Durga Puja 2021 Exclusive: 'পূর্ববঙ্গ থেকে নিয়ে আসা কাঠামোতেই এখনও গড়া হয় দুর্গামূর্তি', ছেলেবেলার পুজোর স্মৃতিতে ড. বিপ্লব লোহ চৌধুরী
Durga Puja 2021 Exclusive: "১৯৪৭ সালে সে দেশ ছেড়ে চলে আসতে হয় সকলকে। যদিও ঠাকুমা তখন আমাদের বাড়ির দুর্গা ঠাকুরের কাঠামোটিকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন।"
কলকাতা: করোনার চোখরাঙানি থাকলেও শরতের নীল আকাশ, পেঁজা তুলোর মেঘে দুর্গার আগমন বার্তা স্পষ্ট। অতিমারী ভাইরাসে উদযাপনে বদল এসেছে ঠিকই। কিন্তু বাঙালির মনে আমেজ কিন্তু ভরপুর। ঘরবন্দি মন ভেসে যায় শৈশবের পুজোর স্মৃতিতে। সেই স্মৃতিতে ডুব দিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. বিপ্লব লোহ চৌধুরী। ছোটবেলা ভাগলপুরে কাটলেও তাঁর পুজো কাটত নদিয়ার একটি গ্রামে। পারিবারিক পুজোর একাল-সেকাল উঠে এল এবিপি লাইভের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায়।
বাড়ির পুজোর প্রসঙ্গ উঠতেই ড. বিপ্লব লোহ চৌধুরী মজলেন শৈশবের ফেলে আসা সেই পুজোর দিনগুলিতে। তাঁর কথায়, "ছেলেবেলায় আমরা থাকতাম ভাগলপুরে। আমার জন্মের পরই আমার বাবা ভাগলপুরে চলে যান। সেই ছোট থেকেই প্রত্যেক বছর আমরা আমাদের গ্রামের বাড়িতে পুজোয় আসতাম। নদিয়া জেলার গুপিনগর বলে একটি গ্রাম আছে। চাকদা থেকে যেতে হত। আমার ঠাকুমা পুজো করতেন সেই বাড়িতে। এই পুজো আসলে আমাদের পূর্ববঙ্গের বাড়ির পুজো। ১৯৪৭ সালে সে দেশ ছেড়ে চলে আসতে হয় সকলকে। যদিও ঠাকুমা তখন একটি কাজ করেছিলেন। আমাদের বাড়ির দুর্গা ঠাকুরের কাঠামোটিকে তিনি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন।"
অধ্যাপক বলেন, "তবে প্রথম কয়েক বছর বাহুল্য ছাড়াই ঘট বসিয়ে অতি সাধারণভাবে পুজো হয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে তা সাড়ম্বরে পালন শুরু হল। খুব মজা হত সেই পুজোতে। আমার মনে আছে আপার ইন্ডিয়া ট্রেনে করে আসতাম। প্রথমে নামতাম ব্যান্ডেলে। সেখান থেকে নদিয়া হয়ে চাকদা কিংবা রানাঘাট। হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র বাস ছিল। সেখান থেকে বিষ্ণুপুরে যেতাম। সেখান থেকে আবার দেড়-দু কিলোমিটারের পথ ছিল।"
আরও পড়ুন, জৌলুস নেই, তবু গ্রামবাসীর আগ্রহ এখনও বাঁকুড়ার সিট জমিদার বাড়ির ৩০০ বছরের পুরনো পুজো ঘিরেই
ছোটবেলার দুর্গাপুজোর মজার কিছু স্মৃতি তুলে ধরে বিপ্লববাবু বলেন, "সেই পুজোতে ওই গ্রামের সকলেই আসতেন। আমাদের আত্মীয়দের একটি বড় অংশ ওই গ্রামে থাকতেন সেই সময়। পুজো উপলক্ষে সকলেই হাজির হতেন। আর আমাদের ছোটদের সংখ্যাও তো প্রচুর ছিল। তাই মজার কমতি ছিল না। অষ্টমীর দিন আমাদের ছোটকাকা এবং চয়নকাকুদের সেই ধুনুচি নাচ আজও স্মৃতিতে রয়ে গিয়েছে। বাচ্চাদের নিয়ে নানা রকমের মজাদার খেলা চলত। প্রতিযোগীতাও হত। আবৃত্তি থেকে নাচ-গান পুজোর এক এক দিন এক এক আয়োজন। যিনি দুর্গাপুজো করতেন, সেই অঘু ঠাকুর তিনিও কিন্তু ওপার বাংলার। ঠাকুমার সঙ্গে ময়মনসিংহ থেকে তিনি ও তাঁর পরিবার চলে এসেছিলেন। ছোটবেলার সেই পুজোয় যে দারুণ কিছু খাবারের আয়োজন হত তা নয়। কিন্তু সকলের জন্য একই প্রসাদ বরাদ্দ থাকত। আমাদের শোনা কথা যে, পূর্ববঙ্গের পুজোয় বাহুল্য অনেক অনেক বেশি ছিল। এখানে সেই আড়ম্বরকে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন ঠাকুমা।
আসলে পুজো মানেই আনন্দের, পুজো মানেই একরাশ ভাললাগা। যদিও অধ্যাপকের স্মৃতিতে রয়েছে কিছু বিষাদ মূহুর্তও। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "কেবল আনন্দের নয়, আমার ছেলেবেলার পুজোর স্মৃতিতে বিষাদের দাগও রয়েছে। সময়টা ১৯৭৮ সাল। আমার বড় জেঠু এসেছিলেন গুজরাট থেকে। সেই সময় আমাদের ওখানের জমি দখল করেছিল বেশ কিছু লোক। পুজোতে এসে তাঁদের সঙ্গে জেঠুর মতান্তর, কথাকাটাকাটি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে সেই মুহুর্তে ওই গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন। পরবর্তীতে তিনি এ গ্রামে আর পুজোয় আসবেন না বলেও জানিয়ে দেন। সেই খারাপ লাগা ভুলে যাওয়ার ছিল না। পরে অনেকবার ডাকাতিও হয়েছে এই বাড়িতে। যদিও ঠাকুমা সেই বাড়ি ছেড়ে আসেননি, পুজোও বন্ধ হতে দেননি। কিন্তু ২০০০ সালে ঠাকুমা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই সময় থেকে অনিয়মিত হয়ে যায় পুজো। ঘট পুজো হলেও কাঠামো পুজো আর হত না।"
যদিও ফের ফেলে আসা মুহুর্তকে আরও একবার ফিরে পায় লোহ চৌধুরী পরিবার। শেষের শুরুর সেই আনন্দ ধরা পড়েছিল অধ্যাপকের সঙ্গে আলাপচারিতাতেও। তিনি বলেন, "এরপর ২০১১ সালে ফের সেই আগের মতো পুজো চালু হল। বড়দা অতীন লোহচৌধুরীর উদ্যোগে গেস্টহাউস তৈরি, মণ্ডপকে আবার নতুন করে সাজিয়ে তুলে পুরনো আমেজেই নতুনভাবে শুরু হল পুজো। এই পুজো এখনও আমাদের সবার। তবে করোনা আবহে গত বছর কিছুটা ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছিল পুজো। আগে গ্রামের সকলে মিলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, পরিবেশনের কাজ হলেও, অতিমারী আবহে সে আনন্দে রাশ টানতে হয়েছে। এ বছর যেমন পরিকল্পনা রয়েছে মালসা করেই ভোগ বিতরণ করার। ইতিমধ্যে পরিবারের অনেককেই হারিয়েছি। শোককে কাটিয়ে এগিয়ে চলার লক্ষ্য ও শক্তিকে আবাহন করি দেবীকে।"