Science News: বদলে যেতে পারে পৃথিবীর মানচিত্র, পরস্পরের থেকে দূরে সরছে আফ্রিকা ও এশিয়া, কী ঘটছে সুয়েজ উপসাগরের নীচে?
Gulf of Suez: লোহিত সাগরের উত্তর অংশ, আফ্রিকা এবং সিনাই উপদ্বীপের মাঝে অবস্থিত সুয়েজ উপসাগর।

নয়াদিল্লি: অনুঘটকের কাজ করেছিল ভৌগলিক কার্যকারণ। পরবর্তীতে মানুষের হাতে পূর্ণাঙ্গ আকার ধারণ। সেই সুয়েজ খাল নিয়ে ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন চলে আসছে বহু বছর ধরে। তবে সুয়েজ উপসাগরকে নিয়ে এবার নতুন তথ্য় হাতে এল, যা পৃথিবীর মানচিত্রই বদলে দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আফ্রিকা এবং এশিয়াকে পরস্পরের থেকে আলাদা করে রাখা সুয়েজ উপসাগর ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। (Gulf of Suez)
লোহিত সাগরের উত্তর অংশ, আফ্রিকা এবং সিনাই উপদ্বীপের মাঝে অবস্থিত সুয়েজ উপসাগর। ১৯৫ মাইল দীর্ঘ এই সঙ্কীর্ণ জলপথই সুয়েজ খালে গিয়ে পড়েছে, যা আবার সুয়েজ উপসাগরকে ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এর মাধ্যমেই ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্যে সামুদ্রিক যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। সুয়েজ খাল মনুষ্যনির্মিত হলেও, ভৌগলিক কার্যকারণও সমান ভাবে দায়ী। (Science News)
আফ্রিকান এবং আরবিয়ান টেকটোনিক পাত পরস্পরের দূরে সরলে মাঝে ফাটল সৃষ্টি হয়। এর ফলে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আড়েবহরে বাড়তে শুরু করে লোহিত সাগর ও সুয়েজ উপসাগর। অর্থাৎ খোঁড়াখুঁড়ি চালিয়ে মানুষ সুয়েজ খাল তৈরি করলেও, প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট ফাটল অনুঘটকের কাজ করে। আজ থেকে প্রায় ২ কোটি ৮০ বছর আগে আফ্রিকান ও আরবিয়ান টেকটোনিক পাত পরস্পরের থেকে দূরে সরতে শুরু করে। আর তাতেই উন্মুক্ত হয়ে যায় সুয়েজ উপসাগর।
সাধারণত এভাবেই সাগর-মহাসাগরের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আজ থেকে ৫০ লক্ষ বছর আগে আচমকাই ফাটল চওড়া হওয়ার প্রক্রিয়া থমকে যায়। ফলে সাগর বা মহাসাগরে পরিণত হওয়ার পরিবর্তে উপসাগর হয়েই থেকে যায় সুয়েজ উপসাগর। কিন্তু সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আগে যা ভাবা হয়েছিল তা ভুল। সুয়েজ উপসাগর চওড়া হওয়ার প্রক্রিয়া মোটেই বন্ধ হয়ে যায়নি, বরং তার গতি শ্লথ হয়ে গিয়েছে।
গত ৩ নভেম্বর Geophysical Research Letters জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এখনও পরস্পরের থেকে দূরে সরছে আফ্রিকান ও আরবিয়ান টেকটোনিক পাত। বছরে ০.০২ ইঞ্চি করে দূরত্ব বাড়ছে তাদের মধ্যে। চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সে’স ইনস্টিটিউট অফ ডিপ সি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ভূবিজ্ঞানী ডেভিড ফার্নান্ডেজ-ব্লাঙ্কো জানিয়েছেন, টেকটোনিক পাতের ফাটল নিয়ে এতদিন যে ধারণা ছিল, তা বদলে গিয়েছে। এতদিন আমাদের ধারণা ছিল, ফাটল বাড়তে বাড়তে হয় তা থেকে লোহিত সাগরের মধ্যে নতুন সমুদ্র অববাহিকার সৃষ্টি হয়, নয়ত ফাটল বাড়তে ব্যর্থ হয়, নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়ে যায়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, মাঝে তৃতীয় একটি বিষয় রয়েছে। ফাটল ধরার প্রক্রিয়া পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় না হয়ে, তার গতি শ্লথ হয়ে যায়। ”
দুই টেকটোনিক পাতের মধ্যে ফাটলবৃদ্ধি থমকে গেলে কী হয়, এতদিন তার উদাহরণ হিসেবে সুয়েজ উপসাগরকে তুলে ধরা হতো। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে, ফাটলবৃদ্ধি এখনও অব্যাহত। যে কারণে কিছু এলাকায় প্রবাল প্রাচীর গুলি সমুদ্রের জলস্তর ছাপিয়ে উঠে এসেছে, ছোটখাটো ভূমিকম্প লেগেই থাকে, মাটিতেও ফাটলবৃদ্ধির চিহ্ন বোঝা যাচ্ছে। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার অঞ্চল পরীক্ষা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তাহলে কি আফ্রিকা ও এশিয়ার মাঝে নতুন সাগরের সৃষ্টি হবে? উঠছে প্রশ্ন। তবে এখনই সেই নিয়ে কিছু বলতে নারাজ বিজ্ঞানীরা। তবে তাঁদের মতে, আগামী দিনে ওই অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রভাব বেশি অনুভূত হবে, ভৌগলিক পরিবর্তনও চোখে পড়বে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য়ে বিষয়টি নিয়ে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন বলে মত তাঁদের।






















