Howrah News: একটি মাত্র ঘরে পাঁচটি শ্রেণির ক্লাস! স্বাধীনতা পূর্বের এই স্কুল জীর্ণদশা, ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা
School Condition: সময়ের সঙ্গে শুধু জৌলুসই হারায়নি, কার্যত ভগ্নপ্রায় অবস্থায় পরিণত হয়েছে স্কুলটি।

সুনীত হালদার, হাওড়া: স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠা। সরকারি স্বীকৃতি লাভও হয়। কিন্তু সেই স্কুলই এখন ভগ্নপ্রায়। পলেস্তরা খসে পড়ে গিয়েছে দেওয়ালের গা থেকে। ছাদ বলতে যা বোঝায়, তা তো নেই-ই। অবহেলায় চাপিয়ে দেওয়া ছাউনির অবস্থাও তথৈবচ। উপরে তাকালে খোলা আকাশ নজরে পড়ে ভালই। বৃষ্টির সংস্পর্শেই বোধহয়, পোড়ে দেওয়ালের গা ঘেঁষে, সিমেন্টে বাঁধানো মেঝে ফুঁড়ে ডালপালা মেলেছে সবুজ গাছ (School in Ruin)। ছেলেমেয়েকে এমন স্কুলে পাঠাতে ভয়ই পান অভিভাবকরা। এমনই অবস্থা স্কুলের যে পড়ুয়ারা স্কুলে এলে, ক্লাস করাতেই সমস্যায় পড়েন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তা নিয়ে জমা হচ্ছে ক্ষোভ (Howrah News)।
স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত স্কুল এখন ভগ্নপ্রায়
হাওড়ার সাঁকরাইলের ধুলোগড় ওয়েস্ট মুসলিম পাড়া প্রাথমিক স্কুলেরই এমন চিত্র সামনে এসেছে। স্কুলে গিয়ে দেখা গেল একই শ্রেণিকক্ষে একসঙ্গে পাঁচটি ক্লাসের পঠন-পাঠন চলছে। তিন জন শিক্ষক মিলে ক্লাস নিচ্ছেন তার মধ্যেই। বাকি ঘরগুলির এতটাই জরাজীর্ণ, কখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, বলা যায় না। তাতেই একটি ঘরে সব পড়ুয়াদের বসিয়ে চলছে ক্লাস। তাতে পড়ুয়াদের সমস্যা তো হচ্ছেই, অভিভাবকরাও চরম ক্ষুব্ধ। জেলা শিক্ষা দফতর অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক বলে দাবি তাঁদের।
সাঁকরাইলের ধুলোগড় ওয়েস্ট মুসলিম পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এলাকার বয়স প্রায় ৭৮ বছর। স্বাধীনতার আগে, খাতায় কলমে ১৯৪৪ সালে স্কুলটির প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৫৫ সালে স্কুলটিকে স্বীকৃতি দেয় সরকার। শিক্ষার মানের জন্য একসময় পরিচিত ছিল স্কুলটি। দিব্যিই চলছিল স্কুল। পরিবেশও ছিল জমজমাট। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য একসময় মা-বাবাদের অন্যতম ভরসার জায়গা ছিল এই স্কুল।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে শুধু জৌলুসই হারায়নি, কার্যত ভগ্নপ্রায় অবস্থায় পরিণত হয়েছে স্কুলটি। পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক যে, ঝড়, জল বৃষ্টিতে ক্লাস করানোর উপায় থাকে না। একটি মাত্র পাকা ঘর রয়েছে। তাতেই প্রি প্রাইমারি থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে বসানো হয়। আবার ওই ঘরেরই এক কোণে জমা থাকে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ চাল-ডালের বস্তা। তারই মধ্যে একসঙ্গে কখনও দুই জন, কখনও আবার তিন জন শিক্ষক মিলে ছাত্রছাত্রীদের পড়ান।
এ ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে স্বভাতই সমস্যায় পড়ছে ছোট ছেলেমেয়েগুলি। বর্তমানে ৫৪ জন ছাত্রছাত্রী, একজন পার্শ্ব শিক্ষক-সহ মোট চার জন শিক্ষক রয়েছেন স্কুলে। কোনও দিন একসঙ্গে সব ছাত্র-ছাত্রী চলে এলে ভাঙা ক্লাসরুমে উঠে যেতে হয়। তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তাঁরা জানিয়েছেন এতে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে দূরে অন্য স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করতে হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত অফিস থেকে শুরু করে জেলা শিক্ষা দফতরকে জানানো সত্ত্বেও, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবিলম্বে তাঁরা স্কুলের ঘরগুলির মেরামতির দাবি করেছেন।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোতোষ রায় পরিস্থিতি মেনে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, বাধ্য হয়ে একই ক্লাসরুমে পাঁচটি ক্লাস নিতে হয় তাঁদের। এমনকি মাঝে মধ্যে অফিস ঘরেও ক্লাস নিতে বাধ্য হন। তিনি জানিয়েছেন, স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা এলেও ক্লাসরুম না থাকায় অনেককে ভর্তি নিতে পারছেন না।
একই ঘরে পাঁচটি শ্রেণির ক্লাস!
এ দিকে ডিস্ট্রিক্ট প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ জানান, ওই স্কুলে দু'টি অতিরিক্ত ক্লাসরুমের জন্য টাকা বরাদ্দ থাকলেও, আইনি জটিলতার কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে কাউন্সিলের লিগাল সেল এই বিষয়টি দেখছে। তাঁরা আদালতের কাছে আবেদন করবেন, যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নির্মাণে অনুমতি দেয়।






















