Israel-Hamas Ceasefire Deal: লিখিত গ্যারান্টি নিয়ে গড়িমসি এখনও, ১ বছর ৩ মাস পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইজরায়েল-হামাস, মধ্যস্থতা ৩ দেশের
Israel-Palestine Conflict: ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে অস্তিত্বের লড়াই যদিও নতুন কিছু নয়।

নয়াদিল্লি: এখনও হামলা, মৃত্যুর খবর উঠে আসছে। তবে একবছর তিন মাস পর অবশেষে শান্তিচুক্তিতে পৌঁছল ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের হামাস সংগঠন। যুদ্ধবিরতিতে একমত হল দুই শিবির। পাশাপাশি, বন্দিদের মুক্তিতে রাজি হয়েছে দুই পক্ষই। বেশ কয়েক মাস ধরেই এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছিল। শেষ পর্যন্ত মিশর এবং কাতারের মধ্যস্থতায় ইজরায়েল এবং হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হল বলে জানা গিয়েছে। দু'পক্ষকে একছাতার তলায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমেরিকাও। আগামী ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই নিরিখে আমেরিকার জন্যও এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ, যারা বরাবর ইজরায়েলকেই সমর্থন জুগিয়ে এসেছে। (Israel-Hamas Ceasefire Deal)
ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে অস্তিত্বের লড়াই যদিও নতুন কিছু নয়। দশকের পর দশক সেই নিয়ে হানাহানি, রক্তপাত ঘটে আসছে। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হয় তাদের মধ্যে। ইজরায়েলি আগ্রাসনের জবাবে রকেট ছোড়ে হামাস। আর তাতেই নতুন করে যুদ্ধ বেঁধে যায় দুই দেশের মধ্যে। সেই থেকে এখনও যুদ্ধ চলছে দুই পক্ষের মধ্যে। এমনকি যুদ্ধবিরতিতে দুই পক্ষ সম্মত হলেও, এখনও ইজরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর উঠে আসছে। তবে আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে বলে খবর। (Israel-Palestine Conflict)
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মহম্মদ বিন আব্দুলরহমান বিন জসিম আল ঠানি জানিয়েছেন, রবিবারের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে। এখনও ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী-
- আপাতত সাময়িক যুদ্ধবিরতির দিকে এগোবে দু'পক্ষই।
- গাজায় আর ধ্বংসলীলা চালানো যাবে না।
- গাজায় বন্দি থাকা ইজরায়েলি নাগরিকরা মুক্তি পাবেন, ইজরায়েলও প্যালেস্তিনীয় বন্দিদের ছেড়ে দেবে।
- ঘরছাড়া প্যালেস্তিনীয় নাগরিকরা ফিরে আসবেন।
- প্রথম পর্যায়ে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হবে। সীমিত সংখ্যক বন্দি বিনিময় হবে দু'পক্ষের মধ্যে। গাজা থেকে আংশিক ভাবে সেনা তুলে নেবে ইজরায়েল। সেখানে ত্রাণ পৌঁছতে দেবে তারা।
এখনও পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান সামনে এসেছে, তাতে শিশু, মহিলা, সাধারণ নাগরিক মিলিয়ে ৩৩ জন ইজরায়েলি নাগরিক হামাসের হাতে বন্দি রয়েছেন। তাঁদের ছেড়ে দেবে হামাস। এর পর ইজরায়েলও প্যালেস্তিনীয় বন্দিদের ছেড়ে দেবে। যাঁরা যাবজ্জীবনের সাজা কাটাচ্ছেন, তাঁদেরও ছেড়ে দেওয়া হবে। পরিসংখ্যান বলছে, ইজরায়েলের হাতে প্রায় মহিলা, শিশু, প্রবীণ মিলিয়ে ১০০০ প্যালেস্তিনীয় বন্দি রয়েছেন।
এর পর, গাজা থেকে সেনা সরাতে শুরু করবে ইজরায়েল। সীমান্ত সংলগ্ন বসতি এলাকায় ৭০০ মিটার ভিতর পর্যন্ত তাদের সেনা মোতায়েন থাকতে পারবে না। তবে সামরিক এলাকাকে এর বাইরে রাখা হয়েছে। ধাপে ধাপে সেখানে কাজ এগোবে।
চুক্তি অনুযায়ী, গাজার উত্তরে প্যালেস্তিনীয় নাগরিকদের ঘরে ফিরতে দেবে ইজরায়েলি সেনা। প্রতিদিন ৬০০টি ট্রাক ঢুকতে পারবে সেখানে। যদিও ইজরায়েলি হামলায় প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই গাজায়। তাই ফিরে এলেও, প্যালেস্তিনীরা মাথার উপর ছাদ পাবেন না বলেই মত মানবাধিকার সংগঠনগুলির।
আহত প্যালেস্তিনীয় নাগরিকদের চিকিৎসার জন্য গাজার বাইরেও যেতে দেবে ইজরায়েলি সেনা। মিশর সীমান্তে যে রাফা ক্রসিং রয়েছে, খুলে দেওয়া হবে সেটি। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলে সাত দিনের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হবে। গাজা এবং মিশরের মধ্যেকার ফিলাডেলফি করিডর থেকেও সরে যেতে হবে ইজরায়েলি বাহিনীকে। ৫০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ ভাবে ফাঁকা করে দিতে হবে করিডর।
প্রথম পর্যায়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলে, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। গোড়ায় যদিও লিখিত কোনও গ্যারান্টি দিতে রাজি ছিল না ইজরায়েল। যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের কাজ সম্পূর্ণ হলে আর হামলা চালানো হবে না বলে রিখিত দিতে রাজি ছিল না তারা। এখনও লিখিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। কিন্তু মিশর, কাতার এবং আমেরিকা হামাসকে মৌখিক আশ্বাস দিয়েছে যে, লিখিত চুক্তি স্বাক্ষর করতে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকারের উপর চাপসৃষ্টি করবে তারা।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে হামাস সমস্ত ইজরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেবে, যাঁদের অধিকাংশই ইজরায়েলি সৈনিক। এর পর আরও প্যালেস্তিনীয়দের মুক্তি দেবে ইজরায়েল। গাজা থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সেনা সরিয়ে নিতে হবে ইজরায়েলকে এই দ্বিতীয় পর্যায়েই। ইজরায়েলি মন্ত্রিসভায় ভোটাভুটিও হবে এ নিয়ে। তবে নেতানিয়াহু অনুগামী দক্ষিণপন্থীরা এতে রাজি হবেন কি না, সেই নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তৃতীয় পর্যায়ে ঠিক কী করা হবে, তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে জানা যাচ্ছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে যা যা কাজ করার কথা, সেগুলি সম্পন্ন হয়েছে কি না, দেখা হবে এই পর্যায়ে। মৃতদেহ তুলে দেওয়া হবে পরস্পরের হাতে। এর পর আন্তর্জাতিক মহলের তদারকিতে গাজাকে পুনরুজ্জীবিত করতে ত্রিবার্ষিকী অথবা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলে গাজায় কার শাসন কায়েম থাকবে, তা নিয়ে এখনও কোনও চুক্তি হয়নি। তবে আমেরিকা প্যালেস্তিনীয় সরকারে সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেছে। আমেরিকা বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, প্যালেস্তাইনকে ফের গড়ে তুলতে, সেখানে সুশাসন কায়েম করতে আন্তর্জাতিক তদারকি কাম্য। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে তার জন্য। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে আরব দুনিয়ার সাহায্য পাবে প্যালেস্তাইন। সৌদি আরব আগেই জানিয়েছে, প্যালেস্তাইন পূর্ণ রাষ্ট্রের মর্যাদা পেলে তবেই সেই কাজে হাত দেবে তারা, যা নিয়ে ইজরায়েলের আপত্তি রয়েছে। অথচ নয়ের দশকে ওসলো চুক্তি সেই মর্মেই স্বাক্ষরিত হয়েছিল। গাজা নিয়ে বিকল্প কোনও সুপারিশ এখনও করেনি ইজরায়েল।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
