স্বরাষ্ট্র দফতর অন্তত জানুক, রাজ্যের বোমা শিল্প কোথায় কেমন চলছে : হাইকোর্ট
এদিন বিচারপতি মান্থা বলেন, 'বোমাবাজির অভিযোগ আছে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে কি সেকথা জানিয়েছে থানা?
সৌভিক মজুমদার, সমীরণ পাল ও ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা : একের পর এক মৃত্য়ু, মুড়ি মুড়কির মতো বোমা। গুলি, পরপর গাড়িতে আগুন, লাঠি-বাঁশ হাতে দুর্বৃত্তদের দাপাদাপি, ভাঙড় থেকে ক্য়ানিং, পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে ( Nomination Filing ) রাজ্য়ের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা গেছে এই ভয়ঙ্কর হিংসার ছবি। তাহলে পুলিশ কী করছিল? পুলিশ কি এসব ঘটনা স্বরাষ্ট্র দফতরকে ( State Home Department ) জানিয়েছে? স্বরাষ্ট্র দফতর অন্তত জানুক, রাজ্যের বোমা শিল্প কোথায় কেমন চলছে।
মঙ্গলবার কার্যত এই ভাষাতেই পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা ( Raja Sekhar Mantha ) । মনোনয়নের শেষ দিনে, বেলাগাম সন্ত্রাসের মধ্য়ে, বিচারপতি মান্থা, নজিরবিহীন ভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কলকাতা পুলিশকে এসকর্ট দিয়ে, হাইকোর্টে হাজির বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন জমার জন্য গন্তব্যে পাঠাতে হবে। কিন্তু তারপরও দেখা যায় লাগাতার সন্ত্রাসের ছবিটা। অভিযোগ ওঠে, পুলিশের গাড়ি থামিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধা দেয় তৃণমূল।
আইনজীবী ফিরদৌস শামিম অভিযোগ করেন, ভাঙড়ের শোনপুর বাজারের কাছে পুলিশি প্রহরায় আসা ISF প্রার্থীদের ওপর হামলা চালায় তৃণমূল। যাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, সেই পুলিশকর্মীরা তখন সেখান থেকে সরে যায় বলে অভিযোগ। এরপরই শুরু হয় হামলা।
আরও পড়ুন :
হাইপারটেনশন থেকে হতে পারে চোখের ভয়ঙ্কর রোগ, হারাতে পারেন দৃষ্টিও !
গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্য়ু হয় আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিনের। সেই মামলার প্রসঙ্গে এদিন বিচারপতি মান্থা বলেন, ভাঙড়, কাশীপুর, হাড়োয়া, বসিরহাট নিয়ে আদালতের নির্দেশের পরও মামলাকারীদের মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ
জায়গায় জায়গায় বোমাবাজি ও গুলি চলেছে। এই ঘটনায় রাজ্য় সরকারের কাছে জবাব তলব করেছেন বিচারপতি মান্থা।
ক্যানিং, মিনাখা, ভাঙড়, ন্যাজাট, জীবনতলা এলাকায় মনোনয়নের জন্য কত সংখ্য়ক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল, রাজ্য় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি, বুধ থেকে শুক্রবার, সংশ্লিষ্ট এলাকার BDO অফিস চত্বরের সিসিটিভি ফুটেজ তলব করেছেন বিচারপতি। ১০ দিনের মধ্যে হলফনামা আকারে জবাব চাওয়া হয়েছে।
অন্য়দিকে, ক্য়ানিং-এ অশান্তির ঘটনায়, জেলার পুলিশ সুপার ও একজন অতিরিক্ত সুপার মর্যাদার অফিসার নিয়োগ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মান্থা। পাশাপাশি, ক্য়ানিং পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক পরেশরাম দাস, ক্য়ানিং থানার IC ও ক্য়ানিংয়ের SDPO-র বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের FIR গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।
কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ক্যানিং-এর তৃণমূল পরিচালিত হাটপুকুরিয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সিরাজুল ইসলাম ঘরামি। ঘটনার CBI অথবা NIA তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। সেই মামলায়, এদিন বিচারপতি মান্থা বলেন, বোমাবাজির অভিযোগ আছে। 'রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে কি সেকথা জানিয়েছে থানা? আমি NIA র কথা বলছি না।
সেটা নিয়ে আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর তো জানুক রাজ্যের বোমা শিল্প কোথায় কেমন চলছে।'
হিংসা বিধ্বস্ত ক্য়ানিংয়ের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। ১২-ই জুলাইয়ের মধ্য়ে পুলিশের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে হাইকোর্ট।