Hooghly News : ৫০ কিলোর পেল্লায় মাছ থেকে চুনোপুটি, ব্যান্ডেলের মাছের মেলায় মন মজল বাঙালির
Hooghly Uttarayan Mela : বাড়িতেই বসে ৫১৭ বছরের পুরানো মাছের মেলা। একদিনের এই মেলার জন্য অপেক্ষা থাকে সারা বছরের ।
সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি : শীত মানেই মেলা আর উৎসব। তবে এই মেলা এক্কেবারে অন্যরকম। মৎস্যবিলাসী বাঙালির জন্য এই মেলা একেবারে স্বর্গরাজ্য। রাঘব বোয়াল থেকে চুনো পুটি, শুটকি কী না পাওয়া যায় এখানে ! আছে ঢালাও রুই, কাতলা, ইলিশ, ভেটকি, ভোলা ভেটকি। রয়েছে কাঁকড়া, শংকর মাছও। মাছে-ভাতে বাঙালির কাছে এর থেকে লোভনীয় মেলা আর হতে পারে নাকি !
ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরের কেষ্টপুরের মাছের মেলা। চুনোপুটি থেকে ৫০ কিলো পর্যন্ত মাছ বিক্রি হয় এখানে । শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্যতম শিষ্য রঘুনাথ দাস গোস্বামী। তাঁর বাড়িতেই বসে ৫১৭ বছরের পুরানো মাছের মেলা। একদিনের এই মেলার জন্য অপেক্ষা থাকে সারা বছরের ।
মেলার সূত্রপাত বহুবছর আগে। স্থানীয় ইতিহাস বলে, জমিদার গোবর্ধন গোস্বামীর ছেলে রঘুনাথ দাস গোস্বামী। তাঁর বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই এই মেলার শুরু। ওই এলাকার জমিদার ছিলেন গোবর্ধন গোস্বামী। তারই ছেলে রঘুনাথ। তিনি সংসার ত্যাগ করেন সন্ন্যাস নেবেন বলে। মহাপ্রভু চৈতন্যের পারিষদ নিত্যানন্দের কাছে দীক্ষা নেবেন বলে যান পানিহাটিতে। তবে তাঁর বয়স তখন মাত্র ১৫ । তখন তাঁকে তিনি দীক্ষা দেননি নিত্যানন্দ।
নিত্যানন্দ রঘুনাথের ভক্তির পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলেন। তিনি তাঁকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। দীর্ঘ ৯ মাস পর বাড়ি ফেরে সে। সেই আনন্দে বাবা গোবর্ধন গোস্বামী গ্রামের মানুষকে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামের মানুষ কাঁচা আমের ঝোল ও ইলিশ মাছ খাওয়ার আবদার করে। তিনি ভক্তদের বলেন বাড়ির পাশে আম গাছ থেকে আম পেড়ে আনতে এবং পাশের জলাশয়ে জাল ফেলতে। সেই অনুযায়ী জাল ফেলতেই মেলে জোড়া ইলিশ । সেই সময় থেকে প্রতি বছর ভক্তরা রাধা গোবিন্দ মন্দিরে এদিন পুজো দেওয়ার পাশাপাশি মাছের মেলার আয়োজন করে।
এই মেলা নিয়ে অন্য গল্পও প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলেন,নিত্যানন্দ গোস্বামী রঘুনাথের ওপর খুশি হয়ে একটা তাঁকে কৃষ্ণমূর্তি দান করেন। সেই মূর্তি নিয়ে গ্রামে ফিরে এসে এক মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন রঘুনাথ । সেই থেকে এই অঞ্চলের নাম কৃষ্ণপুর বা কেষ্টপুর। দিনটি ছিল পয়লা মাঘ।
সেই থেকেই পয়লা মাঘ উত্তরায়ণ মেলা চলে আসছে। দূর দূরান্ত থেকে বহু মাছ ব্যবসায়ী নদী পুকুর ছাড়াও বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের পসরা নিয়ে বিক্রি করে।হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা,বাঁকুড়া থেকেও মানুষ এই মেলায় আসে।৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা কেজি মাছ বিক্রি হয়।শুধু মাছ কিনেই নিয়ে যায় না। অনেকেই পাশের আম বাগানে মাছ ভেজে পিকনিকের আয়োজনও করে নেয়।