রাজনৈতিক ব্যঙ্গ থাকলেও কোনও দলকে ছোট বা বড় করতে চাইনি: দেব
আগামী ১০ অক্টোবর মুক্তি পাচ্ছে দেব প্রযোজিত ছবি 'হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী'। আজ ট্রেলার ও মিউজিক লঞ্চের অনুষ্ঠানে এসে এবিপি লাইভের সঙ্গে নতুন ছবির নস্টালজিয়ায় ভাসলেন দেব।
কলকাতা: সিনেমাহলের আলো নিভতেই ভেসে এল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের গলা। যে রাজ্যে মুড়ি মিছরির দাম এক হয়, সে রাজ্যে আর এক মুহূর্ত থাকা উচিত নয়।' প্রথমে ট্রেলার, তারপরে গান। হঠাৎ করেই একটা ছোট্ট সফর করে ফেলা গেল বোম্বাগড় রাজ্যের। আলাপ হল সেখানকার রাজা, রানি আর মন্ত্রীর সঙ্গেও।
বোম্বাগড় থেকে ফিরে একটা ছোট্ট কফি-ব্রেক নিচ্ছিলেন প্রযোজক দেব। আগামী ১০ অক্টোবর মুক্তি পাচ্ছে তাঁর প্রযোজিত ও অনিকেত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি 'হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী'। আজ ট্রেলার ও মিউজিক লঞ্চের অনুষ্ঠানে এসে এবিপি লাইভের সঙ্গে নতুন ছবির নস্টালজিয়ায় ভাসলেন দেব।
অনলাইন ক্লাসে ব্যস্ত শিশুরা, রূপকথা পড়ার সময় কই? তাদের কথা ভেবেই কি পুজোয় রাজা-রানি-মন্ত্রীর গল্প উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করলেন প্রযোজক? দেব বলছেন, 'শুধু ছোটরা নয়, যাঁরা 'গুপি গায়েন বাঘা বায়েন' দেখেছেন, 'হীরক রাজার দেশে' দেখেছেন, যাঁরা ডিজনির রূপকথা দেখেছেন, তাঁরা সবাই আমাদের দর্শক। বাংলা ছবির যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁরা এতদিন অপেক্ষা করে এসেছেন একটা আন্তর্জাতিক মানের ছবি দেখবেন বলে। ওইরকম সেট, জাঁকজমক.. সবটা মিলিয়ে ছোটবেলার একটা সফর যেন। আমরা রূপকথা পড়ে ভাবতাম, সত্যি রাজাকে কেমন দেখতে হয়? রানি কি এতগুলো গয়না পরে? রাজ্যে এত সৈন্য থাকে?
যা যা কল্পনা করতাম, সেটাকেই আমরা বাস্তবে পর্দায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চারসের জন্মই হয়েছিল অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য। সেই জায়গা থেকেই 'চ্যাম্প' বা 'ককপিট'-এর মত ছবি হয়েছে। এবার চেয়েছিলাম এমন কিছু করতে যেটা দর্শক বাংলা ছবিতে দেখেননি। যখন এই গল্পটা আমার কাছে অভিনয়ের জন্য আসে, মনে হয়েছিল আমায় রাজা হবুচন্দ্র হিসেবে মানাবে না। এমন কোনও অভিনেতাকে চাই যাঁর চালচলনে একটা পুরনো আদল থাকবে। সেই থেকেই অপুদার (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) কথা মাথায় এল। তারপর মন্ত্রী। সেটা তো আরও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সেটার জন্য খরাজদাকেই (খরাজ মুখোপাধ্যায়) ভাবা হল। এই ছবিটা কেবলমাত্র বাংলা ছবিকে ভালোবেসে বানানো। চেয়েছিলাম বাংলা ছবির দর্শকেরা নতুন কিছু পাক। তাই আমাদের তরফ থেকে কোথাও কোনও ঘাটতি রাখা হয়নি।'
রূপকথার গল্প শোনানো প্রযোজকের নিজের ছোটবেলায় রূপকথার নেশা ছিল? দেব বলছেন, 'ছোটবেলায় ঠাকুমা-দিদিমাদের কাছ থেকে ঘুমানোর সময় ঠাকুরমার ঝুলি শোনার স্মৃতি বোধহয় আমাদের সবারই আছে। আর আমি গল্প শুনতে বেশি ভালোবাসি, পড়তে নয়। এখনও কোনও চিত্রনাট্য আমি পড়ার থেকে শুনতে বেশি পছন্দ করি। তাতে ছবিটা আমার কাছে বেশি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। এই গল্পটাও ঠাকুর্দার ঝুলি থেকে নেওয়া। ২ পাতার গল্প। সেটাকেই ভারি সুন্দরভাবে চিত্রনাট্যে সাজিয়েছেন পরিচালক। ছোটবেলায় আমার 'মোগলি' দেখে মনে হত, সত্যিই কী এমন জঙ্গল আছে? এখনও আমার চোখে রাজা-রানি ব্যাপারটা বিশাল বড়। ঠিক ওই স্বপ্নটাকেই পর্দায় তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। তখনকার দোকানপাট থেকে শুরু করে পাঠশালার বোর্ডে লেখার চকটা, সবকিছু খুব ভেবেচিন্তে বানানো হয়েছে। শুধু ছবিতে যুদ্ধ দেখাইনি। কারণ এটা 'পদ্মাবত' নয়। যুদ্ধ বাদ দিয়ে একটা রাজার রাজ্যে যা যা থাকে, সবকিছু আছে।'
বাস্তবে যদি বোম্বাগড়ের মত একটা রাজ্যের রাজা হতেন দেব? কী কী আইন আনতেন সেখানে? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন দেব। তারপর বললেন, 'যে কোনও রাজ্যের রাজার কর্তব্য প্রজাদের ভালো করা। প্রজাদের সঙ্গে মিলেমিশে না থাকলে সেই রাজ্য চলতে পারে না। প্রজারা তখনই রাজাকে সম্মান করবে যখন রাজা তাদের কথা ভেবে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে। হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী' শুধু আজকের গল্প নয়, রামায়ণ, মহাভারত থেকে শুরু করে মোঘল যুগ, তারপরেও আমরা এমন নজির দেখেছি। রাজা-প্রজার দ্বন্দ্ব কেবল আমাদের দেশের গল্প নয়, এটা রাশিয়ার, চিন, আমেরিকা সবার গল্প। তবে এই ছবিটা কোনও রাজনৈতিক দলকে বড় বা ছোট দেখানোর জন্য বানানো হয়নি। 'হীরক রাজার দেশে' বা 'গুপি গায়েন বাঘা বায়েন' যতটুকু রাজনৈতিক ব্যঙ্গ ছিল সেটুকুই বজায় রাখা হয়েছে। আর হ্যাঁ, খেয়াল রাখা হয়েছে যাতে কারও কোনও ক্ষতি না হয়।'