এক্সপ্লোর
Advertisement
'দক্ষতা আর পেশাদারিত্ব থাকলে কাজ পেতে অসুবিধা হয় না' এবিপি আনন্দকে বললেন অনুপম রায়
টলিউডে স্বজনপোষণ থেকে শুরু করে করোনা পরিস্থিতির ধাক্কা, সঙ্গীত জগতের গল্পে এবিপি আনন্দে অকপট অনুপম রায়।
কলকাতা: বেঙ্গালুরু ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি ছেড়ে ১০ বছর আগে টলিউডে পা রেখেছিলেন এক নতুন গায়ক, সুরকার। 'আমাকে আমার মতো থাকতে দাও'- এর সুরে প্রথম 'অটোগ্রাফ' দিয়েছিলেন প্লেব্যাকে। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। 'পিকু' থেকে 'প্রাক্তন', পুরস্কৃত হয়েছে তাঁর একের পর এক ছবির সঙ্গীত পরিচালনার কাজ। টলিউডে স্বজনপোষণ থেকে শুরু করে করোনা পরিস্থিতির ধাক্কা, সঙ্গীত জগতের গল্পে এবিপি আনন্দে অকপট অনুপম রায়।
প্রশ্ন: ১০ বছর আগে যখন গানের জগতে পা রাখেন আপনি তখন ম্যাঙ্গালোর থেকে সদ্য আসা একজন ইঞ্জিনিয়ার। আর এখন আপনি একজন সফল সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক। পিছন ঘুরে দেখলে এই যাত্রাটা কেমন লাগে?
অনুপম রায়: সত্যি কথা বলতে খুব অবাক লাগে। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল সঙ্গীতের মধ্যে থাকব, নিজের গান তৈরি করে মানুষকে শোনাব। ভেবেছিলাম অ্যালবাম রেকর্ড করব, অনুষ্ঠান করব। কিন্তু ২০১০ সালে প্রথম বাংলা ছবির কাজ করি। আমার প্রথম ২টো গান, 'আমাকে আমার মতো' আর 'বেঁচে থাকার গান' এতই জনপ্রিয় হয় যে আমি চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে আসি। তারপর গত ১০ বছর ধরে গান নিয়েই আছি। এখন মনেই হয় না এত তাড়াতাড়ি সময়টা পেরিয়ে গেল।
প্রশ্ন: যখন প্রথম চাকরি ছেড়ে এসেছিলেন, কখনও অনিশ্চয়তার ভয় কাজ করেনি?
অনুপম: সেই সময় ২টো বিষয় কাজ করেছিল। প্রথম হল আবার বাংলায় ফিরছি। দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাসে থেকে হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। সেই টানটা কাজ করেছিল। আর দ্বিতীয় হল, প্রথম গানের পর প্রচুর অনুষ্ঠানের জন্য ফোন আসত। এটা আমায় খুব আনন্দ আর তৃপ্তি দিয়েছিল যে আমার গান মানুষ শুনতে চাইছেন। মনে হয়েছিল গোটা বাংলা স্বাগত জানাচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি গান লিখেছেন, সুর দিয়েছেন। কিন্তু প্লেব্যাকের ভাবনাটা কীভাবে আসে?
অনুপম: আমার তৈরি করা গান গাইব এরকম ভাবনা ছিল। কিন্তু অন্য কারোও কথায়, সুরে গান গাইব এটা কখনও আমার লক্ষ্য ছিল না। আমার নিজের কন্ঠস্বর নিয়ে আমার সন্দেহ ছিল, সেটা অবশ্য এখনও হয়। প্রথম গান জনপ্রিয় হওয়ার পর একটু সাহস পাই। স্বপ্নের বাইরে থাকা সত্ত্বেও কিছু জিনিস হয়েছে।
প্রশ্ন: এখন অভিনয় জগতে বারবার নেপোটিজম বা স্বজনপোষণ নিয়ে কথা হচ্ছে। আপনি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন তখন কোনও পূর্বপরিচিতি ছিল না। কখনও কাজ পেতে অসুবিধা হয়েছে বা স্বজনপোষণের শিকার হয়েছেন?
অনুপম: আমি প্রায় প্রতিটা হাউজে, সব পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করেছি। কখনও সেই অনুভূতি হয়নি। আমার প্রথম দিকের কাজ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। আর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার কিছু বিষয় থাকে। প্রথম, প্রফেশনালিজম। সঠিক সময়ে কাজ করে দেওয়া ও পারিশ্রমিকের অঙ্ক একজন পরিচালক বা গায়কের বেঞ্চমার্ক তৈরি করে। তার সঙ্গে কাজের দক্ষতাও দেখা হয়। সেই জায়গায় বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে কাজ পেতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। আর আমি এখানে এসেছি গানকে ভালোবেসে। সেটাই প্রথম লক্ষ্য। মনে হয় সবাই সেটা বুঝেছেন।
প্রশ্ন: একসময় ধারনা ছিল পরিচালক, গায়কেরা পর্দার আড়ালেই থেকে কাজ করবেন। বলিউডে এই রীতি ভাঙেন এ আর রহমান। আপনি কেবল পর্দার সামনে কাজ নয়, প্রাক্তন ছবির চরিত্রে রীতিমতো অভিনয় করেছেন!
অনুপম: এটা পুরোপুরি শিবুদার (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) চক্রান্ত (হাসি)। আমার কোনও অভিনয়ের স্কিল আছে বলে আমি মনে করি না। মিউজিক ভিডিও বা অনুষ্ঠান ছাড়া আমি ক্যামেরার সামনে খুব একটা স্বচ্ছন্দ বোধ করি না। আমার লজ্জাবোধ হয়, ভয়ও করে।
প্রশ্ন: বলিউড থেকে টলিউড, বিভিন্ন গায়ক গায়িকাদের মধ্যে প্রকট বা প্রচ্ছন্নভাবে প্রতিযোগিতার বিষয়টি সামনে এসেছে। সমসাময়িকদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
অনুপম: আমি মূলত সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে কাজ করি। সমস্ত শিল্পীদের সঙ্গেই দেখা হয়, কথা হয়। আমি এর আগে একটা কোম্পানিতে কাজ করতাম। সেখানে বছর শেষে পাশের ছেলেটির সঙ্গে তুলনা করা হত কে কতটা ভালো কাজ করল। সেটা একটা অন্যরকম রেষারেষির জায়গা। এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসে আবার প্রতিযোগিতা শুরু করার কোনও অর্থ নেই। আমরা সবাই গানের জগতের হয়েই কাজ করছি। আর বাংলা গানের জগতটা খুব ছোট। এখানে আর কিসের প্রতিযোগিতা!
প্রশ্ন: সম্প্রতি প্যারাঅ্যাথলিটদের নিয়ে মুক্তি পেয়েছে আপনার একলা চলো রে। রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে ১০ বছর সময় নিলেন কেন?
অনুপম: ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনেছি, গেয়েছি। কিন্তু প্রফেশনাল জগতে এসে আমার নিজের কানেই নিজের প্রচুর ত্রুটি ধরা পড়ে। আর রবীন্দ্রসঙ্গীতের জন্য একটা বিশেষ পদ্ধতির দরকার হয়। আমার সেই সাহসটা করতে ১০ বছর লেগে গেল। আর প্যারাঅ্যাথলিটদের জীবনের ক্ষেত্রে এই গানটা ভীষণ প্রাসঙ্গিক।
প্রশ্ন: সঙ্গীত জগতে কতটা প্রভাব ফেলেছে করোনা?
অনুপম: আমরা মিউজিশিয়ানরা ৬ মাস ধরে ঘরে বন্দি। লাইভ কনসার্টও বন্ধ। আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের জগতে শিল্পীদের অর্থ রোজগার করার অনেক উপায় থাকে। বাংলায় সমস্যা হচ্ছে, এখানে কেউ খুব একটা স্ট্রিম করে গান শোনেন না। ইউটিউব থেকেও খুব কম টাকা আসে। বাংলা ইন্ডাস্টি মূলত লাইভ শো এর উপরেই টিকে আছে। এখন শিল্পীদের অবস্থা খুব খারাপ। অনেকেই অনলাইন লাইভে আসার চেষ্টা করছেন। আমাদের এখন অপেক্ষা কবে সব স্বাভাবিক হবে।
প্রশ্ন: স্ত্রীও আপনার সঙ্গে, আপনার সুরে গান গেয়েছেন। পিয়া কি আগে থেকেই গান শিখেছিলেন নাকি আপনার অনুপ্রেরণায় সঙ্গীতের জগতে আসা?
অনুপম: প্রত্যেক বাঙালিই গান গায়। পিয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছে। আরও একটু উৎসাহ নিশ্চয়ই পেয়েছে বাড়িতে সারাক্ষণ একটা লোক গান করে, গিটার বাজায় দেখে। (হাসি)
প্রশ্ন: সবাই যখন কোভিডে বিপর্যস্ত, আপনি করোনাকে নিয়ে গান বাঁধলেন 'ভালো থেকো ১৯'। এই ১৯ মাত্রার গানের বিষয়টা ঠিক কী?
অনুপম: আমরা সারাদিন সবার জন্য গান বানিয়ে দিই। অবসরে নিজের জন্য যে গান বানাই সেগুলো আর মুক্তি পায় না। গত ৬ মাসে প্রচুর গান তৈরি করেছি। তার মধ্যেই একটা গান 'ভালো থেকো ১৯'। সারাদিন টিভিতে কোভিড ১৯-এর কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত লাগত। কোভিডের থেকে ১৯ নিয়ে আমি ১৯ মাত্রার গানটা বানাই। কাজটা একেবারে পরীক্ষা করার জন্য করেছি। লকডাউনেই সমস্ত মিউজিশিয়ানের থেকে ভিডিও নিয়ে গানটা তৈরি হয়।
প্রশ্ন: কোভিড পরিস্থিতিতে আটকে রয়েছে কী কী কাজ?
অনুপম: ৫টা ছবির কাজ আটকে রয়েছে। 'বেলা শুরু', 'বনি', 'অর্ধাঙ্গিনী', 'বব বিশ্বাস' সহ আরও অনেক কাজ আটকে আছে। তবে ছবি না হলেও গানের কাজ চলছে। সেপ্টেম্বর মাসে একটা চমক আসতে চলেছে। সেটা এখনই বলব না।
বিনোদনের (Entertainment) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার
খবর
ব্যবসা-বাণিজ্যের
জেলার
Advertisement