Suvendu Adhikari Audio Clip: এবার নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে কথোপকথনের অডি টেপ ফাঁস! শোরগোল রাজ্য রাজনীতিতে
রাজ্য রাজনীতিতে ফের হইচই। ভোটের ফল প্রকাশের পর সামনে এল আর একটি অডিও টেপ। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি প্রলয় পালের দাবি, তাঁর সঙ্গে এই টেপে রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর কণ্ঠস্বর। যদিও নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি শুভেন্দু। টেপ নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ তৃণমূলের। প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
বিটন চক্রবর্তী, অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও আশাবুল হোসেন,পূর্ব মেদিনীপুর ও কলকাতা : রাজ্য রাজনীতিতে ফের হইচই। ভোটের ফল প্রকাশের পর সামনে এল আর একটি অডিও টেপ। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি প্রলয় পালের দাবি, তাঁর সঙ্গে এই টেপে রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর কণ্ঠস্বর। যদিও নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি শুভেন্দু। টেপ নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ তৃণমূলের। প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
ভোটের মধ্যে একাধিক অডিও টেপ ফাঁস তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। এবার ভোটের ফল বেরোনোর পর সামনে এল আরও এক চাঞ্চল্যলকর অডিও টেপ। নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা প্রলয় পাল, যাঁর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথপোকথনের অডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর, বিজেপি তেড়েফুঁড়ে উঠেছিল, সেই শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতার সঙ্গে আরেক বিজেপি নেতার টেলিফোনিক কথপোকথনই এখন ভাইরাল।
আর বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি প্রলয় পালের দাবি, তাঁর সঙ্গে এই অডিও টেপের যাঁর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছেন তিনি আর কেউ নন, খোদ শুভেন্দু অধিকারী।
কী রয়েছে ভাইরাল হওয়া এই অডিও ক্লিপে? এখানে দুই বিজেপি নেতাকে, নন্দীগ্রামে হিন্দু-মুসলিম এলাকায় কীভাবে ভোট পড়েছে, তা নিয়ে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে!
অডিও ক্লিপে কথপোকথন এই রকম-
‘শুভেন্দু অধিকারী: আর হিন্দুরা একটু বুঝুক।
প্রলয় পাল: হিন্দুদের একটু বোঝার দরকারও আছে।
শুভেন্দু অধিকারী: শুভেন্দু ৪০০, মমতা ৩০০। আর মুসলমান পাড়ায় ৭০০--তে ৭০০ মমতা। মুসলমান বুথগুলো দেখেছেন তো?
প্রলয় পাল: হ্যাঁ দেখেছি, দেখেছি।
শুভেন্দু অধিকারী: ৫টা-১০টা-১২টা ১৫টা....
প্রলয় পাল: কিন্তু কেন্দামারিতে ভাল ইয়ে করেছে দেখলাম। যে হিন্দুগুলো ছিল, এক কাট্টা ছিল।
কেন্দামারিতে। কিন্তু ওরা তো থাকতেই পারছে না এলাকায়।
শুভেন্দু অধিকারী: হ্যাঁ
প্রলয় পাল: কেন্দামারির সব হিন্দু ভোটার আমাদের ভোট দিয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারী: দিলেও কেন্দামারিতে ৫ হাজারের লিড হয়েছে ওদের!’
অর্থাত একটা বিষয় স্পষ্ট, নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝুলিতে বহু হিন্দু ভোটও যাওয়ায় খুশি নন বিজেপি নেতারা!নন্দীগ্রামে ভোটের আগে থেকেই অবশ্য নাম না করে হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণের প্রসঙ্গ বারবার উঠছিল!
শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘সে দিন আমি এক ভাইয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছিলাম এই ভেটুরিয়ায়। যারা পাকিস্তান খেলায় জিতলে বাজি ফাটায়, তারা খুব সে দিন লম্ফঝম্প করেছিল। আমি ছবি তুলে রেখেছি। ১ তারিখ ভোট মিটে গেলে আমি ২ তারিখেই আসব। এসে মিষ্টি খাইয়ে যাব ওদের।’’
শুভেন্দু আরও বলেছিলেন, ‘ওদের ভরসা ৬২ হাজার ভোট আর অন্যদিকে ২ লক্ষ ১৩ হাজার জয় শ্রীরাম বলা লোক রয়েছেন।’
এর পাশাপাশি দুই বিজেপি নেতার অডিও ক্লিপে আরও বহু কথা বলতে শোনা গেছে।
‘প্রলয় পাল: প্রলয় পাল বলছিলাম।
শুভেন্দু অধিকারী: হ্যাঁ, ফোন করেছিলেন?
প্রলয় পাল: ফোন করেছিলাম বলতে, এ তো চতুর্দিকে গণ্ডগোল, মারামারি, বাড়িঘর ভাঙচুর করছে।
শুভেন্দু অধিকারী: না না, আপনাকে বলি, আমাদের যেটা, এটা তো স্বাভাবিক ওরা করবেই। ভোটের সময় করেছে। আমার সার্টিফিকেট নিতে গেছি কালকে গাড়ি ভেঙে, মাথা তো শেষ করে দিত আমার!
প্রলয় পাল: আপনাকে তো? দেখেছি...
শুভেন্দু অধিকারী: আমি নিজে আক্রান্ত যেখানে, পুলিশ দর্শক। পুলিশ দেখে নিয়েছে, রাজ্য সরকার ওদের। তাদের আর চটিয়ে লাভ কী? ভোটের সময় করতে দেয়নি। আমার যেটা বক্তব্য, সেটা হচ্ছে, যেখানে ফুল হিন্দু এলাকা, সেখানে সবাইকে শক্ত থাকা।
প্রলয় পাল: আমি দাদা বলেছি যেটা যে, ভোটের আগে যেভাবে প্রত্যেকটা পরিবার পুরুষ-মহিলা এক হয়ে থাকতাম, এখন সেভাবে থাকতে হবে।
শুভেন্দু অধিকারী: দ্বিতীয় হচ্ছে, যেখানে মিশ্র এলাকা, যাঁরা আহত হয়েছে, রাজা, নয়নকে অ্যাকটিভ করে দিয়েছি, চিকিত্সার দায়িত্ব আমার। দ্বিতীয় হচ্ছে, যাঁদের ঘরবাড়ি লুঠ-ভাঙচুর করেছে কাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত, সেখানে আপনার ক্ষয়ক্ষতির তালিকা স্থানীয় নেতৃত্ব বা মণ্ডল সভাপতি তৈরি করে রাখুক, আমরা তাঁদেরকে কমপেনশেট করব।
প্রলয় পাল: বিষয়টা হচ্ছে, আমাদের সব নেতাগুলো তো সব ফোন সুইচ অফ করে দিয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারী: না না, তাঁরা তো ঘরে ফিরেছে কাউন্টিং থেকে। তাঁদের তো পুলিশ দিয়ে বের করতে হয়েছে। একটু আগে ফিরেছে। ৯টার সময় ফিরেছে।
প্রলয় পাল: ঠিক আছে, আপনি একটু থাকুন, দেখছি কীভাবে কী করা যায়...
শুভেন্দু অধিকারী: ফোর্থ হচ্ছে, আপনাকে বলছি না, পুলিশ সকাল থেকে মুভ করেনি। আমি হাত লাগানোর পরে, আমি সকাল থেকে আপনাদের ফোন না ধরে, SP, DIG-দের সব জানিয়ে, এই ১১টার পর থেকে পুলিশ মুভমেন্ট করছে। আর ফোর্থ হচ্ছে, আমাদের ইমপরট্যান্ট বা ভাইটাল ছেলে, তাঁদেরকে গোকুলনগর, সোনাচূড়া বা এদিকে বয়াল-টয়ালে যেখানে হিন্দু বেল্ট আছে, আপনি বলুন পবিত্রকে, বটকে আর ওদিকে জয়দেবকে, সেফ জায়গা তৈরি করে, কিছু যাঁরা আছেন এদিকে, বিরুলিয়ার দিকেও একটা করতে পারেন, কোথাও আমাদের সেফ জোনে, তাঁদেরকে থাকা খাওয়ার ২-৪ দিনের ব্যবস্থা করা।
প্রলয় পাল: আচ্ছা
শুভেন্দু অধিকারী: এগুলো করুন, সবার ফোন ধরুন।
প্রলয় পাল: না, আমি সবার ফোন ধরছি।
শুভেন্দু অধিকারী: সবার ফোন ধরুন, সবার উত্তর দেন। আমাকে আজকের দিনটা বাদ দেন, আমি নিজেও ৩টের সময় এসেছি।
প্রলয় পাল: না না, আপনার এখন আসার দরকার নেই।
শুভেন্দু অধিকারী: আজকের দিনটা বাদ দেন। আমরা কালকে কোথাও বসব। বসে, এখন তো একটি উত্তাপ, উত্তেজনা ওরা করবেই।
প্রলয় পাল: হ্যাঁ
শুভেন্দু অধিকারী: তা কালকে আমরা বসব, আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে সব করে নেব।
প্রলয় পাল: আচ্ছা ঠিক আছে দাদা। ‘
এই অডিও ক্লিপেই যেখানে বিজেপির রাজনৈতিক শক্তি কম, সেখানে আক্রান্তদের কাছে নেতৃত্বকে না যাওয়ার জন্য প্রলয় পালকে পরামর্শ দিতে শোনা যাচ্ছে ওই দ্বিতীয় কণ্ঠস্বরকে, যাঁকে শুভেন্দু অধিকারী বলে দাবি করেছেন খোদ প্রলয় পালই!
‘শুভেন্দু অধিকারী: আর যেখানে মিশ্র এলাকা, শক্তি কম, সেখানে হঠাত্ করে নেতৃত্বের চলে যাওয়ার দরকার নেই।
প্রলয় পাল: না না...
শুভেন্দু অধিকারী: মার খেয়ে যাবে। বলবে শুভেন্দু অধিকারীর যদি গাড়ি ভাঙে, মানে আমার মাথায় ঢিল ছুড়ছিল, বুলেটপ্রুফ গাড়ি ছিল বলে বেঁচে গেছি। না হলে হাসপাতালে যেতে হত। সেক্ষেত্রে আপনাদের তো পুঁতে দেবে।
প্রলয় পাল: না না, আমাকে তো রাখবে না। জ্যান্ত পুঁতে দেবে।
শুভেন্দু অধিকারী: হিন্দু বেল্টে আমাদের লোককে শক্ত থাকতে বলুন। আরে আমি ওসব অনেক দেখেছি। আমরা ঘুরিয়ে নেব জায়গা।
প্রলয় পাল: হ্যাঁ, ঠিক আছে দাদা।
শুভেন্দু অধিকারী: জায়গা ঘুরিয়ে নেব।
প্রলয় পাল: হ্যাঁ, হ্যাঁ’
ভাইরাল এই অডিও ক্লিপে তাঁর পাশাপাশি দ্বিতীয় কণ্ঠস্বরটি যে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর, তা স্বীকার করে নিয়েছেন তমলুকের বিজেপি নেতা প্রলয় পাল। কিন্তু এ নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন অধিকারী বাড়ির মেজ ছেলে।
এই অডিও ক্লিপ সামনে আসার পরেই বিজেপিকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। যদিও এই অডিও ক্লিপ নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপি নেতা প্রলয় পাল, কখনও বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে শিশির বাজোরিয়া, আবার কখনও কয়লাকাণ্ড নিয়ে ভোটের মাঝেই ভাইরাল হয় একাধিক অডিও ক্লিপ। এবার তৃতীয়বারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার দিন আরও এক ভাইরাল অডিও ক্লিপ সামনে এল।