WB Election 2021 : তালিকায় পানমশলা থেকে ইলিশ মাছ ! বাংলার ভোট মরশুমে অন্য রেকর্ড
গরমাগরম বক্তব্য, নেতানেত্রীদের লড়কে লেঙ্গে চালচলনের আড়ালে বাংলায় রেকর্ড গড়ল আরেকটি জিনিস। ভোটের 'ভেট' বাজেয়াপ্তে রেকর্ড গড়ল পরিসংখ্যান।
কলকাতা : ভোট কিনতে 'ভেট' বাইরের রাজ্যে নতুন কিছু নয়। কিছুদিন আগে উত্তরপ্রদেশে ভোট কিনতে জিলিপি আর সিঙারা বিলিয়ে হাতকড়া পরতে হয়েছিল প্রার্থীকে। বাংলার ভোটে এহেন ছোটোখাটো 'ভেট'-এর নজির খুব একটা চোখে না পড়লেও এবার ভোটের বাজারে পরিসংখ্যান অবশ্য একটু অন্য সুরে গাইছে। পরিসংখ্যান বলছে, বঙ্গভোটের আগে এ যাবৎ পুলিশ-প্রশাসন যা কিছু বাজেয়াপ্ত করেছে, চলতি ভোট মরশুমে সেই অঙ্কটা বেশ বেশি। তাহলে কি উৎকোচ দিয়ে ভোট কেনার তত্ত্ব জাঁকিয়ে বসছে বাংলাতেও ? উঠছে প্রশ্ন।
সংবাদসংস্থা আইএএনএস সূত্রে খবর, নির্বাচন কমিশনের অধীনে কর্মরত পৃথক পৃথক কিছু এজেন্সি ভোট মরশুমে যে সমস্ত জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে তার মূল্য এক-দুই নয়, দুশো নব্বই কোটি টাকারও বেশি। ভোট ঘোষণার দিন থেকে এখনও পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত সামগ্রীর মূল্য ২৯০.৪ কোটি।
এরমধ্যে নগদ উদ্ধার হয়েছে সাতচল্লিশ কোটি আশি লাখ টাকা। আটাশ কোটি তিরিশ লাখ টাকা মূল্যের মদ। নারকোটিকস সামগ্রী একশো আঠেরো কোটি কুড়ি লাখ টাকা মূল্যের। সোনা-রূপো উদ্ধার হয়েছে এগারো কোটি আশি লাখ টাকার। আর অন্যান্য বিনামূল্যে বিতরণ সামগ্রীর মূল্য চুরাশি কোটি তিরিশ লাখ টাকা।
কমিশনের এক পদস্থ আধিকারিক সংবাদসংস্থাকে জানান, রাজ্যে ভোট এখন মাঝপথে। এরমধ্যে এত বড় অঙ্কের বাজেয়াপ্ত সামগ্রী ভোটারদের প্রভাবিত করতে ব্যবহার করা হত।
কী কী আছে কমিশনের বাজেয়াপ্ত তালিকায়
শুধু সোনা-রূপো বা নগদ নয়। মোবাইল ফোন থেকে রেডিমেড শাড়ি, তামাক-পানমশলা থেকে ইলিশ মাছও বাজেয়াপ্ত করেছে এজেন্সি। ওই আধিকারিক জানান, মূলত বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে এগুলি উদ্ধার করে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যদিও কেউ গ্রেফতার হয়নি।
এটা পরিষ্কার, ভোটারদের প্রভাবিত করতেই এই সামগ্রীগুলি বিলি-বণ্টনের ব্যবস্থা করা হচ্ছিল।
কমিশনের ওই আধিকারিক আরও জানান, ভোট মরশুমে বাজেয়াপ্ত সামগ্রীর মূল্য এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ভেঙেছে অতীতের রেকর্ড। দুহাজার উনিশ সালের লোকসভা নির্বাচনে অঙ্কটা ছিল একশো সাতাত্তর কোটি পঞ্চাশ লক্ষের। তারমধ্যে পঁয়ষট্টি কোটি ন লক্ষ টাকা ছিল নগদ এবং মদ ছিল একশো এগারো কোটি ছয় লাখ টাকা মূল্যের।
গত ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনেও বাজেয়াপ্ত সামগ্রী টাকার হিসেবে তুলনায় আহামরি কিছু ছিল না। বাজেয়াপ্ত সামগ্রীর মূল্য ছিল আট কোটি কুড়ি লাখ টাকা। তারমধ্যে নগদ উদ্ধার হয়েছিল সাত কোটি আশি লাখ টাকা। মদ উদ্ধার হয়েছিল ৪০ লাখ ৫ হাজার টাকার। আর্থিক দিক দিয়ে স্পর্শকাতর কোনও কেন্দ্র ছিল না সেবার। তবে, ওই আধিকারিকের মতে, এবার ভোটের পর কমিশনকে বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। সাম্প্রতিক ট্রেন্ড বলছে, তামিলনাড়ু ও অসমের মতো ভোটের সময় রাজ্যে পা ফেলছে 'মানি পাওয়ার'।
ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারির পর থেকে বিষয়টি দেখভালের জন্য সবকটি কেন্দ্রে গড়া হয় বিশেষ নজরদারি টিম (SST)। ছিল ফ্লাইং স্কোয়াডও। বিশেষভাবে তৎপর ছিল পুলিশ, এসটিএফ এবং গোয়েন্দা দফতর। ভোট ঘোষণার পর থেকে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ, রাজ্য আবগারি দফতর, আয়কর বিভাগ, ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স, নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো, ফ্লাইং স্কোয়াড, বিশেষ নজরদারি টিম (SST) ও অন্যান্য এজেন্সির সদা তৎপরতায় এই বড় অঙ্কের সামগ্রীকে বাজেয়াপ্ত করতে সক্ষম হয় কমিশন।