Suri Bank Fraud: অ্যাকাউন্টে কোটি টাকা লেনদেন, জানেনই না গ্রাহক! কী রহস্য?
CBI: কোথাও নথির সইয়ে মিল নেই, কোথাও মৃত ব্যক্তির নামে অ্যাকাউন্ট।
প্রকাশ সিনহা, সিউড়ি, বীরভূম: কারও নামে যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তা তিনি নিজেই জানেন না। কারও সইয়ের সঙ্গে ব্যাঙ্কের নথির সই মেলেনি। আবার কোথাও মৃত ব্যক্তির নামেই রয়েছে অ্যাকাউন্ট। সিউড়ির সমবায় ব্যাঙ্কে যে ১৭৭টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছে সিবিআই, তা নিয়ে উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। এমনকি সিবিআইয়ের অনুমান, ওই অ্যাকাউন্টগুলির নথিতে যে হাতের লেখা রয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে একজনই ওই নথিতে লিখেছে। তা নিয়ে আরও ভালভাবে বুঝতে হস্তলিপি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
সিউড়ির সমবায় ব্যাঙ্কে ১৭৭টি বেনামি অ্যাকাউন্টের হদিশ। সিবিআইয়ের দাবি, অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে ১০ কোটিরও বেশি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। ১৬০টি অ্যাকাউন্টের মধ্যে শুধু ৫৪ টি অ্যাকাউন্টেই মিলেছে ৪ কোটি টাকার লেনদেনের হদিশ। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, বেশিরভাগ অ্যাকাউন্ট হোল্ডারই পেশায় চাষি। সিবিআই সূত্রে খবর, গরিব মানুষের কাছে অল্প দামে নগদে ধান কিনে চালকলে চাল করে খাদ্য দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিক্রিমূল্য হিসেবে পাওয়া চেক এই সব বেনামি অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে। সিবিআইয়ের তলবে নিজাম প্য়ালেসে হাজির হয়েছেন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার।
ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্ট রহস্য়:
ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি, যাঁদের নামে অ্যাকাউন্ট তাঁরা তা জানেনই না। পরিস্থিতি ঠিক কীরকম তা খতিয়ে দেখতে এবিপি আনন্দের প্রতিনিধি পৌঁছে যান সিউড়ির সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের হরিপুর গ্রামে। সিউড়ির ব্যাঙ্কে সুন্দরী বসাকীর নামে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ফর্মে সই করেছেন তিনি নিজেই। অথচ তিনি তা জানেনই না। তাঁর দাবি, তিনি সই করতেই পারেন না। তাহলে কে সই করল ফর্মে? সুন্দরী বসাকী চাষের কাজ করেন। তাঁর দাবি, শুধুমাত্র ইউকো ব্যাঙ্কেই তার একমাত্র অ্যাকাউন্ট, যাতে আড়াই হাজার টাকা রয়েছে। অথচ সিউড়ির ব্যাঙ্ক থেকে তার নামে খোলা অ্য়াকাউন্টের মাধ্যমে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে।
আসল সই-নকল সই:
হরিপুর গ্রামেরই আরেক বাসিন্দা মমতা মৃধা। তিনি ক্যামেরার সামনেই সই করে দেখান। তবে সিউড়ির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ফর্মে যে সই রয়েছে তার সঙ্গে হাতের লেখার কোনও মিল নেই। মাসে ২ হাজার টাকা উপার্জন করেন তিনি। অথচ তাঁর অ্য়াকাউন্ট থেকে লক্ষাধিক টাকার লেনদেন হয়েছে। পুরোটাই তাঁর অজানা, দাবি ওই বাসিন্দার।
মৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট:
সিউড়ির সমবায় ব্যাঙ্কে মৃত ব্যক্তির নামেও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এমনটাই অভিযোগ করলেন পিয়াসাড়ার বাসিন্দা ভগীরথ ঘোষ। তাঁর দাবি, তাঁর ভাই গোপাল ঘোষ ৩ বছর আগেই মারা গেছেন। এমনকী কোনও অ্য়াকাউন্টও ছিল না তাঁর। অথচ সিউড়ির সমবায় ব্যাঙ্কে গোপাল ঘোষের নামে খোলা অ্য়াকাউন্ট এখনও চলছে।
হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা সুনীল মুর্মুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস দিয়েছে সিবিআই। তার ছেলের অভিযোগ ১০০ দিনের কাজের জন্য নথি দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই কেউ তা সরিয়ে ভুয়ো অ্য়াকাউন্ট খোলার জন্য় ব্য়বহার করেছে।
কী বলছেন মন্ত্রী:
সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, 'লাইসেন্স আমরা দিই, কিন্তু ব্যাঙ্ক যখন, তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কই সব দেখে, ওরা ওদের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে।'
আরও খবর: সমবায় ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে আজব কাণ্ড, গ্রাহকদের অজান্তেই ৬০ থেকে ৭০ লক্ষের লেনদেন