এক্সপ্লোর

দীপকে বসিয়ে দলীপের ফাইনালে সুযোগ, পার্থিবের দাবি উড়িয়ে কিনিয়া সফর, কীভাবে ঘুরেছিল ধোনির ভাগ্যের চাকা, জানালেন প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক

MSD Retires: ক্রিকেটীয় দক্ষতার দিক থেকে ধোনিকে প্রথম দর্শনে আহামরি লাগেনি নির্বাচক প্রণব রায়ের।

কলকাতা: শনিবার, স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তাঁর অবসর ভারতীয় ক্রিকেটে একটি যুগের অবসান ঘটিয়েছে বলে মেনে নিচ্ছেন সচিন তেন্ডুলকের মতো কিংবদন্তিরাও। রাঁচির মেকন কলোনি থেকে কর্মসূত্রে খড়্গপুর, তারপর ফের ঘরোয়া ক্রিকেটের রগড়ানি। প্রচুর প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে অবশেষে জাতীয় দলের দরজা খুলে ফেলেছিলেন ধোনি। তারপর তাঁর একের পর এক ম্যাচ জেতানো ইনিংস, বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ফিনিশার হয়ে ওঠা, নেতৃত্বের দায়িত্ব, জোড়া বিশ্বকাপ ও একটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়, টেস্ট ও ওয়ান ডে-তে সেরা দলের শিরোপা, আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ধোনিকে। কেমনভাবে জাতীয় দলে সুযোগ হয়েছিল ধোনির, তাঁর অবসর ঘোষণার পরের দিন এবিপি আনন্দকে সেই কাহিনি শোনালেন প্রাক্তন ক্রিকেটার ও এক সময়কার জাতীয় নির্বাচক প্রণব রায়। প্রণব বললেন, ‘ধোনিকে আমি প্রথম দেখি অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটের একটা ম্যাচে, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে। তখন আমি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর বোর্ডের আম্পায়ারিং করছি। বিহারের হয়ে কয়েকটা ম্যাচে ধোনির ব্যাটিং দেখি। ক্রিকেটার হিসাবে নতুন ছেলেরা কে কেমন খেলছে, সেটা চোখে পড়ে যায়। সব সময়ই মনে হতো, পরের ৪-৫ বছরে কারা ভাল জায়গায় যাবে দেখে রাখি। জামশেদপুর, আগরতলা ও কটকের সেই সমস্ত ম্যাচে ধোনিকে দেখে আমার একটু অন্যরকম লেগেছিল। লম্বা চুল। শক্তপোক্ত চেহারা। জোরে জোরে বল মারে।’ জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার পঙ্কজ রায়ের পুত্র প্রণবও ভারতের হয়ে খেলেছেন। এবিপি আনন্দকে বললেন, ‘২০০১ সালে আমি জাতীয় নির্বাচক হই। তখন দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসাবে দলীপ ট্রফির ম্যাচে ধোনিকে পূর্বাঞ্চল দলে রাখি। ততদিনে আমি আম্পায়ারিং ছেড়ে দিয়েছি।‘ যোগ করলেন, ‘একটা ম্যাচের কথা মনে পড়ছে। পঞ্জাব ও বিহারের মধ্যে ফাইনাল খেলা ছিল। আমি আর যশপাল শর্মা ছিলাম ওই ম্যাচের আম্পায়ার। ধোনি খেলেছিল। সেই ম্যাচে আমি প্রথমবার যুবরাজ সিংহকে দেখি। ওর তখন ১৮ বছর বয়স। ম্যাচটায় ধোনি ভাল খেলেছিল। তবে যুবরাজের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়। বিহার প্রথমে ব্যাট করে ৩৬০ রান মতো করেছিল। আর যুবরাজ একাই প্রায় সেই রানটা করে দিয়েছিল। ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিল ও। সেই ম্যাচে দেখেই মনে হয়েছিল যুবরাজ ভারতীয় দলের হয়ে খেলবে।‘ ক্রিকেটীয় দক্ষতার দিক থেকে ধোনিকে তখন আহামরি লাগেনি নির্বাচক প্রণবের। বলছিলেন, ‘ধোনিকে দারুণ কিছু মনে হয়নি। ওর ব্যাটিং মানে জোরে জোরে বল মারা। কিপিংটাও দুর্দান্ত নয়। তবে কিছু একটা ছিল, যা আমাকে আকৃষ্ট করে। সেটা ওর লড়াকু, নাছোড় মানসিকতা। বোহেমিয়ান হাবভাব।’ প্রণব যোগ করলেন, ‘২০০১ সালে পূর্বাঞ্চল দলে রাখলেও দলীপে ওকে খেলাতে পারিনি। কারণ দীপ দাশগুপ্ত ছিল দলের প্রথম উইকেটকিপার। তারপর আমরা ফাইনালে উঠলাম। পুণেতে সেই ম্যাচে পশ্চিমাঞ্চলের হয়ে খেলে সচিন ১৯৯ রান করে। ম্যাচের তৃতীয় দিন বাবা প্রয়াত হওয়ায় আমি কলকাতায় ফিরে আসি।’ ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় নির্বাচক হন প্রণব। বলছেন, ‘জাতীয় নির্বাচক হওয়ায় দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। বিভিন্ন জোনে কারা ভাল খেলছে, তাদের খবর রাখতে হতো। ধোনিও আমাদের নজরে ছিল। তবে তখন ভাবিনি যে, ও এত বড় ক্রিকেটার বা জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন হবে। ২০০৩ সালে দলীপ ট্রফিতে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণাঞ্চলকে হারায় পূর্বাঞ্চল। তারপর ফাইনালে উঠি। ধোনিকে দেখতাম। নেটে হোক বা ম্যাচে, একই ছন্দে ব্যাটিং করে। মারার বল পেলে মারবেই। বোলারকে দেখবে না। এই ব্যাপারটা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। কারণ, অনেকেই আছে যারা নেটে ডন ব্র্যাডম্যানের মতো ব্যাট করে। কিন্তু ম্যাচে পারে না। ধোনিকে কিন্তু সব জায়গাতেই সাবলীল দেখেছি। মারার বল পেলে ছাড়ত না। আমার মনে হয়েছিল সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে খেলতে পারে ছেলেটা। একটা নির্বাচনী বৈঠকে ওর নামটা তুলি। কিন্তু সকলে অবাক হয়ে জানতে চায় কে ছেলেটা! কোন রাজ্যের! বিহারের ক্রিকেটার শুনে কেউই খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। বিহার তখন রঞ্জিতে প্লেট গ্রুপে খেলছে। ধোনির নামই কেউ শোনেনি। খেলা দেখা তো দূরস্ত।’ হাল ছাড়েননি প্রণব। ‘আমি সহ নির্বাচকদের বলেছিলাম, ধোনির সাফল্যের ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। তোমরাও দেখো। তখন প্লেট গ্রুপের ম্যাচ নির্বাচকেরা কেউ দেখত না। কারণ সেরা প্লেয়াররা সকলে এলিট গ্রুপে খেলত। সঞ্জয় জাগদালে ও কীর্তি আজাদের একটা ম্যাচ দেখার কথা ছিল। কিন্তু আগরতলা যায়নি কেউই। কীর্তি তখন সাংসদ। কাজ পড়ে গিয়েছিল। ফেরার টিকিট না পাওয়ায় জাগদালেও যেতে পারেনি,’ বলছিলেন প্রণব। অবশেষে জাতীয় নির্বাচকদের কাছে ধোনিকে দেখার সুযোগ আসে ২০০৩ সালের দলীপ ট্রফির ফাইনালে। পূর্বাঞ্চল বনাম উত্তরাঞ্চলের ম্যাচে। প্রণব বলছেন, ‘ধোনির জন্য এত মরিয়া ছিলাম যে, উইনিং কম্বিনেশন ভেঙে ওকে খেলিয়েছিলাম। ৬০-এর কাছাকাছি রান করেছিল ধোনি। বেশ কয়েকটা ক্যাচও নিয়েছিল। বাকি নির্বাচকেরা বুঝেছিল, আমার কথা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।‘ যোগ করছেন, ‘দলীপের সেই ফাইনালে দীপ দাশগুপ্তকে বসিয়ে ধোনিকে খেলিয়েছিলাম। ফাইনালের দিন দল নির্বাচনটা আমার হাতেই ছিল। কারণ আমি পূর্বাঞ্চলের নির্বাচক। ম্যাচটা পূর্বাঞ্চল হেরে গিয়েছিল। তবে ধোনি নজর কেড়ে নেয়।’ তবে তারপরেও ধোনির রাস্তা মসৃণ ছিল  না। প্রণব বলছেন, ‘তারপর ধোনিকে ভারতীয় এ দলের হয়ে কিনিয়া পাঠানো নিয়েও লড়াই হয়। নির্বাচকরা সকলে চাইছিল পার্থিব পটেলকে পাঠাতে। পার্থিব তখন জাতীয় দলের হয়ে খেলছিল। তবে ও ভাল খেলতে পারছিল না। তাই বাকি নির্বাচকেরা ওকে ম্যাচ প্র্যাক্টিসের জন্য আর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য ভারতীয় এ দলের হয়ে পাঠাতে চায়। প্রতিবাদ করেছিলাম। প্রশ্ন করেছিলাম, পার্থিব জাতীয় দলে ভাল খেলতে না পারলে দেশের বাকি কিপাররা কেন উপেক্ষিত হবে! ধোনিই কিনিয়া যায়। সেই সফরে দারুণ সফল হয়। তারপর চ্যালেঞ্জার ট্রফির দলে ওকে নেওয়া হয়। সেখানেও ও ভাল খেলে। অবশেষে জাতীয় দলের দরজা খোলে। ধোনি প্রমাণ করেছে, ওর দক্ষতায় আস্থা রেখে আমি ভুল করিনি।’
আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Jalpaiguri News: দ্বিতীয়ায় হকার উচ্ছেদ অভিযান, 'কেন বারবার এই অত্যাচার ?', লাঠির আঘাত, আটক ব্যবসায়ী
দ্বিতীয়ায় হকার উচ্ছেদ অভিযান, 'কেন বারবার এই অত্যাচার ?', লাঠির আঘাত, আটক ব্যবসায়ী
Delhi Doctor Murder Update : ‘খুন করতে পারলে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেব’, দিল্লির ডাক্তারকে খুন করার সুপারি দিয়েছিল নার্সের স্বামী !
স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ, দিল্লির ডাক্তারকে খুন করার সুপারি দিয়েছিল নার্সের স্বামী !
New Star in Sky: রাতের আকাশে এবার নয়া নক্ষত্র, টেক্কা দেবে ধ্রুবতারাকেও
রাতের আকাশে এবার নয়া নক্ষত্র, টেক্কা দেবে ধ্রুবতারাকেও
Posthumous Reproduction: ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তরতাজা ছেলেকে, সারোগেসিতে সন্তানের শুক্রাণু ব্যবহারে মা-বাবাকে অনুমতি দিল আদালত
ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তরতাজা ছেলেকে, সারোগেসিতে সন্তানের শুক্রাণু ব্যবহারে মা-বাবাকে অনুমতি দিল আদালত
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Jaynagar News: সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের একাংশ অবরোধ করে বিজেপির বিক্ষোভ | ABP Ananda LIVEDEV: 'এধরনের নিন্দনীয়, জঘন্য ঘটনায় শ্যুট অ্যাট সাইট করে দাও','এনকাউন্টার' দাওয়াই দেবের | ABP Ananda LIVERG Kar Protest: আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে তারাতলা থেকে ঠাকুরপুকুর পর্যন্ত মানববন্ধন | ABP Ananda LIVEJaynagar News: জয়নগরে দফায় দফায় উত্তেজনা। ফাঁড়িতে আগুন। এসডিপিও-কে তাড়া

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Jalpaiguri News: দ্বিতীয়ায় হকার উচ্ছেদ অভিযান, 'কেন বারবার এই অত্যাচার ?', লাঠির আঘাত, আটক ব্যবসায়ী
দ্বিতীয়ায় হকার উচ্ছেদ অভিযান, 'কেন বারবার এই অত্যাচার ?', লাঠির আঘাত, আটক ব্যবসায়ী
Delhi Doctor Murder Update : ‘খুন করতে পারলে মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেব’, দিল্লির ডাক্তারকে খুন করার সুপারি দিয়েছিল নার্সের স্বামী !
স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ, দিল্লির ডাক্তারকে খুন করার সুপারি দিয়েছিল নার্সের স্বামী !
New Star in Sky: রাতের আকাশে এবার নয়া নক্ষত্র, টেক্কা দেবে ধ্রুবতারাকেও
রাতের আকাশে এবার নয়া নক্ষত্র, টেক্কা দেবে ধ্রুবতারাকেও
Posthumous Reproduction: ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তরতাজা ছেলেকে, সারোগেসিতে সন্তানের শুক্রাণু ব্যবহারে মা-বাবাকে অনুমতি দিল আদালত
ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তরতাজা ছেলেকে, সারোগেসিতে সন্তানের শুক্রাণু ব্যবহারে মা-বাবাকে অনুমতি দিল আদালত
Madhabi Puri Buch: ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার্থে পক্ষপাতিত্ব? আদানিদের বিরুদ্ধে তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগ, SEBI প্রধানকে তলব করল PAC
ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার্থে পক্ষপাতিত্ব? আদানিদের বিরুদ্ধে তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগ, SEBI প্রধানকে তলব করল PAC
Malda News: গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে জমি, ফের নদী ভাঙন মালদায়, আতঙ্কে স্থানীয়রা
গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে জমি, ফের নদী ভাঙন মালদায়, আতঙ্কে স্থানীয়রা
Junior Doctors Protest: ঘড়ি হাতে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, কেন ঘড়ি ? কী জানালেন তাঁরা
ঘড়ি হাতে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, কেন ঘড়ি ? কী জানালেন তাঁরা
RG Kar Case : 'দুর্গাপুজো? সে তো অনেক খরচ' ! মেয়ে বলেছিল, 'সব পারব মা', ঘরভরা শূন্যতার মাঝে ডুকরে উঠলেন মা
ঠাকুরঘরে মা দুর্গার শাড়ি, এবারও বায়না হয়ে গিয়েছিল ঢাকির, এখন শুধুই ঘরভরা শূন্যতা-হাহাকার
Embed widget