Durga Puja 2021: প্রতিমার সঙ্গে পুজো পায় তরবারিও, জোড়বেড়িয়ার রায় পরিবারের দুর্গাপুজোর ইতিহাস গায়ে কাঁটা দেয়
রাজার অনুমতি নিয়ে ১১২৬ সালে মূর্তি পূজা শুরু করেছিলেন হারাধন রায়। চলতি বছর রায় পরিবারের দুর্গাপুজো পা দিচ্ছে দুশো বাহান্ন বছরে।
হংসরাজ সিংহ, পুরুলিয়া : ইংরেজদের হাত থেকে রাজাকে রক্ষা করতে পারেননি। তাই ক্ষোভে, দুঃখে অস্ত্র ত্যাগ করেছিলেন পঞ্চকোট রাজবংশের সেনাপতি হারাধন রায়। তবে, অস্ত্র ত্যাগ করলেও নিজের প্রিয় তরবারিটিকে ভুলতে পারেননি তিনি। তাই দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2021) সময়ে তরোয়ালটিকে নামিয়ে দেবী দুর্গার পুজোর সময়ে পুজো করতে নিজের প্রিয় অস্ত্রটিকেও। সেই থেকে পাড়া ব্লকের জোড়বেড়িয়া গ্রামের রায় পরিবারে চল আসছে এই প্রথা। রাজার অনুমতি নিয়ে ১১২৬ সালে মূর্তি পূজা শুরু করেছিলেন হারাধন রায়। চলতি বছর রায় পরিবারের দুর্গাপুজো পা দিচ্ছে দুশো বাহান্ন বছরে।
আরও পড়ুন - Durga Puja 2021 Special : কমলে কামিনী অভয়ারূপে পূজিতা দাঁ বাড়ির দেবী, পুজো এবার ৫০ বছরে
জোড়বেড়িয়ার রায় পরিবারের আদি বাসস্থান অবশ্য বর্ধমান জেলার মনপুর গ্রামে। অতীতে রায় বংশের পদবি ছিল পাঁজা। পরবর্তীকালে পঞ্চকোট রাজবংশের রাজা নীলমনি সিংহদেয় তাঁদের রায়বাহাদুর উপাধি দিয়েছিলেন। কালক্রমে তাই পাঁজার পরিবর্তে সেই পদবি বদলে রায় হয়েছে বলে জানা যায়। বংশের ইতিহাস অনুযায়ী রায় পরিবারের বংশধরদের পঞ্চকোট রাজবংশের রাজা গড়ুরনারায়ন সিংহদেয় বর্ধমানের মনপুর গ্রাম থেকে নিজের রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন শুকদেব পাঁজাকে। তাঁকে সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ করে জোড়বেড়িয়ার মৌজার একাংশ দান করেছিলেন। তবে, পঞ্চকোটের রাজাদের কাছ থেকে রায়বাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন রায় বংশের চতুর্থ পুরুষ হারাধন রায়। বংশানুক্রমিকভাবে তিনিও পঞ্চকোট রাজবংশে সেনাপতির দায়িত্ব সামলান।
আরও পড়ুন - Durga Puja 2021 Special: মহালয়াতেই সম্পন্ন দেবীর বোধন, মহামায়া রূপে পূজিত আসানসোলের ধেনুয়া গ্রামের দুর্গা
পুজো শুরুর ইতিহাস সম্পর্কে রায় বংশের বর্তমান বংশধর সাক্ষী গোপাল রায় জানাচ্ছেন যে, ইংরেজরা গ্রেফতার করতে এসেছিল পঞ্চকোট রাজবংশের রাজা নীলমনি সিংহদেয়কে। এই খবর পেয়েই তাদের বাধা দিতে তৈরি হয় তৎকালীন সেনাপতি হারাধন রায়। কিন্তু ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধ হলে শুধু লোকবলই ক্ষয় হবে এবং জেতার কোনও সম্ভাবনাই নেই দেখে তাঁকে যুদ্ধ থেকে নিরস্ত্র করেছিলেন নীলমনি সিংহদেয়। চোখের সামনে রাজাকে ইংরেজদের হাতে বন্দি হতে দেখে ক্ষোভে, দুঃখে অস্ত্র ত্যাগ করে সেনাপতির পদ ছেড়েছিলেন হারাধন রায়। শুরু করেছিলেন দুর্গাপুজো। তবে, যোদ্ধার রক্ত শরীরে বইতে থাকায় পুরোপুরিভাবে ভুলতে পারেননি প্রিয় অস্ত্রটিকে। তাই দুর্গাপুজোর সময়ে প্রতিমার সামনে প্রিয় তরবারিটিকে রেখে সেটিকেও পুজো করেছিলেন।
সেই শুরু। তারই ধারাবাহিকতা চলে আসছে রায় পরিবারে। এখনও পুজোর ঘট প্রতিষ্ঠার দিন বাড়ি থেকে তরোয়ালটিকে বের করে মন্দিরে এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতি বছর প্রতিমার সঙ্গে পুজো পায় তরোয়ালটিও। সেই তরোয়াল দিয়েই অষ্টমী, নবমী ও দশমীতে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয় বলে জানা যায়। রায় পরিবারের দুর্গাপুজোয় কোনওরকম পশু বলি দেওয়ার রীতি নেই। আড়াইশো বছর ধরেই পুজোর সঙ্গে বংশানুক্রমিকভাবে যুক্ত রয়েছে কিছু পরিবার। পুজোর বিভিন্ন কাজ করার জন্য কয়েকটি পরিবারকে জমিও দান করেছিলেন হারাধন রায়। সেই পরিবারগুলিই বংশানুক্রমিকভাবে দুর্গাপুজো করে আসছে। আদতে এটি রায় পরিবারের পুজো হলেও এখন সেই পুজো কার্যত সার্ব্বজনীন পুজোর রূপ নিয়েছে।
জোড়বেড়িয়া মৌজার মধ্যে থাকা সাত-আটটি গ্রামের একমাত্র পুজো এই রায় পরিবারের পুজো। তাই রায় পরিবারের দুর্গাপুজোতে সামিল হন ওই গ্রামগুলির সমস্ত বাসিন্দারা। অষ্টমী থেকে দশমী, এই তিনদিন মন্দির প্রাঙ্গনে পাত পেড়ে প্রসাদ গ্রহণ করেন এই সমস্ত গ্রামের শতাধিক মানুষ।