনুশীলনে ফিরেছেন। আশিস সেই অবস্থায় নেই। শনিবার তাঁরা মাঠে নামতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছেই।
আশিস না খেলতে পারলে মোলিনার হাতে রয়েছেন তরুণ ডিফেন্ডার দীপেন্দু বিশ্বাস। তাঁকে রক্ষণের এক প্রান্তে রেখে ও শুভাশিস বোসকে অন্য প্রান্তে রেখে চার ব্যাকে ছক সাজাতে পারেন মোলিনা। দীপেন্দু যতটুকু খেলেছেন, তা পছন্দ হওয়ারই মতো। এঁদের সঙ্গে স্প্যানিশ সেন্টার ব্যাক আলবার্তো রড্রিগেজ ও স্কটিশ টম অ্যালড্রেড একসঙ্গে খেললে দলের রক্ষণ দুর্ভেদ্য হয়ে উঠতে পারে। গত ম্যাচে অবশ্য চার ব্যাকে ও দুই বিদেশী ডিফেন্ডারকে রেখে খেলা সত্ত্বেও এক গোল হজম করতে হয়েছে দলকে।
সেই ম্যাচের শুরুতেই হুগো বুমৌসের গোলে এগিয়ে যায় ওডিশা এফসি। ৩৬ মিনিটের মাথায় হেড করে সেই গোল শোধ করেন মনবীর সিংহ। এই দুই গোলের পর দু’পক্ষই ব্যবধান বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা চালালেও সফল হয়নি। বল পজেশনে এগিয়ে থাকলেও মোহনবাগানকে বেশি শট গোলে রাখতে দেয়নি ওডিশা। তবে সারা ম্যাচে একটিও কর্নার আদায় করতে পারেনি সের্খিও লোবেরার দল। শনিবার জামশেদপুরের বিরুদ্ধে এর চেয়ে ভাল ফুটবল না খেলতে পারলে সমস্যায় পড়তে পারে সবুজ-মেরুন বাহিনী।
প্রথম পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জয় পাওয়ার পর জামশেদপুর এফসি গত দু’টি ম্যাচে পাঁচ গোল করে হজম করেছে এবং দিতে পেরেছে মাত্র একটি গোল। তাদের হঠাৎ এই অবনতিকে ‘খারাপ সময়’ আখ্যা দিয়েছেন কোচ খালিদ জামিল, সহকারী স্টিভেন ডায়াসরা। তাই এই ম্যাচে জয়ে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠবেই ইস্পাতনগরীর দল।
হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, জর্ডান মারে, রেই তাচিকাওয়া, হাভিয়ে সিভেরিওরা শুরুর দিকে গোল পেলেও গত দুই ম্যাচে তাদের গোলের খরা দলকেও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তার ওপর প্রতীক চৌধুরি, আশুতোষ মেহতা, স্টিফেন এজে, মুহম্মদ উভেয়সদের রক্ষণ অভাবনীয় ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রতিপক্ষের রক্ষণের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে পারে কি না মোহনবাগানের ধারালো আক্রমণ বিভাগ, সেটাই দেখার।
দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, জেসন কামিংসকে প্রথম এগারোয় না রেখেও পরপর দুই কলকাতা ডার্বিতে অসাধারণ জয় পায় মেরিনাররা। গ্রেগ স্টুয়ার্ট ও জেমি ম্যাকলারেনের জুটি যে এ মরশুমে সুপারহিট হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত ছিল এই দুই ম্যাচে। কিন্তু স্টুয়ার্ট চোট পাওয়ার পর ম্যাকলারেনের সঙ্গে পেট্রাটসের রসায়ন এখন পর্যন্ত ঠিক জমে ওঠেনি। এই অবকাশে সেই সমস্যা তারা কতটা দূর করতে পেরেছে, তা হয়তো বোঝা যাবে এই ম্যাচে। চোট সারিয়ে স্টুয়ার্ট মাঠে ফিরলেও এই ম্যাচেই স্বাভাবিক ফর্মে ফিরতে পারবেন কি না তিনি, সেটাও বড় প্রশ্ন।
লিগ টেবলে বেঙ্গালুরু এফসি যেখানে আট ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট পেয়ে এক নম্বরে রয়েছে, সেখানে কলকাতার দলের খাতায় ১৪ পয়েন্ট জমা হলেও বেঙ্গালুরুর চেয়ে একটি ম্যাচ কম খেলেছে তারা। শীর্ষে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি পরপর দু’টি ম্যাচে জিততে না পারায় যে সুবিধা পেয়ে গিয়েছে মোহনবাগান, শনিবার জিততে পারলে সেই সুবিধা কাজে লাগাতে পারবে তারা। জামশেদপুরকে হারাতে পারলে যে লিগ টেবলের এক নম্বরে বেঙ্গালুরুকে ধরে ফেলবে তারা, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
পরিসংখ্যান যা বলছে
আইএসএলে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে গত চারটি ম্যাচেই অপরাজিত থেকেছে মোহনবাগান। তিনটিতে জিতেছে তারা, একটিতে ড্র হয়েছে। এই চার ম্যাচের মধ্যে দু’টি হোম ম্যাচেই মোহনবাগান কোনও গোল না হজম করে জেতে। চলতি লিগে সাতটির মধ্যে তিনটি ম্যাচে ক্লিন শিট রেখেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। ২০-২১ মরশুমে টানা আটটি ম্যাচের মধ্যে ছ’টিতেই গোল অক্ষত রেখেছিল তারা। শনিবারও গোল অক্ষত রাখতে পারলে এই বিষয়ে দ্বিতীয় সেরার রেকর্ড গড়বে কলকাতার দল।
আইএসএলে শেষ পাঁচটি অ্যাওয়ে ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছে জামশেদপুর এফসি। বাকি চারটিতেই হেরেছে। এ মরশুমে এ পর্যন্ত সাতটি ম্যাচে ১৬ গোল খেয়েছে ইস্পাতনগরীর দল। আর কোনও মরশুমে প্রথম সাত ম্যাচে এত গোল খায়নি তারা। তবে এই ম্যাচে যদি তারা জিতে তিন পয়েন্ট অর্জন করতে পারে, তা হলে আইএসএলে আট ম্যাচে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট অর্জন করবে তারা।
মোহনবাগানের তারকা উইঙ্গার লিস্টন কোলাসো চলতি লিগে এ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে থেকে ১৭টি শট নিয়েছেন, যার মধ্যে সাতটি শট ছিল লক্ষ্যে। তিনি ছাড়া আলাদিন আজারেই-এর এই পরিসংখ্যান রয়েছে, যা চলতি লিগে আপাতত আর কোনও ফুটবলারের নেই। জামশেদপুর এফসি-র গোলকিপার আলবিনো গোমস গত ম্যাচে ছ’টি সেভ করেছেন। এই নিয়ে এ মরশুমে তৃতীয়বার তিনি একই ম্যাচে পাঁচ বা তার বেশিবার সেভ করলেন। যে কৃতিত্ব এখন পর্যন্ত আর কোনও গোলকিপারের নেই। এ মরশুমে তিনিই একমাত্র গোলকিপার, যিনি এ পর্যন্ত ৩০টির বেশি (৩২) সেভ করেছেন।
দ্বৈরথের ইতিহাস
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে আটবার। চারটিতে জিতেছে কলকাতার দল। তিনটিতে জামশেদপুর এফসি। একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। ২০২২-২৩ মরশুমে সবুজ-মেরুন বাহিনী প্রথম ম্যাচে ইস্পাতনগরীর দলকে ১-০-য় হারায়। ফিরতি লিগের ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়। ২০২১-২২ মরশুমে জামশেদপুর দুই ম্যাচেই জেতে, প্রথমে ২-১-এ ও পরে ১-০-য়। তার আগের মরশুমে দুই দলই একবার করে জেতে। প্রথমে জামশেদপুর এফসি ২-১-এ ও পরে মোহনবাগান ১-০-য়। গত মরশুমেও দু’বারই জেতে কলকাতার দল। প্রথমে ৩-২-এ, পরে ৩-০-য়। দুই দলের মধ্যে ম্যাচে মোহনবাগান ১০টি ও জামশেদপুর সাতটি গোল করেছে।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: ঘরের মাঠে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে নামার আগে চোট সমস্যায় উদ্বিগ্ন মোহনবাগান কোচ মোলিনা