World Blood Donor Day : করোনা থেকে সেরে উঠে কতদিন পর রক্তদান? ভ্যাকসিন নিলে দেওয়া যায় রক্ত?
করোনা আক্রান্ত হলে রক্ত দেওয়া কি সম্ভব ?দিলেও কতদিন বাদে ?ভ্যাকসিন নিলে কি রক্ত দেওয়া যেতে পারে ?দিলেও কতদিন পরে ?হাসপাতালগুলোতে রক্তদান করতে গেলে তা নিরাপদ তো ?রক্তদান শিবিরে দান করা কি নিরাপদ ?
করোনা পরিস্থিতি । দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে তছনছ স্বাভাবিক জীবন । মৃত্যু মিছিল । অক্সিজেন সংকট । হাসপাতালের বেড সংকট । এই অনেক সংকটের মধ্যে আরেকটি সংকট ভয়ঙ্কর আকার ধারণ ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় থেকে। আর এই সংকটের থেকে ভয়াবহ বোধহয় আর কিছুই হয় না। রক্তের সংকট !! আজ ওয়ার্ল্ড ব্লাড ডোনার ডে- তে (World Blood Donor Day) সেই সংকট নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় এবিপি লাইভ ।
করোনাকালে কেন রক্ত সংকট ?
মেডিক্যাল ব্যাঙ্কের (Medical Bank) সম্পাদক আশিস দত্ত (D. Ashish) আমাদের জানালেন, ২০১৯ এর শেষে থেকে ও ২০২০র শুরুর দিকে করোনা পরিস্থিতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। সেই সঙ্গে ক্রমে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে রক্তের আকাল। আমাদের দেশে সাধারণত দেখা যায়, গ্রীষ্মকাল, দুর্গাপুজো এবং ভোটের সময় রক্তের সংকট দেখা দেয়। কিন্তু করোনাকালে ভয়াবহ আকার সারা বছর ধরেই ভয়াবহ রক্তের সংকট। তার কারণ -
- করোনাকালে সারাবছর স্বাভাবিকভাবে যত রক্তদান শিবির হয়ে থাকে তার ১0% মোটে ক্যাম্প হচ্ছে । আমাদের রাজ্যে বছরে মোটামুটি ১৫ লক্ষ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। তারমধ্যে ১৩ লক্ষ ইউনিট সংগ্রহ হয় । আমাদের রাজ্যে প্রতিদিন ৪ হাজার ইউনিট রক্তের প্রয়োজন । কিন্তু দেখা যায় ২ হাজার থেকে ২২০০ ইউনিট মতো রক্তে যোগান হচ্ছে প্রতিদিন। এর কারণ,
- এই পরিস্থিতিতে রক্ত দান করতে দাতারা ইতস্তত করছেন সংক্রমণের ভয়ে। লকডাউনের জেরে জমায়েতে বিধিনিষেধ জারি হওয়ায় ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পের সংখ্যাও রীতিমতো কমে গেছে। ২০২০ সালে একটা সময় রক্তদান শিবির একপ্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । তার পরে যখন তার শুরু হল বিভিন্ন বিধিনিষেধের মধ্যেও, তাও যত সংখ্যক রক্ত সংগ্রহ হওয়া প্রয়োজন তার তুলনায় প্রায় কিছুই হচ্ছিল না।
- তারপরে এসে পড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ । আবার আঘাত । এই রক্তদান শিবিরগুলো আয়োজন করে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির শাখা সংগঠন, ক্লাব, এনজিওগুলি। প্রথমে ভোট এবং দ্বিতীয় করোনা - এই জোড়া থাবায়, রক্তদান শিবিরের সংখ্যাও রীতিমতো কমে গেছে । তাই রীতিমতো সমস্যায় পড়েছেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তরা। এছাড়াও বিভিন্ন অসুখে নিয়মিত রক্ত নিতে হয় । সেই রোগীদর তো রীতিমতো প্রাণসংশয় । ব্লাড ব্যাংক আছে কিন্তু প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত নেই !! অধীর অপেক্ষায় সারে সারে রোগী বসে, কখন দাতা জোগাড় হবে।
- রক্তদাতার সংখ্যাও কম । নিকটাত্মীয়রা একবার রক্ত দিয়ে ফেললে তিন মাসের জন্য আর রক্ত দিতে পারবেন না । ক্রমেই প্রগাড় হচ্ছে সমস্যা ।
এই পরিস্থিতিতে আরও কয়েকটি প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে । - করোনা আক্রান্ত হলে রক্ত দেওয়া কি সম্ভব ?
- দিলেও কতদিন বাদে ?
- ভ্যাকসিন নিলে কি রক্ত দেওয়া যেতে পারে ?
- দিলেও কতদিন পরে ?
- হাসপাতালগুলোতে রক্তদান করতে গেলে তা নিরাপদ তো ?
- রক্তদান শিবিরে দান করা কি নিরাপদ ?
এই প্রশ্নগুলোর জবাব দিলেন বিশিষ্ট হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তী । তিনি জানান, - করোনা থেকে সেরে ওঠার দু সপ্তাহ পরে অর্থাৎ ১৪ দিন পরে রক্তদান করা যেতেই পারে। সে ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই । কিন্তু যদি দেখা যায় করোনা থেকে সেরে ওঠার পরেও শরীরে নানা রকম অসুস্থতা রয়ে গেছে এবং রোগী কোনও ডাক্তারের চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাহলে তাঁর পরামর্শ ছাড়া রক্ত যেন না দান করা হয়।
- করোনার পরে অনেক সময় ব্লাড প্যারামিটারগুলো ওঠানামা করে অনেক সময় রক্তদান শিবিরে রক্তের বিভিন্ন প্যারামিটার চেক না করেই রক্ত নেওয়া হয় । সে ক্ষেত্রে পরে সেই রক্ত নষ্ট হতে পারে । তাই রক্তদান করার আগেই জেনে নেওয়া ভালো, শরীর রক্তদানের উপযোগী কি না অর্থাৎ সমস্ত ব্লাড প্যারামিটার ঠিকঠাক আছে কিনা ।
- ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রেও মাথায় রাখতে হবে, প্রথম ডোজ বা দ্বিতীয়, ভ্যাক্সিনেশন এর ১৪ দিন পর্যন্ত রক্ত দেওয়া যাবে না । ১৪ দিন পরে রক্ত দানের ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ নেই।
- আরও একটি প্রশ্ন উঠে আসে রক্তদানের সময়। মহিলারা মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল চলাকালীন অর্থাৎ ঋতুকালীন পরিস্থিতিতে রক্তদান করতে পারবেন কিনা। চিকিৎসক প্রান্তর চক্রবর্তী বলছেন এমনিতে সাধারণ ব্লিডিং হলে মেনস্ট্রুয়েশনের সময় রক্তদান থেকে বিরত থাকা যেতেই পারে । বিশেষত যাদের হেভি ব্লিডিং হয়, তারা রক্তদান সেই সময় না করাই ভাল।
- ভারতীয় মহিলাদের অনেকেই রক্তাল্পতায় ভোগেন। রক্তে আয়রনের ঘাটতি ভারতীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে খুবই কম । তাই তা পরীক্ষা করে, তবে রক্ত দেওয়া উচিত । রক্তদানের ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে কাজটি যতই মহত্ হোক না কেন, দাতার নিরাপত্তা এবং শারীরিক অবস্থার দুটি বিষয়ই দেখে নেওয়া জরুরী ।
- যে সব মায়েরা বাচ্চাদের স্তনপান করান তাদের রক্তদান এড়িয়ে চলাই ভালো । গর্ভাবস্থায় রক্ত দান করা যাবে না। সন্তানের জন্ম দেওয়ার ১ বছরের মধ্যে রক্তদান নয়। গর্ভপাতের পরও ৬মাস রক্তদান না করাই শ্রেয়।
- আরেকটি কথা মাথায় রাখতে হবে, এখনও পর্যন্ত রক্তদানের মারফত করোনা সংক্রমণের কোন ঘটনার কথা জানা যায়নি।
ডা. চক্রবর্তীর মতে এই সময় বড় রক্তদান শিবির আয়োজন করার ক্ষেত্রে যেমন সরকারি বাধা আছে । বিষয়টি তেমনই তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ । তাই National Blood Transfusion Council (NBTC) - এর গাইডলাইন মেনে কম সংক্রমণ ঘটেছে বা সংক্রমণ মুক্ত জায়গায় ছোট ছোট শিবির আয়োজন করা আবশ্যক।
বিভিন্ন পাড়ায় ছোট ছোট ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পের আয়োজন করা হচ্ছে যেমন, তেমনভাবেই যদি বিভিন্ন সংস্থা বা কোন ক্লাব রক্তদান শিবির ছোট আকারে আয়োজন করে, তাহলেও রক্তের চাহিদা অনেকটা মেটে।
রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আশিস দত্ত, জানালেন ১৪ জুন World Blood Donor Day তে সকলের কাছে আবেদন, ১৮ র ঊর্ধ্বে নতুন রক্তদাতা তৈরি করার প্রয়োজনীয় । নইলে অনেক রোগীর প্রাণ সংশয় হতে পারে। রক্তদানের আগে দাতার রক্ত ভালো করে পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন। তার শরীরের অন্যান্য কোন রোগ থাকলে তিনি রক্তদান করতে পারবেন কিনা তা চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া প্রয়োজন । মনে রাখতে হবে, একজন মানুষ তিন মাস অন্তর বছরে চারবার রক্ত দিতে পারেন । আর একজনের দান করা রক্ত থেকে চারজন রক্ত পায়। অর্থাৎ একজন এক ইউনিট রক্তদান করলে তার থেকে পাওয়া যায়, প্লেটলেট , প্লাজমা, আর বি সি ও ক্রায়ো (cryo, plasma, RBC, Platelets)। শরীরে ব্লাড প্রেশারের সমস্যা, মধুমেহ, থাইরয়েড বা রক্তাল্পতা থাকলে রক্ত দেওয়া উচিত নয় । সরকারের কাছে সবশেষে একটি আবেদন রেখেছেন তিনি, ২৪ ঘন্টা যেমন ব্লাড ব্যাংক খোলা থাকে তেমনই সারা দিন-রাত রক্ত নেওয়ার ব্যবস্থা রাখলে মানুষ উপকৃত হবেন ।
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )