দক্ষিণেশ্বরে রটন্তী কালীপুজোর মাহাত্ম্য অনেক, জানুন অজানা গল্প
কথিত আছে, শ্রীরামকৃষ্ণদেব একবার বলেছিলেন, ‘‘রটন্তী কালীপুজোর ভোরে দেখলাম দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় স্বর্গ দেবতারা নেমে এসেছেন স্নান করতে।
সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা: দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে সারাবছরে তিনটে কালীপুজো খুব বড় করে পালন করা হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালী পুজো। কার্তিক মাসে দীপান্বিতা কালীপুজো। আর তৃতীয়টি মাঘ মাসে রটন্তী কালীপুজো। সারা বছরের প্রতিটি অমাবস্যায় বিভিন্ন কালীপুজো হলেও একমাত্র এই রটন্তী কালী পুজো হয় চতুর্দশী তিথিতে। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে রটন্তী কালীপুজো খুব ধুমধাম করে পালন করা হয়। মন্দিরে যেমন পুজো হয় তেমনি দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গার ঘাটে বহু পুণ্যার্থী এইদিন স্নান করতে আসেন।
কথিত আছে, শ্রীরামকৃষ্ণদেব একবার বলেছিলেন, ‘‘রটন্তী কালীপুজোর ভোরে দেখলাম দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় স্বর্গ দেবতারা নেমে এসেছেন স্নান করতে।’’ সেই কারণে আজও বহু মানুষ দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গার তীরে রটন্তীর ভোরে পুণ্যস্নান করতে আসেন। সমস্ত কালীপুজো অমাবস্যা তিথিতে হলেও রটন্তী কালীপুজো চতুর্দশী তিথিতে হওয়ার পিছনে একটা পৌরাণিক গল্প রয়েছে। ‘রটন্তী’ শব্দের মধ্যে রয়েছে ‘রটে’ যাওয়া কথাটি। রটে যাওয়া অর্থাৎ মুখে মুখে প্রচারিত হওয়া। কিন্তু কি রটেছিল সেটা জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে রাধা কৃষ্ণের প্রেমের কাহিনীতে।
কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি যখন বেজে ওঠে শ্রীরাধা আর সংসারে মন দিতে পারেন না। সংসার-লোকলাজ সবকিছু ত্যাগ করে তিনি ছুটে যান শ্রীকৃষ্ণের কাছে। শ্রীরাধার শাশুড়ি এবং ননদ জটিলা এবং কুটিলা তাঁরা এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন বহুবার কিন্তু কখনই শ্রীরাধার স্বামী আয়ান ঘোষ কে তা বিশ্বাস করাতে পারেননি। মাঘ মাসের ঠান্ডা তার ওপর কৃষ্ণাচতুর্দশী হওয়ায় রাতটি ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। এমন সময়ে কৃষ্ণের বাঁশি বেজে ওঠে আর সেই বাঁশির আওয়াজ শুনে শ্রীরাধিকা বাড়ি ছাড়েন। হাতেনাতে ধরার জন্য তাঁর পিছু নেন জটিলা- কুটিলা। তাঁরা কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে শ্রীরাধার মিলিত হওয়ার দৃশ্য চাক্ষুষ করে দ্রুত বাড়ি ফিরে আয়ানঘোষ কে টানতে টানতে নিয়ে যান কুঞ্জবনে। উদ্দেশ্য আয়ানকে বিশ্বাস করাতেই হবে শ্রীরাধিকার এই গোপন প্রেমের কাহিনী। আয়ান ঘোষ ছিলেন শক্তির উপাসক, কালীর পূজারী। এদিকে শ্রীরাধিকা ভয় পেয়েছেন কী করবেন তিনি। এবার শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে আশ্বস্ত করলেন। আয়ান ঘোষ কুঞ্জবনে পৌঁছে দেখলেন তাঁর আরাধ্যা মা কালী গাছের তলায় বসে রয়েছেন আর নিজের কোলে তাঁর পা টি রেখে সেবা করছেন শ্রীরাধিকা। দেখে আপ্লুত হলেন আয়ান। তাঁর সাক্ষাৎ কালী দর্শন হল।
তিনি স্বচক্ষে দেখলেন যে কালীর সাধনা তিনি এতদিন ধরে করে এসেছেন, কী অনায়াসে শ্রীরাধিকা তাঁর পদসেবা করছেন। আর এই বার্তায় আয়ান ঘোষ এবার ছড়িয়ে দিলেন দিকে দিকে। এই কথাটাই রটে গেল যে তিনি কালীর দর্শন পেয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণও এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন কৃষ্ণ এবং কালী অভেদ। মাঘ মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে কালীর দর্শন পাওয়ায় ওইদিন বিশেষভাবে কালীপুজোর প্রচলন হল। আর তার নাম হল রটন্তী কালীপুজো। শাক্তদের এই বিশেষ দিন শ্রীকৃষ্ণের জীবনের সঙ্গে জুড়ে যাওয়ায় বৈষ্ণবদের কাছেও এটি একটি বিশেষ দিন। আবার এই চতুর্দশী তিথিটি জুড়ে রয়েছে মহাদেবের সঙ্গে। তাই শৈবদের কাছেও এটি একটি বিশেষ দিন। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরেও একইসঙ্গে পুজো হবে মা ভবতারিণী, রাধাকৃষ্ণ এবং মহাদেবের।