এবার কলকাতার রাস্তাতেও তৈরি হবে সাইকেল ট্র্যাক, সমীক্ষা সংস্থার সঙ্গে আজ বৈঠকে কেএমডিএ
গতির এই যুগে, বড় অবহেলায় ঘরের এক কোণে পড়ে থাকা সাইকেলটাই এখন ভরসা বহু মানুষের
কলকাতা: নিউটাউনে তৈরি হয়েছে আগেই। এবার কলকাতার রাস্তাতেও তৈরি হবে সাইকেল ট্র্যাক। করোনা-কালে লকডাউনের আবহে বিকল্প বাহন হিসাবে বাড়ছে সাইকেলের জনপ্রিয়তা।
কলকাতার বহু রাস্তায় সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ হলেও ইএম বাইপাস থেকে দক্ষিণ কলকাতার ব্যস্ত রাস্তা --- গতির এই যুগে, বড় অবহেলায় ঘরের এক কোণে পড়ে থাকা সাইকেলটাই এখন ভরসা বহু মানুষের।
২০১৪ সালে গ্রিন ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দিয়েছিল, এয়ার কোয়ালিটি ভাল করার জন্য কলকাতা ও হাওড়ায় সাইকেল ট্র্যাক তৈরি করা হোক। কেএমডিএ সূত্রে খবর, সাইকেল ট্র্যাক তৈরির জন্য দিল্লির একটি সংস্থাকে সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ছ’মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে ওই সংস্থা।
তারপর রাজ্য সরকারের কাছে তা পাঠানো হবে। পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সাইকেল ট্র্যাক তৈরির। কোন রাস্তায় সম্ভব, সেটা সার্ভের ব্যাপার। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালও চায় সাইকেল ট্র্যাক হোক। টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট আসার পর সরকারকে জমা দেওয়া হবে।
ইতিমধ্যেই দিল্লির ওই সংস্থার কর্মীরা কলকাতায় এসেছেন, আজ কেএমডিএর সঙ্গে বৈঠক হবে। পরিবহন দপ্তর সূত্রে খবর, শহরের যানজট কমাতে ২০০৮ সালে কলকাতার ৩৮টি রাস্তায় সাইকেল নিষিদ্ধ হয়। এরপর ২০১৪ সালে আরও ২৪ রাস্তায় সাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।
সবমিলিয়ে মোট ৬২টি রাস্তায় এখন সাইকেলের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিছু রাস্তায় সাইকেল চললেও বর্তমানে কলকাতা শহরে কোনও সাইকেল ট্র্যাক নেই।
করোনা আবহে সম্প্রতি অফিস যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে সাইকেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে এনিয়ে ট্যুইট করেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। লেখেন, কলকাতার বেশ কয়েকটি রাস্তায় সাইকেল চালানোর জন্য নোটিফিকেশন জারি করা হয়েছে। তবে মূল সংযোগকারী রাস্তা, উড়ালপুল এবং আরও কয়েকটি রাস্তায় যে বিধিনিষেধ রয়েছে, তা বলবৎ থাকবে। এই সিদ্ধান্ত বদলও হতে পারে। ৩০ জুলাই পর্যন্ত এই নির্দেশিকা জারি থাকবে।
রাজ্যের মধ্যে একমাত্র নিউটাউন শহরে ডেডিকেটেড বাইসাইকেল লেন রয়েছে। যার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৯ কিলোমিটার। সাইকেলের ব্যবহার বাড়াতে নিউটাউনে জিপিএস নির্ভর বাইসাইকেল স্ট্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে এনকেডিএ কর্তৃপক্ষ।
বহু সেলিব্রিটির কাছেই সাইকেল অত্যন্ত প্রিয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন বাঙালি ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাস। পরে তিনি ১৯৩১-এর জুলাইয়ে সিঙ্গাপুর থেকে বাইসাইকেলে বিশ্বভ্রমণে বেরোন। সাইকেলেই চারটি মহাদেশ ঘুরেছিলেন তিনি।
সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াতেন দুই নোবেলজয়ী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ও অমর্ত্য সেন। আরেক নোবেলজয়ী ভারতীয় ভেঙ্কি রামকৃষ্ণনকেও সাইকেল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে দেখা যেত। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুড, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাইকেল তালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর একাধিক ছবি বারবার ভাইরাল হয়েছে।
বিশ্বের বহু বড় শহরে সাইকেল চালানোর জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র সাইকেল লেন। ডেনিশদের সাইকেলের প্রতি ভালবাসার স্বীকৃতি স্বরূপ ডেনমার্ক ইতিমধ্যে বিশ্বের সেরা বাইকসিটির খেতাব অর্জন করেছে। কোপেনহেগেন শহরে এখন গ্রিন রোড নিশ্চিত করা হয়েছে শুধু সাইকেল চালকদের নিরাপদে চলার জন্য এবং গ্রিন ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে উৎসাহ দেয়ার জন্য।
২০১১ সালের শেষদিকে কোপেনহেগেনের কেন্দ্র থেকে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘সাইকেল সুপার হাইওয়ে’ নির্মাণ করা হয়েছে। ডেনমার্কে ১০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি সাইকেল ট্র্যাক রয়েছে। প্রায় অর্ধেক কোপেনহাগেবাসী সাইকেল চালান। কলকাতাতেও কি কোনওদিন এরকম হবে? সময়ই বলবে।