এক্সপ্লোর

Kian Nassiri: 'তোমার দলকে হারিয়েছি', ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে বাবাকে রাগিয়েছিলেন জামশেদ-পুত্র

Jamshid Nassiri: ফুটবল কিয়ানের রক্তে। ফুটবলের জন্য সাফল্য, খ্যাতি তাঁর রক্তে মিশে আছে। কারণ, তাঁর বাবার নাম শুনলে এখনও সে যুগের বহু ডিফেন্ডার, গোলকিপারদের বুকে কাঁপন ধরে। কারণ, তিনি জামশেদ নাসিরি।

কলকাতা: দু'বছর আগের জানুয়ারির সেই দিনটার কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে?

জীবনের প্রথম ডার্বি খেলতে নেমেছিলেন কিয়ান নাসিরি (Kian Nassiri)। দীপক টাঙরির জায়গায় পরিবর্ত হিসেবে নেমে ম্যাচের শেষ ৩০ মিনিটে যে তিনটি গোল করেছিলেন কিয়ান, তা তাঁর ফুটবল কেরিয়ারের সেরা ঘটনা। যতদিন ফুটবল পায়ে মাঠে নামবেন, তত দিন তাঁর নামের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর এই কীর্তিকেও মনে রাখবেন সবাই।

৬১ মিনিটে মাঠে নেমে ৬৪ মিনিটের মাথায় যে শটে গোল করেন কিয়ান, সেটাই ছিল সেই ম্যাচে তাঁর প্রথম বলে পা ছোঁয়ানো। প্রথম ছোঁয়াতেই বাজিমাত! সেই গোলে দলের হয়ে সমতা আনার পর ম্যাচের একেবারে শেষে চার মিনিটের মধ্যে পরপর দু’টি গোল করে যে কীর্তি স্থাপন করেন, তা এ দেশের ফুটবলপ্রেমীরা মনে রাখবেন বহু দিন। যেমন মনে রেখেছেন বাইচুং ভুটিয়াকে। ১৯৯৭-এর ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিকের জন্য। ২৫ বছর পরে আর এক ভারতীয় সেই একই কীর্তি স্থাপন করেন সে দিন।

ফুটবল কিয়ানের রক্তে। শুধু ফুটবল বললে ভুল হবে। ফুটবলের জন্য সাফল্য, খ্যাতি, যশ তাঁর রক্তে মিশে আছে। কারণ, তাঁর বাবার নাম শুনলে এখনও সে যুগের বহু ডিফেন্ডার, গোলকিপারদের বুকে কাঁপন ধরে। কারণ, তিনি জামশেদ নাসিরি।

আশির দশকের শুরুর দিকে কলকাতার ময়দান মাতিয়েছিলেন দুই ইরানিয়ান ফরওয়ার্ড জামশেদ নাসিরি ও মজিদ বিসকার। মজিদ দেশে ফিরে গেলেও জামশেদ কলকাতাতেই রয়ে যান। এ দেশের নাগরিকও হয়ে যান। সেই জামশেদেরই রক্ত বইছে তাঁর পুত্র কিয়ানের শরীরে। জীবনের প্রথম কোচ বাবার দেখানো পথেই এখন হাঁটছেন কিয়ান। তবে জামশেদ যা করে দেখাতে পারেননি, তাঁর ছেলে সেই নজিরই গড়ে ফেলেছেন। ডার্বিতে হ্যাটট্রিক। আর কলকাতা ডার্বির ইতিহাসে লেখা হয়ে গেল আর এক কীর্তি, প্রথম পিতা-পুত্রের গোল।

এখন সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে প্রায়ই দেখা যায় সেই জুনিয়র নাসিরির ঝলক। মাঝে মাঝেই ঝলসে ওঠেন তিনি। কখনও শুরু থেকে নেমে, কখনও রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নেমে। তাঁর মধ্যে যে ক্ষিপ্রতা ও গতি রয়েছে, প্রতিপক্ষের মার্কারকে বোকা বানিয়ে ছিটকে বেরিয়ে গোলের পাস দেওয়া বা গোল করার যে প্রবণতা, গোলের সামনে যে ছটফটানি তাঁর খেলায় দেখা যায়, তা বাংলার স্ট্রাইকারদের মধ্যে অনেক বছর দেখা যায়নি।

ইরানের খোরামশহরে জন্মানো জামশেদই ছিলেন ভারতে খেলতে আসা প্রথম বিদেশি ফুটবলারদের অন্যতম। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬— এই সাত বছর কলকাতার ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবে খেলেন তিনি। দুই ক্লাবের হয়ে প্রায় ১২৫ গোল করেন তিনি। লাল-হলুদ জার্সি গায়ে একাধিক ডার্বি খেলেছেন ও গোলও করেছেন। তখন মোহনবাগান ক্লাবে বিদেশি ফুটবলার নেওয়ার চল ছিল বলে জামশেদের কখনও সবুজ-মেরুন জার্সি পরে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। তাঁর সেই আক্ষেপ দূর করেছেন পুত্র কিয়ান।

তবে বাবার সঙ্গে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়ে গিয়েছে কিয়ানের। আইএসএলের ওয়েবসাইটে কিয়ান বলেছেন, “ঘটনাটা আমাকে চমকে দিয়েছিল। কখনও ভাবিইনি যে, এমনও হতে পারে। কিন্তু এই বিশাল ঘটনাটা শুধু আমাকে চমকে দেয়নি, ক্লাবের সমর্থকদের ও আমার পরিবারের সদস্যদেরও চমকে দিয়েছিল। আমার বাবা সারা জীবন  ইস্টবেঙ্গলে খেলেছে আর আমি আছি সেই ক্লাবের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে। তবে এখন আমার কাছে সে সব অতীত। এখন আমি আগামী ডার্বির দিকে তাকিয়ে রয়েছি।”

আর পরিবারের মধ্যে পিতা-পুত্রের ‘দ্বৈরথ’? “বাড়িতে যেটা হয়, সেটা আসলে দ্বৈরথ নয়। বাড়িতে সবাই চায় আমি আরও ভাল খেলি। সে যে ক্লাবের হয়েই খেলি না কেন, বড় হোক বা ছোট। তবে সেই ম্যাচে আমাদের দল (মোহনবাগান) জেতার পর আমি বাবাকে মাঝে মাঝে রাগানোর চেষ্টা করতাম, ‘তোমার টিমকে হারিয়ে দিয়েছি’ বলে। তার ওপর আমি গোল করেছিলাম। কিন্তু বাবা তো হেসেই উড়িয়ে দিত। আমি যে রকম খেলছি এবং যেখানে খেলছি, তা নিয়ে বাবা-মায়ের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। বরং তাঁরা খুশি”, বলেন কিয়ান।

বাবা যেখানে বড় মাপের ফুটবলার, সেখানে ছোট থেকেই তাঁর জীবনেও বড় ফুটবলার হয়ে ওঠার একটা প্রচ্ছন্ন চাপ ছিলই। তবে কিয়ানের কাছে তা চাপ নয়, ছিল আনন্দ, নেশা। নিজেই সে কথা জানিয়ে বলেছেন, “ফুটবল খেলেই বড় হতে চেয়েছিলাম আমি। আমার বাবা-মায়ের এতে বড় ভূমিকা ছিল। ওঁরা সব সময় আমার পাশে ছিলেন। তবু বাবার সঙ্গে কখনও ফুটবল নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়নি। টুকটাক কথাবার্তা হত”।

একটা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু আর একটা স্বপ্নও পূরণ করতে হবে তাঁকে। সেই লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েই এগিয়ে চলেছেন তিনি। কী সেই লক্ষ্য? না, এর মধ্যে বিন্দুমাত্র অস্বাভাবিকত্ব নেই। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামতে চান তিনি। সে জন্য যে তাঁকে ক্লাব ফুটবলে নিয়মিত প্রথম এগারোয় থাকতে হবে। এখন এটাই তাঁর সবচেয়ে বড় ‘মিশন’, নিজেকে যে কোনও দলের প্রথম এগারোয় অবধারিত বাছাই করে তোলা।

বলেন, “আইএসএল-ই আমার কাছে ভারতের সবচেয়ে বড় লিগ। এর গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। কারণ, উঠতি ফুটবলাররা সবাই এই লিগে খেলতে চায় ও জাতীয় দলে ডাক পেতে চায়। আমিও জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চাই। এই লিগে অনেক ভাল ভাল দল খেলে। প্রতি বছরই কোনও না কোনও দল যোগ দিচ্ছে। সারা দেশের ফুটবলারদের কাছে এটা একটা বড় সুযোগ এবং আমি আইএসএলের অঙ্গ হয়ে উঠতে পেরে খুবই খুশি।”

আবার এক ডার্বি সামনে, আগামী শনিবারই। এই নিয়ে মরসুমের চতুর্থ ডার্বি এটি। প্রথম তিন ডার্বির মধ্যে দুটিতে জিতেছে ইস্টবেঙ্গল। গত তিন মরশুমে কোনও ডার্বি জিততে না পারার পর এই মরশুমেই চেনা ছন্দে ফিরে পাওয়া গিয়েছে ইস্টবেঙ্গলকে। ফলে শনিবারের ডার্বিতে যে ফুটবল যুদ্ধের পারদ চরম জায়গায় উঠবে, এই নিয়ে কোরও কোনও সন্দেহ নেই। এই ম্যাচেই কোচ হিসেবে মোহনবাগান ডাগ আউটে থাকবেন আন্তোনিও লোপেজ হাবাস।

তাঁর প্রশিক্ষণে দল নতুন দিশা দেখবে কী না, তার প্রতি সঠিক পথে এগোতে পারবে কি না, সে তো পরে বোঝা যাবে। কিন্তু হাবাসের প্রশিক্ষণে যে তিনি নিজেকে আরও উন্নতি করতে চান, এই কিয়ানের মনে কোনও সন্দেহ নেই। বরং তিন দিন পরেই মাঠে বল পড়ুক। যুবভারতীতে ডার্বির জনতা গর্জে উঠুক। তার পরে না হয় বোঝা যাবে নতুন তারকা ফের ঝলসে উঠবেন কি না।

(তথ্যসূত্র - ISL Media)

আরও পড়ুন: আইসিসি নিয়ে জল্পনার মাঝেই ফের এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জয় শাহ

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Weather Update 3 July : সকাল থেকে রাত থামবেই না বৃষ্টি, বুধ-বৃহস্পতিতে ৫ জেলায় জারি কমলা সতর্কতা
সকাল থেকে রাত থামবেই না বৃষ্টি, বুধ-বৃহস্পতিতে ৫ জেলায় জারি কমলা সতর্কতা
Hathras Satsang Stampede: 'গোয়েন্দা' থেকে স্বঘোষিত ধর্মগুরু, তাঁর সাক্ষাতে গিয়েই হাথরসে পদপিষ্ট শতাধিক, কে এই 'ভোলেবাবা'?
'গোয়েন্দা' থেকে স্বঘোষিত ধর্মগুরু, তাঁর সাক্ষাতে গিয়েই হাথরসে পদপিষ্ট শতাধিক, কে এই 'ভোলেবাবা'?
Hathras Satsang Stampede: হাথরসে 'সৎসঙ্গ' চলাকালীন হুলস্থুল, পদপিষ্ট হয়ে শিশু-সহ ১১৬ জনের মৃত্যু
হাথরসে 'সৎসঙ্গ' চলাকালীন হুলস্থুল, পদপিষ্ট হয়ে শিশু-সহ ১১৬ জনের মৃত্যু
NEET-PG Row: জুলাই মাসেই হতে পারে NEET-PG, প্রশ্নফাঁস রুখতে নয়া ভাবনা কেন্দ্রের
জুলাই মাসেই হতে পারে NEET-PG, প্রশ্নফাঁস রুখতে নয়া ভাবনা কেন্দ্রের
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Kalyan Banerjee: সংসদে কল্য়াণের 'চু কিত কিত...' মন্তব্য়ে হাসির রোল। ABP Ananda LiveTMC News:সন্দেশখালিতে শাহজাহান,চোপড়ায় তাজিমুল, প্রত্য়েকের বিরুদ্ধেই এলাকায় স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগAriadaha News: আড়িয়াদহে অশান্তির ঘটনায় তৃণমূল যোগ? ABP Ananda LiveHathras News: উত্তরপ্রদেশের হাথরসে পদপিষ্ট হয়ে ১১৬জনের মৃত্যু! কী বললেন যোগী আদিত্যনাথ?

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Weather Update 3 July : সকাল থেকে রাত থামবেই না বৃষ্টি, বুধ-বৃহস্পতিতে ৫ জেলায় জারি কমলা সতর্কতা
সকাল থেকে রাত থামবেই না বৃষ্টি, বুধ-বৃহস্পতিতে ৫ জেলায় জারি কমলা সতর্কতা
Hathras Satsang Stampede: 'গোয়েন্দা' থেকে স্বঘোষিত ধর্মগুরু, তাঁর সাক্ষাতে গিয়েই হাথরসে পদপিষ্ট শতাধিক, কে এই 'ভোলেবাবা'?
'গোয়েন্দা' থেকে স্বঘোষিত ধর্মগুরু, তাঁর সাক্ষাতে গিয়েই হাথরসে পদপিষ্ট শতাধিক, কে এই 'ভোলেবাবা'?
Hathras Satsang Stampede: হাথরসে 'সৎসঙ্গ' চলাকালীন হুলস্থুল, পদপিষ্ট হয়ে শিশু-সহ ১১৬ জনের মৃত্যু
হাথরসে 'সৎসঙ্গ' চলাকালীন হুলস্থুল, পদপিষ্ট হয়ে শিশু-সহ ১১৬ জনের মৃত্যু
NEET-PG Row: জুলাই মাসেই হতে পারে NEET-PG, প্রশ্নফাঁস রুখতে নয়া ভাবনা কেন্দ্রের
জুলাই মাসেই হতে পারে NEET-PG, প্রশ্নফাঁস রুখতে নয়া ভাবনা কেন্দ্রের
India Monsoon Update : জুনের ঘাটতি মিটবে জুলাইতে ! বর্ষার রুদ্ররূপ দেখতে পারে দেশ, বন্যার আশঙ্কা এই রাজ্যগুলিতে
জুনের ঘাটতি মিটবে জুলাইতে ! বর্ষার রুদ্ররূপ দেখতে পারে দেশ, বন্যার আশঙ্কা এই রাজ্যগুলিতে
Kalyan Banerjee: লোকসভায় দু'হাত তুলে চু কিত কিত কল্যাণের, ৪০০ পার নিয়ে তীব্র কটাক্ষ BJP-মোদিকে
লোকসভায় দু'হাত তুলে চু কিত কিত কল্যাণের, ৪০০ পার নিয়ে তীব্র কটাক্ষ BJP-মোদিকে
Rituparna Sengupta : 'দুর্নীতির টাকা জানতেন না', ৭০ লক্ষ 'টাকা ফেরাতে চান ঋতুপর্ণা'
'দুর্নীতির টাকা জানতেন না', ৭০ লক্ষ 'টাকা ফেরাতে চান ঋতুপর্ণা'
Health News: ফুচকায় ক্যানসারের বিষ! খাবার হিসেবে অযোগ্য?  কী বলছে খাদ্য সুরক্ষা দফতর
ফুচকায় ক্যানসারের বিষ! খাবার হিসেবে অযোগ্য? কী বলছে খাদ্য সুরক্ষা দফতর
Embed widget