Waqf Protest : ওয়াকফ নিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টে মোট ৭২টি আর্জির শুনানি! কী পর্যবেক্ষণ শোনাবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ?
Waqf Act Case on Supreme Court : দুপুর ২টোয় প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি KV বিশ্বনাথনের ৩ সদস্যের বেঞ্চে শুনানি হবে।

ওয়াকফ-বিক্ষোভে অশান্ত মুর্শিদাবাদ। প্রাণ গেছে ৩ জনের। আতঙ্কে ঘরছাড়ারা কেউ পালিয়ে গেছেন মালদায়, কারও ঠাঁই হয়েছে ঝাড়খণ্ডে। এই প্রেক্ষাপটে মুর্শিদাবাদে যাচ্ছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এই পরিস্থিতিতে আজই সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে ৭২টি আবেদনের শুনানি রয়েছে। দুপুর ২টোয় প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি KV বিশ্বনাথনের ৩ সদস্যের বেঞ্চে শুনানি হবে।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র থেকে ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, ISF বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি থেকে CPM-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম-সহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের তরফে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়াও অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড এবং জমিয়তে উলেমা-এ-হিন্দও আবেদন দাখিল করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই ইস্যুতে ক্যাভিয়েট দাখিল করে আর্জি জানিয়েছে যাতে সুপ্রিম কোর্ট একপক্ষের বক্তব্য শুনে রায় না দেয়। জানা যাচ্ছে, মোট যে ৭২ টি রিট দায়ের করা হয়েছে, তার মধ্যে আজ ১০টি আবেদনের শুনানির হবে । আবেদনে বলা হয়েছে, নতুন ওয়াকফ আইন সঠিক নয় এবং এতে মুসলমানদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ওয়াকফ আইন ১৯৯৫-এর ৪০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যে কোনও সম্পত্তিকে 'ওয়াকফ' হিসাবে ঘোষণার অধিকার এত দিন ছিল ওয়াকফ বোর্ডের হাতেই। তবে নতুন সংশোধনীর পর ওয়াকফ বোর্ডের হাতে সেই একচ্ছত্র অধিকার থাকছে না। কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও আধিকারিকের হাতে। এই আইন পাশ হতেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়ায় বিক্ষোভের আগুন। বিশেষত বাংলায় বিরাট অঞ্চলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়।
পাস হয়ে গেছে বিল
বিলটি প্রথমে লোকসভায় পাস হয়। পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ২৮৮ জন সাংসদ । ২৩২ জন বিরোধিতা করেছিলেন। এরপর রাজ্যসভায়ও এই বিল পাস হয়। ১২৮ জন সাংসদ এটিকে সমর্থন করেন । ৯৫ জন বিরোধিতা করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি সই করার পর বিল আইনে পরিণত হয়।
ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে যে রিট পিটিশনগুলি সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা হয়েছে, সেগুলিতে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আবেদনকারীরা। তাঁদের দাবি, এই নতুন আইনে ওয়াকফ বোর্ডের নির্বাচনী ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, এখন ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলমানকেও সদস্য করা যাবে। এতে করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এই আইনে ওয়াকফের সংজ্ঞাও পরিবর্তন করা হয়েছে। এর ফলে ‘ওয়াকফ বাই ইউজার্স’ অর্থাৎ ঐতিহ্যগতভাবে তৈরি ওয়াকফ সম্পত্তির আইনি স্বীকৃতি বিপন্ন হতে পারে। অনেকের আশঙ্কা, অনেক ওয়াকফ সম্পত্তি যা বহু বছর ধরে মৌখিকভাবে অথবা কোনো নথি ছাড়াই ওয়াকফ বোর্ডের অধীনা, সেগুলো এখন অবৈধ বলে বিবেচিত হতে পারে। তাঁদের অভিযোগ, এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অধিকারকে দুর্বল করে দেবে।
ওয়াকফ আইনে করা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বহু রাজনৈতিক দল সুপ্রিম কোর্টে রিট দায়ের করেছে। প্রধান আবেদনকারীদের মধ্যে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস (TMC), CPI, ওয়াইএসআর কংগ্রেস (YSRCP) ইত্যাদি দলের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এছাড়াও TVK, RJD, JDU, AIMIM এবং AAP-এর প্রতিনিধিরাও এই আইনের বিরোধিতা করে রিট পিটিশন করেছেন। সরকারের দাবি, এই পরিবর্তন ওয়াকফ সম্পত্তিতে স্বচ্ছতা আনবে। এতে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় উন্নতি হবে এবং দুর্নীতির সম্ভাবনা কমে যাবে। এছাড়াও সাতটি রাজ্যও সুপ্রিম কোর্টে এই আইনের সমর্থন করেছে। রাজ্যগুলোর দাবি, এই আইন সংবিধান অনুযায়ী, কারও সঙ্গে বৈষম্য করে না এবং প্রশাসনকে উন্নত করতে সাহায্য করবে।






















